প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব

বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪ জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ছিল একটি মাইলফলক; এক নবদিগন্তের উন্মোচন। পনেরোটা বছর বাংলাদেশের উপর জগদ্দল পাথর হয়ে চেপেছিল মাফিয়াতান্ত্রিক স্বৈরাচার। অন্যায়, অবিচার, জুলুম-নিপীড়ন, নিষ্পেষণে জর্জরিত হচ্ছিল বাংলাদেশ। একটি প্রতিবেশী দেশের করদ রাজ্যে পরিণত হয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব হচ্ছিল ভূলুন্ঠিত। ঠিক এই সময়ে আমাদের তরুণ ছাত্রসমাজ জীবিকার মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য কোটা ব্যবস্থার জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনই পরবর্তীতে মহীরূহ হয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রূপ নেয়। আওয়ামী সরকার ভেবেছিল যেভাবে গত ১৫ বছর ধরে সহিংসতার মাধ্যমে বিরোধী দলসমূহের বিভিন্ন কর্মসূচী দমন করেছে, ঠিক সেভাবে খুব সহজেই ছাত্রদেরও দমন করতে পারবে। আওয়ামী সরকার ছাত্রদের পিছনে দলীয়করণকৃত আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী ও নিজদলীয় ক্যাডারদের লেলিয়ে দেয়। ছাত্রদের উপর চলতে থাকে গুলি, তাদের উপর নেমে আসে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। কিন্তু তাদের দমানো যায় নি। দ্রোহের আগুন দাবালনের মত চারদিকে ছড়িয়ে যায়। জনতাও যোগ দেয় ছাত্রদের কাতারে। ঈমান ও দেশপ্রেমের চেতনায় বলীয়ান হয়ে নিজের জানমাল ঝুঁকির মুখে ফেলে এইসব তরুণ জাতির উপর জগদ্দল পাথর হয়ে চেপেবসা স্বৈরাচারী আওয়ামী মাফিয়াতন্ত্রকে উৎখাত করার স্বপ্ন দেখতে থাকে, যে ব্যাপারে আমাদের মত অনেক প্রবীণরাই আশা হারিয়ে ফেলেছিল।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে কেবল একটি স্বৈরাচারের পতন হয় নি অথবা এটি কেবল একটি সরকারের পরিবর্তন ছিল না। আমাদের স্মরণে রাখা উচিত, ২৪ এই জাতির ইতিহাসে ৪৭ ও ৭১-এর মতোই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ২৪-এর মাধ্যমে আমরা এক নতুন যাত্রাপথ শুরু করেছি; আমরা এমন শপথ করেছি যাতে অতীতের কিছু জিনিস আর কখনো আমাদের জাতীয় জীবনে ফিরে না আসে। প্রথমত, আমাদের এই সংগ্রাম ছিল জাতির বুকে জেঁকেবসা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে। মানুষ রাজনীতি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা তো কেড়েই নিয়েছিল, তাদের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কেউ যাতে রাজনৈতিক প্রতিরোধ না গড়ে তুলতে পারে সেজন্য গত বছর যেকোন ধরনের বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ কর্মসূচী তারা জেল-জুলুম, গুলি এসব দিয়ে দমন করার চেষ্টা করেছে। আওয়ামী স্বৈরাচারীরা জানত, তারা জনগণের সমর্থন হারিয়ে ফেলেছে। সেজন্য তারা পরপর ৩ বার ন্যক্কারজনকভাবে প্রকাশ্যে ভোটডাকাতির পরিহাসমূলক নির্বাচন আয়োজন করেছেন, যা আয়োজন করা বা না করা ছিল একইকথা। একটি সুষ্ঠু গণতন্ত্রে সরকারকে হতে হয় জনগণের প্রতিনিধি। বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতন্ত্রের যাত্রাপথে যতবার ব্যাঘাত ঘটেছে তার মধ্যে সবচেয়ে তীব্র ছিল ২০০৯-২০২৪ সালের আওয়ামী আমল। এই আমল এতটাই ভয়ানক ছিল রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গকে দলীয়করণ করা হয়। সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল বিচার ব্যবস্থাও এই দলীয়করণের বাইরে থাকে নি। জবাবদিহিতার আওতার বাইরে চলে যাওয়ায় দুর্নীতির মাত্রা সীমাতিক্রম করে। মেগাপ্রজেক্টের নামে হয় লুটপাট। আওয়ামী লীগ আমলে ১৮-২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়। স্বৈরাচারিতার এই ভয়ানক রূপ অবলোকন করার পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তা ছিল ‘Enough is enough’. হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন তো করতেই হয়, ভবিষ্যতেও যাতে আর কখনো স্বৈরতন্ত্রের উদ্ভব না ঘটতে পারে সে বন্দোবস্ত করতে হবে। তাই জুলাই অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা হচ্ছে একটি মজবুত, টেকসই ও স্থিতিশীল গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের যথাযথ কার্যকারিতার জন্য রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ তথা আইন-প্রণয়ন, নির্বাহী, বিচারিক দিকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাহী এবং প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও অদক্ষতা উৎরে রাষ্ট্রযন্ত্র কর্মদক্ষ হয়ে উঠতে পারে।

