অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বাংলাদেশের আন্দোলন, সংগ্রাম, সরকার পরিবর্তনের ইতিহাসে যুগান্তকারী অবিস্মরণীয় একটা ঘটনা হচ্ছে ২৪ এর জুলাই এর ছাত্র বিপ্লব। ১৬ বছরের জুলুম নিপীড়ণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা বিস্ফোরণ ছিল এই আন্দোলন। যার প্রেক্ষিতে তদানিন্তন ফ্যাসিষ্ট প্রধানমন্ত্রী তার বোনকে নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা অনেক স্বৈরশাসকের পতন দেখেছি, অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে জনতার অনেক সংগ্রাম দেখেছি, কিন্তু বাংলাদেশের ২৪ এর সরকার পতনের যে দৃশ্য, সেটা একেবারেই ব্যতিক্রম। তিনি বলেন, কল্যাণ রাষ্ট্র আর দুর্নীতি মুক্ত নেতৃত্ব আসলে নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেশের মানুষ দেখে সেটা পাওয়া সম্ভব হবে। তিনি উল্লেখ করেন, রাষ্ট্র যদি ভিন্ন মতকে দমন না করে, তাহলে মানুষ কতটা স্বস্তিতে থাকে, তা এখন বুঝতে পারছে।

DSC_4474

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দৈনিক সংগ্রামের সাথে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাতকারে তিনি বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশ নিয়ে মূল্যায়ন করেছেন, অর্ন্তবর্তী সরকারের সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেছেন, জনগনের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি এবং আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন দৈনিক সংগ্রামের চীফ রিপোর্টার সামছুল আরেফীন। ছবি তুলেছেন প্রধান ফটো সাংবাদিক আবদুল আজিজ ফারুকী। ডিজিটালে ছিলেন নজরুল ইসলাম ওমর

দৈনিক সংগ্রাম : বিপ্লবের ১ বছর পূর্ণ হচ্ছে ৫ আগষ্ট। বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার : জুলাই বিপ্লবের এক বছর পূতি হচ্ছে আজ ৫ আগষ্ট। বাংলাদেশের আন্দোলন, সংগ্রাম, সরকার পরিবর্তনের ইতিহাসে যুগান্তকারী অবিস্মরণীয় একটা ঘটনা হচ্ছে ২৪ এর জুলাই এর ছাত্র বিপ্লব, যেটাকে ২৪ জুলাই এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বলা হয়। সরকারসহ জুলাই বিপ্লবের সাথে সকল রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এই বার্ষিকী পালন করছেন। বার্ষিকী পালনের এই মুহুর্তে এর জন্য যারা জীবন দিলো, যারা আহত হলো, দুই হাজার ছাত্র-জনতার জীবন, প্রায় ৩০ হাজারের মতো ছাত্র-জনতা আহত হয়েছে। অনেকে হাতে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, মাথার খুলিতে স্প্রীন্টার ঢুকেছে। অনেকে এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন। আজকে বিপ্লবের বার্ষিকীতে তাদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছি, তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করছি, তাদের এই অবদানকে মূল্যায়ন করছি। তাদের এই ত্যাগ না হলে, নতুন বাংলাদেশ আমরা পেতাম না। নতুন বাংলাদেশ গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, মানুষ যে একটা আশায় বুক বেধে আছে, সেই আশাও আমাদের জাগতো না। পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা অনেক স্বৈরশাসকের পতন দেখেছি, অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে জনতার অনেক সংগ্রাম দেখেছি, কিন্তু বাংলাদেশের ২৪ এর সরকার পতনের যে দৃশ্য, সেটা একেবারেই ব্যতিক্রম। এখানে কৃতিত্ব জনগনেরই আছে। সকল রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে যারা আওয়ামী দু:শাসনের বিরোধী ছিল, তারা আন্দোলন করেছে, জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, জেল খেটেছে, ফাঁসিতে ঝুলেছে। কিন্তু প্রায় ১৫/১৬ টা বছরের সেই আন্দোলনের সফলতার মঞ্জিলে পৌছাতে পারেনি। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবক, হকার, শ্রমিক শেষ দিকে জুলাইতে এসে আন্দোলণটা এমন একটা সার্বজনীন রূপ লাভ করে, তখন সেটা আর কোন রাজনৈতিক দলের আন্দোলনে থাকলো না। কে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেটাও শনাক্ত করতে পারেনি। এটা অভাবনীয় জনগনের আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। এটা একটা ব্যতিক্রম ধর্মী আন্দোলন হয়েছিল। এ থেকে আমাদের একটা মূল্যায়ন হচ্ছে, অধিকার হারা জনগন যখন ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন এ রকম বিপ্লবই হয়। এ জন্য আমার মূল্যায়ন হচ্ছে, এটা জনগনের প্রত্যাশা ছিল, জনগনের আকাঙ্খা ছিল। পুলিশ, র‌্যাব এবং সেনাবাহিনী, নানা কালাকানুন দিয়ে অত্যাচার নির্যাতন করেও সরকার এই আন্দোলন থামাতে পারেনি। অত্যান্ত দু:সাহস দেখিয়ে ছাত্র জনতা এই আন্দোলনকে সফল করেছে। তারই বার্ষিকী সারা দেশব্যাপি আমরা পালন করছি। এই এক বছর পূতিতে ত্যাগি বীরদেরকে ম্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, যারা জীবন দিয়েছে, আল্লাহর কাছে তাদের শাহাদাত মঞ্জুরের জন্য দোয়া করছি, আহত যারা হয়েছে, তারা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে, তারা যে বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল, সেই বাংলাদেশ বির্নিমানে ভূমিকা পালন করতে পারেন। ১৬ বছরের জুলুম নিপীড়ণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা বিস্ফোরণ ছিল এই আন্দোলন। যার প্রেক্ষিতে তদানিন্তন ফ্যাসিষ্ট প্রধানমন্ত্রী তার বোনকে নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

