ইব্রাহীম মণ্ডল

ঢাকা শহরে দেয়ালে গত কয়েক বছর পূর্বে দেখা গেছে একটি লেখা, ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা’, ‘এখন সময় ভালো না’, “সুবোধ কবে হবে ভোর”, এই লেখার সাথে মানুষের হাতের ছাপ একটি সূর্য আর একটি খাঁচা। কখনো খাঁচাটি বন্ধ, কখনো খোলা। কোথাও লেখা আছে- সরকার ভালো নয় আয়নাঘরে যেতে হবে। বুয়েটে আবরার হত্যার বিচার চেয়েও অনেক দেয়াল লিখন হয়েছে Justice for Abrar. “পারবেন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে।” দেয়ালে এমন লেখাকে আমরা চিকা মারা বা গ্রাফিতি বলি, যা বিমূর্ত এবং বিরুদ্ধে ভাষণের চিন্তাকে উসকে দেয় কাউন্টার কালচার।

ইটালীয় শব্দ গ্রাফিয়াটো (স্ক্র্যাচড)কে এসেছে। প্রাচীনকালে গ্রাফিতিগুলো একটি ধারালো বস্তুদিয়ে দেয়াল খোদাই হতো যদিও কখনো কখনো চক বা কয়লা ব্যবহার করা হতো। গ্রিক শব্দ গ্রাফেইন যার অর্থ ‘লেখা’ থেকেই বাংলা গ্রাফিতি মূলত শব্দটি এসেছে।

রাস্তার দুই পাশে বাউন্ডারী দেয়ালে। কোথাও মেট্রো রেলের পিলারে কোথাও সুরঙ্গ পথের বিনা অনুমতিতে মনের ক্ষোভে বহিপ্রকাশ ঘটায়। প্রতিবাদী সাহাসী উচ্চারণ করে, মানব মনে সাহস জোগায়। নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার, হাস্যরস ঠাট্টার বিদ্রƒপ, স্যাটায়ারের মাধ্যমে চেতনাকে জাগ্রত করে। জনমনে নতুন চিন্তার উদ্রেক করে, জনমতের ঐক্য ঘটায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনসিসির কার্যালয়ে লেখা ‘আমি মেট্রোরেল হতে চেয়েছিলাম, খোদা আমাকে ছাত্র বানালেন। এমন আশ্চর্যজনক তীর্যক স্যাটায়ার, স্বৈরশাসকের বুকে বিদ্ধ হয়।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা, উপজেলা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেয়ালে দেয়ালে এমন হাজার হাজার ছবি এবং লেখা হয়েছে যা হয়ে উঠে ৩৬ জুলাই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভাষা। যা সহজ সরল ভাষায় দৃষ্টিনন্দন লেখা এবং আকর্ষণীয় ছবি পথচারীকে আকর্ষণ এবং উদ্বুদ্ধ করে, সচেতন করে, জাগিয়ে দেয়, “স্বৈরাচারে হয়নি পতন, মুক্তিযুদ্ধ হয়নি শেষ, গর্জে উঠো বীর জনতা, গর্জে উঠো, বাংলাদেশ।”

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মায়ের মুখে শোকাহত রংপুরের ভাষায় গ্রাফিতি আঁকে। দ্রোহের ভাষা ছড়িয়ে দিয়েছে, দেখলে মনে হয় এ যেন এক প্রতিবাদী কাব্য। গ্রাফিতি চিত্র শিল্পের মাধ্যমে ক্ষোভের প্রকাশ, রাস্তার দুই পার্শ্বের বাউন্ডারীর দেয়ালে চিত্র শিল্পের বা লিখনীর মাধ্যমে দ্রোহের বিস্ফোরণ। উপকরণ: স্প্রেপেইন্ট, মার্কার পেন বা প্লাস্টিক রং আর পেইনটিং এর ফ্লাট ব্রাশ দিয়ে রাস্তার দুই পার্শ্বে কিনা অনুমতিতে এঁকে মনের ক্ষোভের প্রকাশ করা। অনেক সময় আক্ষেপের কথা, কষ্টের কথা, রাগের কথা। আবার কবিতার পঙক্তি, প্রেমের কথা, বিদ্রোহের কথা ও হতে পারে; ৮০ দর্শকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি লেখা ব্যাপক বিদ্রƒপ ছড়িয়ে গিয়েছিল লেখাটি ছিল ‘কষ্টে আছি।’ গ্রাম থেকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে, রঙিন স্বপ্ন নিয়ে আইজ উদ্দিন। হয়তো কোনো যুবক, রাজধানী শহরে এসেছিল। এখন স্বপ্ন, দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে, তাই কষ্টের কথা দেয়ালে লিখে জানান দিয়েছে ‘কষ্টে আছি আইজ উদ্দিন।’

