আব্দুর রাজ্জাক রানা

৫ জুন ২০২৪ এ হাইকোর্ট যখন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে সেদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেয় এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার। তারই ফলশ্রুতিতে পরবর্তী দিন ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ-এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ঢাবি ছাত্ররা। এভাবেই খুলনা বিশ্ববিদ্যাল্যের শিক্ষার্থীরাও কোটার বিরুদ্ধে সংহতি জানায়।৪ জুলাই ২০২৪ : সারা বাংলাদেশের ন্যায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কোটা বিরোধী আন্দোলনের ডাক দেয়। মূলত এর পিছনেই কাজ করে গেছেন মিনহাজুল আবেদন সম্পদ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহিব্বুল্লাহ, আয়মান আহাদ ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রেসিডেন্ট ইকরামুল হকের সাথে সমন্বয় করে কিভাবে এগুনো উচিত, কি করা উচিত, কাদের আন্দোলনের সাথে রাখা উচিত, কাদের ত্যাগ করা উচিত এসব বিষয় নির্দেশনা দিয়ে আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। খুলনাতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদী চত্বর থেকেই উঠে আসে বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের ডাক।

৫ জুলাই ২০২৪ : এই দিন শুক্রবারেও চট্টগ্রাম, খুলনা ও গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনকারী ছাত্ররা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয় সাচিবুনিয়াতে। সারা বাংলাদেশের আন্দোলনের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে খুলনার শিক্ষার্থীরাও সড়ক অবরোধ করে দাবি জানায়।

১৪ জুলাই ২০২৪ : রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনকারীরা সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন ছাত্ররা। এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ব্যঙ্গ করে “রাজাকারের নাতি-পুতি” বলে বসেন। এর প্রতিবাদে রাত নয়টার দিকে ঢাবির বিভিন্ন হলে শ্লোগান ওঠে,

“তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার!

কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার! স্বৈরাচার!”

-এই শ্লোগান এতোই জনপ্রিয় হয় যে, মুহূর্তেই দেশের সকল পাবলিক ভার্সিটিতে ছোঁয়া লাগে। সকল ভার্সিটিতেই এই শ্লোগান চলে রাতভর। তারই ধারবাহিকতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজাকার রাজাকার স্লোগানে ক্যাম্পাস কাপিয়ে তোলেল।

ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিতাড়ন করে ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা করে সাধারণ ছাত্ররা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আগে থেকে রাজনীতি মুক্ত থাকায় এখানে তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে ক্যাম্পাসের গেইট এ হল রোডে কিছু আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মিছিল দেয়। যার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করে খুবি শিক্ষার্থীরা।

১৭ জুলাই ২০২৪ : এদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে অনেক শিক্ষার্থী সন্ধ্যা নাগাদ ক্যাম্পাস ছেড়ে যান। তবে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও অনেক ছাত্র-ছাত্রী হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন। পরবর্তী দিন বাধ্য করে চাপ প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেয়। এদিন মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ ও আয়মান আহাদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের খান জাহান আলী হলের প্রভোস্ট রামেশ্বর দেবনাথের চোখে চোখ রেখে হল ত্যাগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এবং সকল শিক্ষার্থী হলত্যাগের পর মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ ও আয়মান আহাদ হলত্যাগ করেন। পরবর্তী দিন ১৮ জুলাই ২০২৪ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মীর মুগ্ধ শহিদ হলে খুলনার সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আরও আন্দোলন প্রেমী হয়ে উঠেন। যেহেতু হল বন্ধ তাই কিছু শিক্ষার্থী ব্যতিত সবাই নিজ বাড়িতে ফিরে যান। বহু বাধা সত্বেও এ দিনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে মীরমুগ্ধ ভাইয়ের জানাজার নামাজ আদায় হয়। যেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যখন কারফিউ দিয়ে আন্দোলনকে স্থবির করতে চেষ্টা করে তখনো গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। কারফিউয়ের ঠিক আগের দিন ঢাকার মিরপুর কাফরুলে জুম্মার নামাজের পর আন্দোলনরত তারই মামাতো ভাই দশম শ্রেণীর ছাত্র মাহফুজুর রহমান পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। কারফিউ চলাকালীন আন্দোলনে সচল রাখতে তিনি খুলনায় থাকতে বাধ্য হন। এজন্য তিনি তার মামাতো ভাইয়ের জানাযায় পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে পারেননি।