৫ আগষ্ট আন্দোলনটা এমন একটা পর্যায়ে চলে গেলো, যে রাজধানীর বাইরে থেকে, ঢাকার সব প্রবেশমুখ দিয়ে লক্ষ লক্ষ লোক গণভবনের দিকে আসছিল। পুলিশ, বিডিআর, আইন শৃংখলায় নিয়োজিত বাহিনী, এমনকি সেনাবাহিনী তারাও তখন জনগনের কাতারে এসে দাড়িয়েছিল।

দৈনিক সংগ্রাম : এ সময়ের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে কিনা?

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার : বিপ্লবের প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার উত্তরটা অনেক জটিল। এক কথায় যদি আমরা বলি, এক বছরে সেই প্রত্যাশা পুরোটা পূরণ হয়নি। একটাতো পূরণ হয়েছে, ফ্যাসিস্টের হাত থেকে দেশটা মুক্ত হয়েছে। অত্যাচারী শাসনের জগদ্দল পাথার অপসারিত হয়েছে। রাজনৈতিক ভিন্নমত যারা পোষণ করতো, তাদের সেই রাজনীতি চর্চার সুযোগ ছিল না, সভা সমাবেশ করা যেতো না। জামায়াতে ইসলামীর অফিস খোলা যায়নি, আমাদের নেতাদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল, আমাদের নিবন্ধন ও প্রতীক কেড়ে নেয়া হয়েছিল, আমরা বাড়ী ঘরে পর্যন্ত থাকতে পারিনি, ৫ জন মানুষ এক সাথে বসা যেতো না। যে সব সাংবিধানিক, মানবিক, রাজনৈতিক অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছিলাম, বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অন্তত: এই একটা বছর, সেই সব অধিকার কিছুটা হলেও ভোগ করতে পেরেছি। মানুষের কাছে বার্তা পৌছাতে পেরেছি, ১৯ জুলাই স্মরণকালের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জাতীয় সমাবেশ আমরা করতে পেরেছি। এটাও আমাদের প্রত্যাশা ছিল। এটা ১৭ বছরতো করতে পারতাম, কিন্তু ফ্যাসিষ্ট সরকারের কারনে তা পারিনি। এই ধরনের প্রত্যাশাগুলো পূরণ হয়েছে। দুর্নীতি মুক্ত আমরা হইনি, কিন্তু দুর্নীতি করতে কিছুটা হলেও ভয় পাচ্ছে, প্রশাসনে থেকে যারা ভোটাধিকার হরণ করেছে, সে রকম ৩ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার গ্রেফতার হয়েছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি গ্রেফতার হয়েছেন, এটা নজীরবিহীন। বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করা, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে একটা দলের পক্ষ নিয়ে যাওয়ার যে পরিণতি, তার কিছুটা হলেও দেখা যাচ্ছে। ভবিষ্যতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে যারা যুক্ত হবেন, তাদের কাছে জনগনের এই বার্তা পৌছে গেছে যে, আইন শাসন যদি প্রতিষ্ঠিত থাকে আর এই শাসনের উপর কোন কর্তৃত্ববাদী সরকার নগ্ন হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে যারা অপরাধী, তারা আইনের আওতায় আসবে। এই ধরনের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।