আবার গ্রাফিতি আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে আন্দোলন মানে বিপ্লব, মানেই উলট-পালট তছনছ করে দেয়া। এজন্যেই “বিপ্লব ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা নয়, সৃষ্টির প্রসব বেদনা মাত্র,” জ¦রা-জীর্ণ অনিয়ম, দুর্নীতি, অপশক্তি বিনাশ করে নতুন সুন্দর কিছু সৃষ্টির উদ্দেশ্যই গ্রাফিতি। অনেক সময় অধিকাংশ গোষ্ঠী তাদের সক্রিয়তা গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রকাশ করে। ‘জেন মিচেল’ বাস্কুইট তার গ্রাফিতি এক সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করেছিল। তার তৈরি একটি গ্রাফিতি ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছিল। চীন, রাশিয়া সোভিয়েত আন্দোলন, ইরান বিপ্লব, ফরাসী বিপ্লব এবং বাংলােেশর স্বাধীনতা আন্দোলনেই, রাস্তার পার্শ্বে দেয়ালে বিপ্লবী স্লোগান উজ্জীবিত করণ, কবিতার লাইন, বিপ্লবী বডি ল্যাঙ্গুয়েজের গতিশীল ড্রইং কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীরে সমন্বয়ে গঠিত কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সংস আইন পাসসহ তিন দফা দাবিতে ২৭ জুলাই ২৪ ঘণ্টা আলর্টিমেটাম দেয় সমন্বয়করা। একই সময়ে দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি আঁকার কর্মসূচি দেয়া হয়।

বুয়েট ক্যাম্পাসে, দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি ও কার্টুন কর্মসূচি পালন করে আর্ট ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থীরা। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি-বেসরকারি ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় দেয়াল লিখন, গ্রাফিতি কার্টুনে দেয়ালগুলো ছেয়ে গেছে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে দেখছেন। মনে হয়েছে বিপ্লবের আরেক ভাষা গ্রাফিতি এর মাধ্যমে শাসকের অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান সব আন্দোলনেই গ্রাফিতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ৩৬ জুলাই সারা দেশের দেয়ালে দেয়ালে ব্যাপকভাবে আঁকা হয়, অমানবিকভাবে হত্যাকাণ্ডের ছবি আবু সাঈদের মৃত্যুর মুখে বুক পেতে দেয়ার ছবি। শুধু তরুণ-তরুণী নয় ছোট্ট শিশুরা রং-তুলি দিয়ে তাদের প্রতিবাদ, তাদের স্বপ্ন দেয়ালে তুলে ধরেছে। তুলে ধরেছে সুড়ঙ্গপথে। তাদের বার্তা তুলে ধরেছে। কোনো কোনো দেয়ালে শান্তির বার্তাও ফুটিয়ে তোলা হয়। সাধারণ সহজ সরলভাবে আঁকা চিত্র যেখানে বার্তা বা ম্যাসেজ লুকানো থাকে। থাকে ভবিষ্যৎ কোনো স্বপ্ন। সমসাময়িক রাজনীতি সামাজিক অবিচারের প্রতিবাদ।

প্রাচীন গুহা চিত্র থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক গ্রাফিতি সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রয়োজনের তাগিদে গ্রাফিতির বিবর্তন ঘটেছে। ফ্যাসিবাদকে প্রতিহত করার জন্য যেকোনো রাস্তার দেয়ালে আঁকা একটি গ্রাফিতি চলার পথে মানুষের মনে পূর্ণাঙ্গ বার্তা পৌঁছে দিতে পারে।

মেট্রোরেলের পিলারের ‘ফিরে দেখা ফ্যাসিস্টরেজিম’ শীর্ষক গ্রাফিতি অংকন চলছে; উপষ্টো আসিফ মাহমু ভূঁইয়ার উদ্যোগে। এখানে উঠে এসেছে। জনগণকে রক্ষক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের দিকে ঠেলে দেওয়ার গল্প। শাপলা চত্ত্বরের হত্যা কাণ্ড, বিশ্বজিৎকে শিবির ভেবে প্রকাশ্যে রাজপথে ছাত্রলীগ কর্তৃক কুপিয়ে হত্যা।

২৮ অক্টোবরে লগি-বৈঠার তাণ্ডব, লাশের উপর নৃত্য। আয়নাঘরে অমানবিক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড। ইলিয়াস আলী গুম, কাঁটাতারে ফেলানীর লাশ, আলেম উলামা গুম, ক্রসফায়ার, জঙ্গী নাটক সাজিয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ড অপহরণ ধর্ষণ, পিলখানা বিডিআর হত্যাকাণ্ড, আরও অসংখ্য গ্রাফিতি। যে গ্রাফিতিগুলো ফ্যাসিস্ট স্বৈরাশাসকরে নির্যাতনকে স্মরণ করিয়েছে যে হাসিনা কত ভয়াবহ ছিল।