১৯ জুলাই ২০২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলো যখন সব বন্ধ করে দিয়েছে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সকল শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দিয়েছে, তখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা উদ্যোগ নেয় এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মীর মুগ্ধ ভাইয়ের শাহাদাতের জন্য তারই রেখে যাওয়া ক্যাম্পাসে গায়েবানা জানাজা আদায় করার। প্রশাসন এখানে বাধ সাধে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এমন কি শিক্ষকদেরও ঢুকতে দিতে চায় না। অবশেষে ছাত্রদের তোপের মুখে তারা হার মানতে বাধ্য হয়। বিদ্রোহী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মীর মুগ্ধ ভাইয়ের শাহাদাতের জন্য তারই রেখে যাওয়া ক্যাম্পাসে গায়েবানা জানাজা আদায় করা হয়।

শুরুর দিক থেকেই জাতীয় ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আন্দলনে সক্রিয় থাকলেও মূলত খুবি হল বন্ধ হওয়ার পর থেকে জাতীয় ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা আন্দোলনের মূল হাল ধরে। যা আন্দলনের গতিকে আরও বেগবান করতে থাকে। এর পরপরই সরকার কারফিউ জারি করে। আন্দোলনকে স্থবির করার চেষ্টা করলেও মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ, আল শাহরিয়ার, হেলাল, জহুরুল তানভির, আয়মান আহাদ, হামিম রাহাত, তারেক, মিরাজ, রাফসান সহ অনেকেই আন্দলনে প্রান সঞ্চার করতে খুলনার সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখেন। কারফিউ চলাকালে প্রমুখ ব্যাক্তিবৃন্দ নিজেদের মুখ ঢেকে বিভিন্ন ক্যাম্পাসের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতেন। আন্দোলন পর্যবেক্ষণের জন্য মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ ও অন্যান্য সমন্বয়করা শিববাড়িতে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির নিচে, ময়লাপোতাতে ময়লাপোতা মসজিদ ও সিটি মেডিকেল হাসপাতালের নিচে, সাত রাস্তা ও রয়েল মোড়ের ক্ষেত্রে কাচ্চি ঘর, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে অবস্থান নিতেন।

মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ ছিলেন খুলনার আন্দোলনের এক প্রভাবশালী কিন্তু নীরব সংগঠক। জনসম্মুখে না এসে তিনি মূলত পেছন থেকে পুরো আন্দোলনের রূপরেখা, কৌশল এবং পরিকল্পনা নির্ধারণ করতেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল আন্দোলনের সঠিক দিকনির্দেশনা নিশ্চিত করা, যেন সেটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং তার প্রভাব বিস্তার করতে পারে। মিনহাজের বিশ্লেষণী চিন্তা-ভাবনা এবং গভীর কৌশলগত জ্ঞান তাকে আন্দোলনের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে তুলে ধরে।

মিনহাজ তাঁর পরিকল্পনাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে গঠন করতেন এবং সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নেও সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতেন। এই কৌশলগত দিকনির্দেশনার ফলে আন্দোলন ক্রমশ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে গল্লামারি জিরো পয়েন্ট, ছাচিবুনিয়া, মোহাম্মদ নগর, রূপসা ব্রিজ, সোনাডাঙ্গা, ময়লাপোতা, এবং শিববাড়ি সহ পুরো খুলনা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। খুলনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আন্দোলনের পদচারণা দেখা যেতে থাকে এবং সাধারণ মানুষও এতে যুক্ত হতে থাকে। আন্দোলনের এই বিস্তারের পেছনে মিনহাজের অবদান এবং তার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রভাব ছিল অনস্বীকার্য।

শুধু কৌশলগত দিকনির্দেশনা দিয়েই থেমে থাকেননি মিনহাজ; তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করতেন। এর ফলে আন্দোলন আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন আন্দোলনকে এক নতুন মাত্রা দেয়, কারণ এর মাধ্যমে আন্দোলনের ব্যাপ্তি এবং গ্রহণযোগ্যতা দুটোই বৃদ্ধি পায়। মিনহাজ বিভিন্ন দলের সাথে সমন্বয় তৈরি করে তাদের কাছ থেকে আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন আদায় করতেন। এতে আন্দোলনের কার্যক্রম আরও দ্রুত ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যা আন্দোলনের সফলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

মোটকথা, মিনহাজুল আবেদীন সম্পদের নিরব অথচ দৃঢ় নেতৃত্ব খুলনার আন্দোলনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। তাঁর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, রাজনৈতিক সমন্বয়, এবং কৌশলগত দিকনির্দেশনা আন্দোলনকে এক নতুন স্তরে নিয়ে যায়। আন্দোলন জুড়ে তাঁর নিঃশব্দ এবং নিবেদিত প্রচেষ্টা সবার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে, যা আন্দোলনের সফলতার পেছনে এক অবিচ্ছেদ্য অবদান রাখে।