আমরা শতভাগ নিশ্চিত নই, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে প্রস্তুতি সরকার নিচ্ছে, সেটা কতটা নিরপেক্ষ হবে, কতটা সন্ত্রাস, কালোটাকা, পেশিশক্তি মুক্ত হবে। ভোটাররা উৎসব মুখর পরিবেশে নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে। সেই বিষয়ে আমরা এখনও শতভাগ নিশ্চিত নই। সেটা এই কারনে যে, সরকার নির্বাচনের টাইমফ্রেম নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সেটা বাধাগ্রস্থ করতে নানামুখি ষড়যন্ত্র দেখা যাচ্ছে, এটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এজন্য আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাগুলোতে অংশগ্রহন করেছি, কীভাবে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হতে পারে, সেজন্য আমাদের মতামত দিয়েছি। জুলাই এর চেতনা ধারণ করে আমরা যেন নিবাচন করতে পারি, তাহলে হয়তো প্রত্যাশা পূরণ হবে।

প্রত্যাশার তো কয়েকটা পর্যায় ছিল। প্রথমটা হচ্ছে, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, যে সরকার আসবে তারা যেন, ক্ষুধা, দারিদ্র, দুর্নীতিমুক্ত নতুন বাংলাদেশ উপহার দিবে যেখানে বিচার বিভাগ হবে সর্ম্পূণ স্বাধীন, বেকারত্ব দূর হবে, সব জায়গায় মানুষ ইনসাফ পাবে। এটা কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা।

সব কথার মূল হচ্ছে, সব প্রত্যাশা আমাদের পূরণ হয়নি, রাজনৈতিক গতিধারা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে তা পূরণ করতে হবে।

দৈনিক সংগ্রাম : বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতা আপনি কীভাবে মূল্যায়ণ করছেন?

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার : ব্যর্থতাও আছে, সফলতাও আছে। সফলতা হচ্ছে, কিছু লুটপাটকারী, মানবতা বিরোধী অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছিল প্রথমে একটি, পরে আরেকটি করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন, নির্বাচনের আগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসামীদের শাস্তি দৃশ্যমান হবে। এটা এক ধরনের সফলতা।

দলীয় নিদের্শে যারা জনগনের ভোটাধিকার হরণ করেছিল, সে সব প্রধান নির্বাচন কমিশনারদের গ্রেফতার করা হয়েছে, সে সময় যারা মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছে, বিশেষ করে ডিসি, ইউএনও, এসপি, তাদের ব্যাপারে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারপর রাজনৈতিক দলগুলোকে একটা টেবিলে বসিয়ে ঐকমত্য করার চেষ্টা হয়েছে। গত রমযানে দ্রব্যমূল্য ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। এসব ব্যাপারে জনগন সাফল্যের কথা বলে। তারপরও আর্ন্তজাতিক প্রেক্ষাপট, মূল্য পরিস্থিতি কিছুটা ঝুকির মুখে ফেলেছে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, সমাজ বিরোধী অপরাধী তাদের অপরাধ করে যাচ্ছে। নৃশংস হত্যাকান্ড হচ্ছে। সরকার চেষ্টা করছে, সরকার বলছে, কিন্তু সেখানে শতভাগ সফলতা আসেনি। তবে আমরাও মনে করি, এটা সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। সকল রাজনৈতিক দল, জনগন, গণমাধ্যম; প্রত্যেক স্টেক হোল্ডারদের সমন্বয় সাধন করা দরকার। তার মানে জুলাই বিপ্লবের প্রত্যাশা শুধু একটা সরকারের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়।