আবেগাপ্লুত হয়ে প্রাচীর বা বাউন্ডারী দেয়ালে মালিকের অনুমতি তোয়াক্কা না করে আন্দোলনের চিত্র, উদ্বুদ্ধকরণ লেখা, স্লোগান যা দ্রোহের ছাত্র-জনতাকে উজ্জীবিত এবং প্রতিবাদ করো। দীর্ঘ দিনের নিপীড়িত-নির্যাতিতদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ, মুক্তির উচ্ছ্বাস, রং-তুলির বহিঃপ্রকাশই গ্রাফিতি। সাইজ, বিষয়বস্তু বিষয়ের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই রাজনৈতিক, সামাজিক কোনো অন্যায়-জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা সমকালীন কোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়া, জনপ্রিয় উক্তি, স্লোগান তুলে ধরা। “বুকের ভিতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর, তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার। কে বলেছে, কে বলেছে স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।” “পানি লাগবে পানি ফ্যাসিবাদের পতন চাই”। জনতার জোয়ার রুখতে পারে সাধ্য কার।

বিষয়বস্তু হিসেবে শতস্ফূর্তভাবে এসেছে স্বৈরশাসকের নির্যাতনের চিত্র। আবু সাঈদ, মুগ্ধের ও অন্যান্যরে শহীদ হওয়ার চিত্র ফুটে উঠেছে, হাজার হাজার ছাত্র-জনতা, বিভিন্ন পেশার মানুষের উপর আওয়ামী লীগের হেলমেট বাহিনীর নির্যাতনের চিত্র। হত্যা, খুন, গুম, ক্রসফায়ার, রিমান্ড, লোমহর্ষক আয়নাঘরের নির্যাতনের চিত্র। ছাত্র হত্যার পর লাশ গাড়ি থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়া, গণকবর, মাটি চাপা, মা-বাবার কলিজার টুকরো প্রতিভাবান মেধাবী সন্তানকে অর্ধমৃত অবস্থায় আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দেয়া।

রাজপথে বিশ্বজিৎকে দৌড়িয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা। ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠায় মানুষ মেরে লাশের উপর হায়েনার পৈশাচিক নৃত্য। মতিঝিল শাপলা চত্বরে আলেম-ওলামা, হাফেজরে লাশ। চৌকোষ বিডিআর, সেনাবাহিনীর লাশ। স্বৈরশাসক হাসিনার পৈশাচিক উল্লাস ইত্যাদি অসংখ্য চিত্র। এ যেন এক অন্যরকম বধ্যভূমির শহর। রাজধানীর রাজপথের কান্না, বিদ্রোহের ফ্যাসিবাদী এই স্বৈরশাসকের প্রতি জনসাধারণ যে কি পরিমাণ ক্ষুব্ধ, ঘৃণা, গ্রাফিতি না দেখলে বিশ্বাস করা যেত না।

এই গ্রাফিতি ধারণ করে আছে স্মরণকালের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড, যা মানব সভ্যতার যুগে প্রাগৈতিহাসিক চরম অসভ্যতাকেও হার মানিয়েছে। লিপিশিল্পীরাও বসে নেই, তারাও ক্ষোভের প্রকার করেছে। বাংলা এবং আরবী ভাষার অসাধারণ সব স্লোগান ও বাণীর ক্যালিগ্রাফি করেছেন বৃহৎ আকারে যা দর্শকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। এগুলোতে সংশ্লিষ্ট কুরআনের আয়াত, হাদিস কোথাও বিমূর্ততা। গ্রাফিতিগুলো যতদিন থাকবে ততদিন স্মরণ করিয়ে দেবে পৃথিবীর জঘন্যতম স্বৈরশাসক হাসিনার নির্যাতনের কথা। মানুষ জানবে ফ্যাসিবাদী হাসিনার নির্যাতন কতটা জঘন্যতম ছিল। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্র-জনতার আ›োলনে রাজধানীসহ সারা দেশের দেয়ালে ছাত্রদের আঁকা বর্ণিল বৈচিত্র্যময় গ্রাফিতি চিত্রের একটি সংকলন “দা আর্ট অব ট্রায়াম্ফ” জাতিসংঘের সাধারণ সভায় যোগ দিতে গিয়ে বিশ্বনেতারে হাতে তুলে দিয়েছেন। দেয়ালগুলো পরিণত হয়েছে প্রতিবাদ বিক্ষোভের বিশাল ক্যানভাসে। সরকারকে নানা শক্তিশালীর বার্তা দিতে তারা বিভিন্ন সৃজনশীল ও হৃদয়গ্রাহী স্লোগান এবং কবিতা লিখেছেন। এসব বার্তা যে বিপ্লবী চেতনা ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের আকাক্সক্ষার শিল্পিত প্রতিফলন। দেয়ালে ফুটিয়ে তুলেছে স্বপ্ন ভাবনা, নান্দনিক নজর করা গ্রাফিতি। গ্রাফিতি সময়ের চাহিদা অনুযায়ী উদ্ভব একটি শিল্পধারা, নতুন মনে হলেও হাজার হাজার বছরের পুরনো ধারার সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। প্রাগৈহিতাসিক যুগের গুহাচিত্রের কথা মনে করিয়ে দেয়। অজান্তা, ইলোরা, বাগ গুহায় পাথর ঘসে কলম বানিয়ে ড্রইং করেছে। হরিণ, বাইসনের ছবি আঁকে তারা। হরিণ শিকারের দৃশ্য। তীর বিদ্ধ হরিণ বাইসন। গাছের কষ ও পাতা বেটে রং তৈরি করে, পশুর লোম েিয় তুলি বানিয়ে রং করতো তারা।

