খাদিজা খাতুন
২৪ এর আন্দোলন যখন থেকে শুরু হয় তখন থেকে এটাকে আমি মনে মনে সাপোর্ট করি। কারণ ছাত্রদের সাথে যে কোটার লুকোচুরি খেলা হচ্ছিল সেটা সত্যিই অনেক দুঃখজনক এবং হৃদয়বিদারক ছিল। যে কোটার ইস্যুর শিকারে আমি নিজেও সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আর এটা পুরোটাই ছাত্র সমাজের সাথে অন্যায় হচ্ছিল। আমার সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারপরও আমি এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি দুটো বিষয়কে সামনে দেখে- (১) ছাত্রদের সাথে যেটা হচ্ছে সেটা চরম অন্যায়। (২) নিজের চাকরি না পাওয়ার ক্ষোভ তো ছিলই।
৭ জুলাই সিটি কলেজের সামনে থেকে আমি এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। চাকুরি করতাম সাভারে সেই সুবাদে মেট্রো দিয়ে শাহবাগে চলে যেতাম এবং সেখান থেকে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতাম। কিন্তু ১৭ জুলাইয়ে ছাত্রলীগ আমাকে বেধড়ক পিঠায়। এখান থেকে পালাতে গিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে দেখি ছাত্রলীগের হায়নারা এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করেছে। যেটা দেখার পরে আমি আরো অনেক ভয় পেয়ে যাই এবং সেখান থেকে কৌশলে বের হয়ে বাসায় চলে আসি।
বাসায় আসার পর স্বামী শপথ করায় যেন আর আন্দোলনে না যাই। তাই আমাকে সাভারে অফিসের মহিলা হোস্টেলে পাঠিয়ে দেয়। ১৮ জুলাই আমি আন্দোলন অংশগ্রহণ করি না। কিন্তু ১৮ই জুলাই যখন অনেকেই মারা যায় এবং ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে আমি সাভারে কোনভাবেই মন বসাতে পারি না। তাই আমি আবার ১৯ তারিখ মিরপুরে চলে আসি এবং সেইদিন জুমার নামাজের পরে বৃষ্টির মধ্যে মিরপুরে ১০ এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি।
১৯ তারিখ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার দুই এক দিন পরেই আমার স্বামী জানতে পারে যে, আমি আবারো আন্দোলনের অংশগ্রহণ করছি। তখন সে আমাকে আন্দোলনে গেলে ডিভোর্স দিবে বলে ভয় দেখায়। কিন্তু ছাত্র এবং সাধারণ জনগণকে যেভাবে মারা হচ্ছিল। সেটা দেখার পরে আমি আর ঘরে বসে থাকতে পারিনা। তাই আমি আবার আন্দোলন অংশগ্রহণ করি। যখন ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তখন আমার স্বামীর কাজের সুবাদে তাকে অফিসেই অবস্থান করতে হয়। আর সেটাই হয় আমার সুযোগ, তারপরে আর কখনো পিছনে আসতে হয় নাই আন্দোলন থেকে।
২৯ জুলাইয়ে একজন ছাত্রকে পুলিশ গুলি করে মারার পর বুকের উপর পা চেপে ধরে এবং চুল ধরে ঘাড় টাকেমটকায় দেয়। এই দৃশ্য দেখার পরে ঐ দিন ওখান থেকে শপথ করি স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট উন্মাদ কে না হটায় আমরা ঘরে ফিরব না। এভাবে আন্দোলন চলতে থাকে। কিন্তু ৪ আগস্ট বেলা তিনটে পৌনে তিনটা নাগাদ মিরপুর ১০ থেকে আমি নিজে গুলিবিদ্ধ হই। গুলি আমার বাম পায়ের উরুভেদ করে একপাশ দিয়ে ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়।
এমতাবস্থায় দুজন ছাত্র আমাকে হসপিটালে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ছাত্রলীগের হয়নাদের কারণে কোন হসপিটালে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পরে আমি তাদেরকে বলি আমার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। বাসায় আসার পথে পথিমধ্যে দেশীয় অস্ত্র দ্বারা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের ধাওয়া করে। বাকি দুই জন সহ আমরা কোন রকমে সেখান পালিয়ে বাঁচি, পরে অনেক কষ্টে বাসায় আসি। তাঁর পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমার এক পরিচিত ডাক্তারের কাছে চলে যাই এবং তার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভেতরে আমাকে চিকিৎসা দেয়া হয় ।