দৈনিক সংগ্রাম : আগামীর বাংলাদেশ কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার : আগামীর বাংলাদেশ, এটাকে আমরা বলছি নতুন বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোটা এমন হতে হবে, প্রতি ৫ বছর পর নির্বাচিত হয়ে যে সরকারই ক্ষমতায় আসবে, সে যেন ফ্যাসিষ্ট না হয়ে উঠে। এজন্য জুডিশিয়ারী, সংবিধান, পুলিশ, নির্বাচন কমিশন, জন প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ অর্গানগুলোতে সংস্কারের যে উদ্যোগ চলছে, এটা যদি করা সম্ভব হয়, তাহলে অবাধ, স্বচ্ছ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হবে, তারা আর ফ্যাসিষ্ট হবে না। তারা জনগনের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির সাথে ক্ষমতার ভারসাম্য, বিচারপতি নিয়োগের বিধি, সংবিধানে গুরুত্বপূর্ন আর্টিকেল, যেগুলো প্রধানমন্ত্রীকে অসীম ক্ষমতার অধিকারী করেছে, সে সব জায়গায় সংস্কারের আলোচনা চলছে। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সংস্কার করা। এটা যদি হয়, তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম একটা পরিচ্ছন্ন রাষ্ট্র কাঠামো পাবে। পরিচ্ছন্ন নির্বাচন ব্যবস্থা পাবে। পরিচ্ছন্ন জনপ্রশাসন পাবে। অর্থনীতিতে লুটপাট বন্ধ হবে। ব্যাংক বীমা, বিনিয়োগে যে জটিলতা তৈরি করে গেছে, সেখানে সংস্কার করতে হবে। পুলিশের সংস্কার, আইনের সংস্কার, দুদকে সংস্কার করলে যে বাংলাদেশ হবে, সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন মানুষ দেখে। যেখানে দারিদ্রতা থাকবে না, অভাব অনটন থাকবে না। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানতো বলেন যে, মানুষ উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বেড়িয়ে এসে সরাসরি কাজে চলে যাবে, অর্থাৎ এক হাতে সার্টিফিকেট পাবে, আরেক হাতে কাজ পাবে। কাজ দিতে না পারলে বেকার ভাতা দেয়া, কলকারখানায় বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা, অর্থনীতিতে লুটপাট বন্ধ হওয়া, দুর্নীতি দূর করা, দুর্নীতিগ্রস্থদের আইনের আওতায় আনা এবং যারা ক্ষমতায় থাকবেন, তারা অন্তত: অবৈধ কোন সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন না। আমীরে জামায়াত ১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, জামায়াতের কেউ যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়, বা মন্ত্রী হয়, তাহলে সরকারী সুবিধায় যে প্লট, ফ্ল্যাট দেয়া হয়, তারা তা নিবে না। ট্যাক্স ফ্রি যে গাড়ী পাওয়া যায়, তা নিবে না। নগদ টাকার ছড়াছড়ি করবে না। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সরকার যে বরাদ্ধ দিবে, সে কাজ শেষে জনগনের কাছে হিসাব দিবে। বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের প্রধান কী সাহস করে এই কথা বলতে পেরেছেন? আসলে এ ঘোষণা দেয়া বিশাল সাহসিকতা ও নৈতিকতার ব্যাপার। এটাই আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ।

নেতৃত্বে যদি সৎ ব্যক্তিরা আসেন, আইন যদি কুরআনের নিদের্শনা মতো সুবিচারপূর্ণ হয়। অর্থ্যাৎ কল্যাণ রাষ্ট্র আর দুর্নীতি মুক্ত নেতৃত্ব আসলে নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেশের মানুষ দেখে সেটা পাওয়া সম্ভব হবে। যেখানে জুলুম থাকবে না, ভিন্ন মত দমন করা হবে না, সামাজিক, রাজনৈতিক, ভোটাধিকারের অধিকার, সভা সমাবেশ করার অধিকার থাকবে, কথা বলার স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। এগুলোতে গত ১৬ বছর ছিল। মানুষ গত ১ বছরে তার কিছুটা অনুভব করছে। রাষ্ট্র যদি ভিন্ন মতকে দমন না করে, তাহলে মানুষ কতটা স্বস্তিতে থাকে, তা বুঝতে পারছে।