শিল্পী সাহিত্যিকরা সর্বদাই সত্য সুন্দর মানবতার পক্ষে, অন্যায় অপশক্তির বিপক্ষে যুগে যুগে যখনই দেশ বা জাতিকে স্বৈরাচার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তখনই শিল্পী সাহিত্যিকরা বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিজের জীবনকে উৎস্বর্গ করেছে। ফ্রান্স, ইরান বিপ্লব, বাংলােেশ স্বাধীনতা আন্দোলনে শিল্পী সাহিত্যিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শিল্পের সকল মাধ্যমেই সক্রিয় ছিল। জুলাই ৩৬/২৪ ২য় স্বাধীনতা আন্দোলনেও উজ্জীবিত করতে শিল্পের প্রত্যেকটি শাখায় ছাত্র-জনতাকে উদ্বুদ্ধ জাগ্রত ও সাহসী করে তুলেছে। শিল্পের ভাষা অত্যন্ত শক্তিশালী জাগিয়ে তোলার অন্যতম মাধ্যম। কবি, শিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, নাট্যশিল্পী, আবৃত্তিশিল্পী, চিত্রশিল্পী, কার্টুনশিল্পী সবাই আন্দোনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।

বাংলাদেশে গ্রাফিতির প্রচলন শুরু হয় ষাটের শকের শুরুতে। ডেরিল ম্যাকড়ে বা কর্নব্রেডকে আধুনিক গ্রাফিতির জনক বলা হয়। তার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে ছড়িয়ে পরে। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাফিতি শিল্পী ব্যানকসি বলেন স্বৈরাচরের বিরুদ্ধে যখন কোনো অস্ত্রই কার্যকর করা যায় না, তখন গ্রাফিতিই একমাত্র অস্ত্র হয়ে যায়।

বাংলাদেশের ৪ অক্টোবর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ছিল মূলত মূর্খ মাস্তান লুটেরাদের বিরুদ্ধে মেধাবী শিল্প সাহিত্যিকদের বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন। ছাত্র-জনতা শিল্প সাহিত্যক সাংস্কৃতিক কর্মীদের আন্দোলন। হৃদয়গ্রাহি গান ও স্যাটায়ার কার্টুন হাসিনা সরকারের দুর্বল দিকগুলো নিয়ে কার্টুনিস্টরা প্রচুর কার্টুন, ক্যারিকেচার করেছেন। যেগুলো কার্টুনে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে ও প্রতিবাদ করা হয়েছে।

প্যারোডি কবিতা শব্দ শিল্পের উাচ্ছারণ, স্বৈরসাশকদের নিয়ে কৌতুক, হাস্যরস, তামাশা, মশকরা করে স্বৈরাচারীদরকে হালক করে দেয়ায় হাসির বস্তুতে পরিণত হয়ে গেছে। জনতার কাছে মূল্যহীন, মেধাহীন, ছাগল গাধায় পরিণত হয়েছে।

ভারতীয় শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায় “যুগ সাধন করতে হলে শুনেছি চোখ বুঝে করতে হয়। আর শিল্প সাধনা অন্য রকম চোখকে খোলাই রাখতে হয়, আর মনকে পিঞ্জর খোলা পাখির ন্যায় মুক্তি দিতে হয়” সুতরাং গ্রাফিতি নির্মাণে শিল্পীদের মূলত উ™দ্বুদ্ধ করেছে সচেতনা, পারসেপশন ক্ষমতা, সাহস যা নতুন শক্তিশালী প্রতিবারে ভাষার শিল্প ধারা জন্ম দিয়েছে।