হাসিনার ফ্যাসিবাদী আমলে বাংলাদেশের জনগণের জন্য আরেকটি অবমাননাকর ও অপমানজনক বিষয় ছিল পররাষ্ট্রক্ষেত্রে একটি প্রতিবেশী দেশের প্রতি নতজানু নীতি। সীমান্তে আমাদের নাগরিকদের যখন তখন গুলি করে হত্যা করা হত। ভারতকে এত সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরও তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি করা সম্ভব হয় নি। ট্রানজিট ও করিডোর সংশ্লিষ্ট এমন কিছু সুবিধা প্রদান করা হয় যার ফলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন ঘটে। বাংলাদেশ হয়ে পড়ে ভারতের গোয়েন্দাদের অভয়ারণ্য। আমরা দেখেছি, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে ভারতের অন্যায্য হস্তক্ষেপ, আধিপত্য এবং বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বিরোধিতা করার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের গুন্ডা বাহিনী লেলিয়ে দেয়া হয়। আমরা ভুলে যাই নি, জুলাইয়ের ছাত্র বিপ্লবীদের ‘ইমাম’ বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ ফেসবুকে ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির প্রতিবাদ করে স্ট্যাটাস দেয়ায় ছাত্রলীগের গুণ্ডা তাকে সারারাত নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। এছাড়াও আমরা দেখেছি, ২০২১ সালে গুজরাটের গণহত্যার প্রধান হোতা নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফর করার প্রতিবাদে এ দেশের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়লে, পুলিশের গুলিতে মারা যায় ১৭ জন নিহত এবং শতশত মানুষ আহত হয়। এমনকি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমরা দেখেছি, নিজেদের পুতুল হাসিনার গদি রক্ষায় ভারত অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ছাত্রজনতাকে দমন করার জন্য দলীয় পুলিশ, আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীর পাশাপাশি নেমে আসে গোপনে ভারতের হিট ফোর্স। কিন্তু তা আর গোপন থাকেনি। অনুসন্ধানমূলক ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, আইন-শৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনীর পোশাক পরিহিত গুলিরত অনেক সদস্যের মুখে হিন্দি কথোকপন শোনা যায়। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনা ছাত্র-জনতার সামনে আর টিকতে না পেরে দিল্লিতেই পালিয়ে যায়। জুলাই বিপ্লব কেবল আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার হটানোর আন্দোলনই ছিল না। তা ছিল ভারতের আধিপত্যবাদী নীতি ও কর্মকান্ডের কবল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইও বটে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে আমাদের প্রাপ্তি অনেক। প্রথমত, জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা পেয়েছি একটি অকুতোভয় সদাজাগ্রত জনতা। ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটা দিকের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে ও প্রতিবেশী শক্তিশালী দেশের অফুরন্ত সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে যে আওয়ামী সরকার দানবাকার ধারণ করেছিল তার রক্তচক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল। তারা শাহাদাতের প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে আল্লাহর নামে এই নব্য-ফেরাউনী শাসনকে ক্ষমতার মসনদ থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়েছে। এই ছাত্র-জনতা অতন্দ্রপ্রহরীরা এখনো সজাগ দৃষ্টি রেখে যাচ্ছে তাদেরই প্রতিনিধি ড. মুহাম্মাদ ইউনূস সরকারের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকে এবং আশা করি ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারের দিকেও থাকবে। এই জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা আমাদের সার্বভৌমত্বও যেন পুনরুদ্ধার করেছি। ভারতের প্রতি নতজানু নীতির অবসান হয়েছে। আমরা দেখেছি, সীমান্তে কিভাবে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর মানুষ বিজিবির সাথে একত্রিত হয়ে ভারতীয় বিএসএফ-এর অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে দিয়েছে। বিএসএফ কর্তৃক সীমান্ত হত্যাও অনেক কমেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা একটি প্রাণবন্ত জনপরিসর পেয়েছি, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ ও কর্মনীতি, সেইসাথে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা এবং তর্ক-বিতর্ক চলছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে মিডিয়াগুলোকে যে পরাধীনতার শেকল পরানো হয়েছিল তা থেকে মুক্ত হয়ে মিডিয়াগুলো এই আযাদ গতিশীল জনপরিসরের অন্যতম মাধ্যম ও উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুরো বিশ্বে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। আওয়ামী মাফিয়াতান্ত্রিক স্বৈরশাসনকে উৎখাত করতে পারার কারণে গণতান্ত্রিক বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে স্থায়ী, টেকসই এবং আরো সামনে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের করণীয়ের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে। আগেই বলেছি, হাসিনার ফ্যাসিস্ট আমলে কিভাবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য খর্ব হয়েছিল। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব না হয় সেজন্য প্রথমেই চাই রাষ্ট্রীয় সংস্কার, যার জন্য ইতোমধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। রাষ্ট্রের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এতটাই শক্তিশালী হতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোন সরকার স্বৈরাচারী হওয়ার খোয়াবও না দেখতে পারে। নির্বাহী এবং বিচারব্যবস্থা যাতে নির্বাচিত সরকারের লেজুড়বৃত্তি থেকে মুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজন দেশের রাজনৈতিক দলসমূহের বৃহত্তর ঐক্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করা। আরেকটি অতীব প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে, দেশের স্বার্থকে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে দেখা। আমাদের মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যকার মাত্রাহীন অনৈক্য, দ্বন্দ্ব এবং হানাহানি অতীতে স্বৈরশাসনের পথ সহজ করে দিয়েছিল। ভবিষ্যতেও যেন জুলাই বিপ্লবের স্টেইকহোল্ডারদের অনৈক্যের সুযোগে পুরনো ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শক্তি যাতে ফিরে না আসতে পারে সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ যে সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে তাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিশ্বমঞ্চে মর্যাদার আসনে সমাসীন হতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে শক্তিশালী দেশে পরিণত করতে হবে। এজন্যই বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি সামরিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে।

সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে বাজেটের যথাযথ একটি অংশ সামরিক এবং R&D তথা Re-search and Development খাতের জন্য বরাদ্দ করতে হবে। বিভিন্ন বন্ধু ও ভ্রাতৃপ্রতীম বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য দুর্নীতি দমন এবং আইন-শৃক্সক্ষলার অবস্থা উন্নতি করতে হবে। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা এখনো কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের চেয়ে অনেক দূরে অবস্থান করছি। বিভাগীয় শহরগুলোর বাইরে বের হলে অবকাঠামো অনুন্নয়ন চোখে পড়ে অনেক বেশি। এই ক্ষেত্রে উন্নয়ন ছাড়া দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অসম্ভব। তাই এইদিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করা অত্যন্ত জরুরী। আমাদের দেশের জন্য একটি বড় সম্পদ মানবসম্পদ, যাকে আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি না। মানবসম্পদ উন্নয়নের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। দেশে বসে ফ্রি-ল্যান্সিং হোক কিংবা প্রবাসে শ্রমিক প্রেরণ, এসবই আমাদের বিদেশী মুদ্রার বড় উৎস। এই মূল্যবান মানবসম্পদ উন্নয়নের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। দেশে সবার জীবিকার সংস্থান নিশ্চিত করার জন্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা, ঋণ এবং তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সেইসাথে তাদের যেন বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিগুলো গিলে না ফেলতে পারে সেজন্য সেইফটি নেটের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমাদের দেশের পর্যটন খাত প্রচন্ড সম্ভাবনাময় হলেও অবকাঠামোগত দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। এগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। কৃষির আধুনিকায়নের পাশাপাশি কৃষক ভাইয়েরা যাতে তাদের পণ্যের যথাযথ মূল্য পায় সেদিকে নজর দিতে হবে। তাদের জন্য কোল্ড স্টোরেজের সহজলভ্যতা, মধ্যস্বত্বভোগীর পরিমাণ কমানো, রাস্তাঘাট উন্নয়ন এবং পণ্য পরিবহনের সময় চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য দুর্ভোগ কমানোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ধনী-গরীবের বৈষম্য বৃদ্ধির মাধ্যমে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তার কোন মূল্য নেই। তাই কেবল জিডিপি বৃদ্ধি দিয়ে নয়, ধনী-গরীবের বৈষম্য হ্রাস করাটাও বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম মাপকাঠি হওয়া উচিত।

তবে সর্বশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি না বললেই নয় তা হচ্ছে, উপরোল্লিখিত সবকিছুই বীঃবৎহধষ ভধপঃড়ৎ তথা বহিরাগত হেতু। প্রকৃত পরিবর্তন তখনই আসা সম্ভব যখন মানুষের ভেতর থেকে পরিবর্তন আসবে। সেজন্য সমাজ সংস্কার এসব কিছুর মধ্যে সবচেয়ে জরুরী পদক্ষেপ। দেশে নৈতিক আবহ গড়ে তোলার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এদেশের ৯০% জনগণ মুসলিম। ইসলাম এদেশে মানুষের বিশ্বাস, অনুপ্রেরণা এবং নৈতিকতার সবচেয়ে বড় উৎস।

জুলাই বিপ্লব সাক্ষী, এদেশের মানুষ এই ইসলামের চেতনায় উজ্জীবিত হয়েই নিজেদের আযাদী রক্ষার লক্ষ্যে ফেরাউনী হাসিনা ও তার বাহিনীর মোকাবেলায় নেমে পড়েছিল। রাষ্ট্রীয় পলিসি এবং জনগণের এই মূল্যবোধ যখন একমুখী হবে তখন জনগণ স্বপ্রণোদিত হয়েই রাষ্ট্রের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করবে। জনগণের মধ্য থেকে এমন নৈতিক ও অনুপ্রেরণার শক্তির বিস্ফোরণ বিশ্বের ইতিহাসে খুব একটা দেখা যায় না। বাংলাদেশে যদি আমরা এই শক্তিকে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হবো।