ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ অধিকাংশ আসামী পলাতক রেখেই আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে। পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান কামাল ও সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তবে আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজস্বাক্ষী হওয়ায় তাকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য কারাগারে পৃথক সেলে রাখা হয়েছে। অপরদিকে রাজধানীর চানখারপুলে গুলি করে ছয় জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিবসহ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আর ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আগামী ৭ আগস্ট শুনানি হবে। এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন হবে কি না, সে বিষয়ে আদেশ আগামী ৬ আগস্ট। তবে আদালত অবমাননার মামলায় শেখ হাসিনাকে ৬ মাসের কারাদন্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে গত বছরের জুলাই মাসে আন্দোলন শুরু হয়। সারা দেশে তীব্র গতিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। টানা ৩৬ দিনের সেই গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর ধারাবাহিকতায় ওইদিন পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণ-অভ্যুত্থানে প্রায় দেড় হাজার মানুষ মারা যায় এবং আহত হয় ২৫ হাজারেরও বেশি।
জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে গুম-খুন-নির্যাতনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে অভিযোগ এসেছে ৪৩০টি। এখন পর্যন্ত যে ২৭টি মামলা হয়েছে তার মধ্যে ২৩টি বিবিধ মামলা বা মিস কেস। আর চারটি মিস কেস নিয়মিত মামলায় রূপ নিয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ৭৩ জনকে। এখনো পলাতক ১৩২ জন। সে হিসাবে এখন পর্যন্ত চারটি মামলায় ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলাও রয়েছে। বাকি তিনটির একটি রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা ও আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীকে পোড়ানোর মামলা। অন্য মামলাটি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা।
আদালত অবমাননার মামলায় শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড: আদালত অবমাননার মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল ০২ জুলাই ২০২৫ বুধবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এই মামলার অপর আসামি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলমকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই প্রথম কোনো মামলায় শেখ হাসিনার কারাদণ্ড হলো। কয়েক মাস আগে ‘২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’-এমন একটি অডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। অডিওর এ বক্তব্য শেখ হাসিনার উল্লেখ করে তিনি ও শাকিল আকন্দ বুলবুলের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার মামলা করে প্রসিকিউশন। সেই মামলায় চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করা হলো।
জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন, বিচার শুরু : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বিগত ১০ জুলাই মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।
মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি। এর মধ্যে আবদুল্লাহ আল-মামুন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
মামলার আগের কার্যক্রম: গত ১ জুলাই এ মামলায় অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। সেদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৭ জুন পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ বিজ্ঞপ্তি জারি করেন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে পত্রিকায় এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়ে। ৭ দিনের মধ্যে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলবে বলে জানানো হয়।
গত ১ জুন জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ৫ টি অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেদিন আদালতে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম। যা সব গণমাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়।
শেখ হাসিনারবিরুদ্ধে সাড়ে আট হাজার পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র আইসিটিতে জমা দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। পাঁচ অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়া, আন্দোলনকারীদের দমনে হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ, রংপুরে শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা ও লাশ পোড়ানোর ঘটনায় নির্দেশ, প্ররোচনা, উষ্কানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্র, অন্যান্য অমানবিক আচরণে মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।
চানখারপুলে ছয় জনকে হত্যা: ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে গুলি করে ছয় জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিবসহ আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত ১৪ জুলাই চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।