৩০ জুলাই ২০২৪ : আওয়ামী লীগের গঠিত পুলিশ প্রশাসন খুলনায় প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধি ডেকে নিয়ে চাপ প্রয়োগ করে তাদের থেকে আন্দোলনের বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক অবস্থান নেওয়ায়। আন্দোলনকে স্থগিত করার নোটিশ দেয়। খুলনার সকল ছাত্র সমাজ ও আপামর জনতা যখন স্বাধীনতার জন্য ছাত্র সমাজের দিকে তাকিয়ে আছে তখন আন্দোলন স্থগিত করার নোটিশ খুলনা বাসিকে হতাশ করে। কিন্তু এ সময় আশার বাণী দিয়ে ৩১ জুলাই ২০২৪ আন্দোলনকে আবার ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন। যার পিছনে মূল পরিকল্পনাকারী মিনহাজুল আবেদিন সম্পদ। এছাড়াও আহমেদ হামিম রাহাত, আল শাহরিয়ার, হেলাল উদ্দিন ও তারেক রহমানের অবদান অনস্বীকার্য।

৩১ জুলাই ২০২৪ : সারা বাংলাদেশের ন্যায় খুলনাতেও এই দিনে পুলিশ, বিজিবি শক্ত পাহারায়। হামিম রাহাত, আল শাহরিয়ার, হেলাল, তারেক, মিরাজ প্রমুখ ব্যাক্তিবৃন্দের নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। ছোট ছোট মিছিলগুলো জমায়েত হতে শুরু করে ময়লাপোতা হয়ে সাতরাস্তা মোড় ও রয়েল মোড়ের দিকে। শুরু হয় প্রশাসনের অত্যাচার। মূলত এইদিন থেকেই খুলনায় পুলিশ, প্রশাসন, বিজিবির ভয়ংকর রূপ খুলনাবাসী দেখতে পায়। ময়লাপোতা, সাতরাস্তা মোড়, রয়েল মোড়, মডার্নের মোড় এসব জায়গায় গোলাগুলি ও লাঠিচার্জ হয়। এসব স্পট থেকে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জনের মতো আন্দোলনকারী আটক হয়। তার মধ্যে অন্যতম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবী শিক্ষার্থী তানজিম তালহা। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী যখন হল ছেড়ে বাড়ির দিকে পাড়ি জমিয়েছে তখনো এই তালহা আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। ৩১ শে জুলাই ২০২৪ এই তানজিম তালহা আওয়ামী লীগ গঠিত পুলিশ এর কাছে আটক হন। তখনই বড় ভাইয়ের মত তাকে ছাড়াতে চলে যান সদর থানাতে শুধু তাকেই না আরো ২০ থেকে ২৫ জন সহযোদ্ধাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন। মূলত এই দিন থেকেই লোক চক্ষুর আড়াল থেকে সবার সামনে দাবি আদায়ের জন্য, বৈষম্যের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামনে আসেন। সেদিনই আসলে তিনি বুঝিয়েছিলেন কেন তিনি ভিন্ন। প্রকাশ্যে না থেকেও কিভাবে আন্দোলনে সক্রিয় থাকা যায়, বড় অবদান রাখা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছিলেন। ৩১ জুলাই ২০২৪ আন্দোলনের যোদ্ধাদের অভিভাবক মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ, রাহাত, আল শাহরিয়ার ও হেলাল।

৩৩ জুলাই ২০২৪ (০২ আগস্ট ২০২৪) : ৩১ জুলাই ২০২৪ এর ভয়াবহ রূপ দেখে তৎক্ষণাৎ কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করে ২রা আগস্ট ২০২৪ এ আবার আন্দোলনে নামার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পহেলা আগস্ট ২০২৪ এ দিনে আন্দোলন স্থগিত ছিল। আন্দোলন শুরু হওয়ার কথা ছিল নিউ মার্কেট বাইতুল নূর মসজিদ থেকে। আমি গঠিত টোকাই বাহিনী ও পুলিশ প্রশাসন এত নিষ্ঠুরতা ও নির্লজ্জতার প্রমাণ দিয়েছিল যে ঐদিন অনেককে মসজিদে ও ঢুকতে দেয়নি। নামাজ শেষে মোল্লা বাড়ির মোড় সেইলরের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। শিব বাড়িতে অবস্থান নিয়েছিল প্রায় ৫০ জনের মত পুলিশ। অন্যদিকে মিছিল শুরু করেছে মাত্র ২০ থেকে ৩০ জন আন্দোলনকারী। এদিকে আবার নিউমার্কেটের ভিতরে ছাত্রলীগ কর্তৃক মারধরের শিকার হয়েছে অনেকে। এরকম সিচুয়েশনেই শিব বাড়ির পরিস্থিতি বিবেচনা করে মিনহাজ ভাই ও রাহাত ভাই সমন্বয় করে ঘোষণা দিলেন মোল্লা বাড়ির মোড় থেকে শিববাড়ি থেকে মিছিল কে এগিয়ে নেওয়ার। মিছিল শুরু হল। আন্দোলনের এক সহযোদ্ধা সাহিল থেকে নেওয়া, ❝শিববাড়িতে পুলিশ। আমরা মোল্লাবাড়ির মোড়, সেইলরের সামনে ২০-২৫ জন একত্রিত হলাম। এক ভাই (আহসানুল মুইজ ভাই) বলল ভাই আজকে যা হওয়ার হবে, স্লোগান শুরু করেন। স্লোগান শুরু হলো। লিডে মুনতাসির। শিববাড়ি অভিমুখে রওনা হলাম। একটুকু সময়ের মধ্যে ১৫০-২০০ লোকের মিছিলে পরিণত হলো। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম মিছিল নিয়ে নিউমার্কেটে যাবো। নিউমার্কেটে যেতে যেতে আমাদের মিছিলে লোকসংখ্যা ১০০০ ছাড়ালো। অতঃপর নিউমার্কেটে একটা রাউন্ড দিয়ে সোনাডাঙ্গা অভিমুখে রওনা হলাম। ২০-২৫ জনের মিছিল এক জনস্রোত তৈরি হলো। আমরা সোনাডাঙ্গার দিকে গেলাম। পিছনে খোঁজ নিয়ে জানলাম অনেকে এখন নিউ মার্কেটে আছে। এত বড় জনস্রোত তৈরি হলো। পুলিশের প্রতি সাধারণ জনগণের এত ক্ষোভ যে তারা সোনাডাঙ্গা পুলিশ থানা আক্রমণ করার উপক্রম হলো। আমরা চেষ্টা করলাম এবং সফল হলাম। এবার উদ্দেশ্য ভার্সিটি। মিছিল ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হল। পথিমধ্যে আওয়ামী লীগের যত অফিস আছে সবগুলা সাধারণ জনগণ ভেঙে ফেলল। আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারণ জনগণের ক্ষোভ এখানে প্রকাশ পেল। গল্লামারি হয়ে আমরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালাম।❞ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছানোর পরে দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইটে পুলিশ জমায়েত হয়ে রয়েছে। তাদেরকে বলা হলো পিছনে ফিরে যেতে। কিন্তু বিপরীতে যারা কিছুদূর পিছিয়ে সাধারণ ছাত্র জনতার উপর গুলিবর্ষণ শুরু করল। আহত হলো অনেকে। তন্মধ্যে অন্যতম আব্দুল আল শাফিল যে তার চোখ হারিয়েছে পুলিশের গুলিতে। আসরের নামাজ শেষে গল্লামারি পার হয়ে যখন খুলনাবাসি ছাত্র জনতা বাসায় ফিরে যাবে তখন এই আওয়ামী গঠিত পুলিশ বাহিনী ছাত্র জনতার উপর গুলিবর্ষণ শুরু করেন। একদিকে ঘন বৃষ্টিপাত অন্যদিকে টিয়ারশেলের ধোয়া। সামনে কি আছে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। অনেক ত্যাগের নজরানর পর ২ জুলাই ২০২৪ এর আন্দোলন শেষ হয়।

৩৫ জুলাই ২০২৪ (০৪ আগস্ট ২০২৪) : ২ আগস্ট ২০২৪ এর ভয়াবহ রূপ দেখে ৪ আগস্ট ২০২৪ আবার আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। এক দফা এক দাবিতে রূপ নেয় আন্দোলন। কিছু আন্দোলনকারীদের জেল থেকে ছাড়াতে কোর্টে যার উদ্দেশ্যে রওনা হয় একদল। তখন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা সেই দলের সদস্যদের উপর গুলি বর্ষন করে। শিববাড়ি থেকে একের পর এক ঘোষণা আসে দুই থেকে তিনটি দল কোর্টের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার জন্য। মূলত আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এমন পরিকল্পনা করেন মিনহাজুল আবেদিন সম্পদ। এদিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল খুলে দেন।

৩৬ জুলাই ২০২৪ (০৫ আগস্ট ২০২৪) : বিজয়ের দিন, সকাল থেকেই মানুষের মাঝে আশঙ্কা, সংশয় ও ভয় ছিল। তবে এসবকে পেছনে ফেলে অনেকেই আন্দোলনে উপস্থিত হয়েছিলেন। তারা জানতেন, এই দিনটির গুরুত্ব কতটা এবং তারা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। দুপুর ৩টার দিকে, মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন-বাংলাদেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। মিনহাজের এই ঘোষণা যেন একটি নতুন সূর্যোদয় ছিল। তার কথাগুলি আন্দোলনকারীদের মধ্যে নতুন জীবন এবং উদ্দীপনা নিয়ে আসে। উপস্থিত জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ে, খুশির আকাশে তারা নিজেদের স্বপ্নের প্রতিফলন দেখতে পায়।