অভিযোগ গঠনকালে গ্রেফতার চার আসামি ইন্সপেক্টর আরশাদ, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। এই মামলায় মোট আট আসামির মধ্যে চার জন পলাতক। তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে গত ৩ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। তারা হলেন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল। তদন্ত সংস্থা এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত সংস্থার দেওয়া এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার। তদন্ত করতে তদন্ত সংস্থার সময় লেগেছে ৬ মাস ১৩ দিন। তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়। এছাড়া ১৯টি ভিডিও, পত্রিকার ১১টি রিপোর্ট, দুইটি অডিও, ১১টি বই ও রিপোর্ট এবং ছয়টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে আসামি করা হয়, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট জনকে। তাদের মধ্যে গ্রেফতার আছেন ইন্সপেক্টর আরশাদ, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম।
আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলা: অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি ৭ আগস্ট:
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আগামী ৭ আগস্ট শুনানি হবে।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২ গত ২৮ জুলাই সোমবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনাল– ২ এর অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এ মামলায় মোট ১৬ জন আসামি। এর মধ্যে আট আসামি গ্রেপ্তার আছেন। তাঁরা হলেন সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান ও শেখ আবজালুল হক এবং সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার।
সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সাবেক উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সাহাসহ এ মামলার আট আসামি পলাতক। পলাতক এই আট আসামির পক্ষে দুজনকে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ৬ আগস্ট: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন হবে কি না, সে বিষয়ে আদেশ আগামী ৬ আগস্ট।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ ৩০ জুলাই বুধবার এ তারিখ ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। এই মামলায় ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ আসামি পলাতক।
গত ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
গ্রেফতারকৃত পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন- সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার আটক, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের সাবেক উপ-কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন মোল্লা, রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন ইমন, র্যাবের দুই সাবেক কর্মকর্তা এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী, বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন, আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় বরখাস্ত ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, দারুস সালাম জোনের সাবেক এডিসি এম এম মইনুল ইসলাম, ডিএমপির বাড্ডা জোনের সাবেক সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজন কুমার সাহা, ঢাকার ওয়ারী জোনের সাবেক এসি তানজিল আহমেদ, পুলিশের সাবেক এসি (ডিবি) জাবেদ ইকবাল, উত্তরা পূর্ব থানার সাবেক ওসি মো. মুজিবুর রহমান, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান, গুলশান থানার সাবেক ওসি মো. মাজহারুল হক, ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ, এসআই চঞ্চল চন্দ্র, সাবেক এসআই মো. আব্দুল মালেক, কনস্টেবল মুকুল হোসেন, শাহবাগ থানার ওসি অপারেশন মো. আরশেদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন, মো. নাসিরুল ইসলাম, সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সাহা, রবিউল আলম, গাজীপুরের কোনাবাড়ি থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিদর্শক কে এম আশরাফ উদ্দিন, গাজীপুরের সাবেক ডিবি সদস্য পরিদর্শক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল ফাহিম হাসান, কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান সজিব, মো. আকরাম হোসেন, উত্তরার কনস্টেবল হোসেন আলী ও সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপন।
ট্রাইব্যুনালের বিচার সর্ম্পকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম জানান, জুলাই গণহত্যার বিচার পূর্ণ শক্তিতে চলছে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে। এই বিচারের কোয়ালিটি মেইনটেইন করার ক্ষেত্রে আমরা এক বিন্দু আপস করিনি। পৃথিবীর কোনো সম্পদের বিনিময়ে আমাদের প্রসিকিউশনের বিচার ব্যবস্থাকে কেনার ক্ষমতা কারও হবে না ইনশাআল্লাহ। আমাদের টাকা দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে বিচার কাজ থেকে বিরত রাখা যাবে না। বিচার কাজে আপস করারও সুযোগ কাউকে আমরা দেব না। বিচার পূর্ণ শক্তিতে চলছে। এটার সমাপ্ত অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই করবো ইনশাআল্লাহ।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচার আগামীর বাংলাদেশে একটি ভয়হীন পরিবেশ তৈরি করবে। কোনো স্বৈরশাসক, কোনো দুর্বৃত্ত মানুষকে এভাবে হত্যার দুঃসাহস দেখাবে না। কাউকে গুম করার দুঃসাহস দেখাবে না। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এমন কোনো গোয়েন্দাবাহিনী তৈরি করবে না, যারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষকে গায়েব করে দেবে।
তিনি বলেন, এটা ঠিক অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড পুলিশ দ্বারা হয়েছে। কিন্তু আজকে বাংলাদেশে পুলিশকে নাই করে দিতে পারবেন? পুলিশের যারা এগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের আপনি বাদ দেবেন, কিন্তু পুলিশের মধ্যেও তো ভালো মানুষ আছে, তা না হলে এই রাষ্ট্র আজকে ফাংশন করছে কীভাবে?
চিফ প্রসিকিউটর আরো বলেন, শুধু বিল্ডিংগুলো ছাড়া সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, এমন একটা রাষ্ট্র কাঠামোর দায়িত্ব এই সরকার নিয়েছে। আপনারা এই বিচারের সঠিক পরিণতি বাংলাদেশে দেখতে পাবেন।