জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা

আমি শহীদ মাসুদ রানার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা। আমার স্বামী মাসুদ রানা ৪ আগস্ট বিকাল ৫ঃ৩০ মিনিটে মিরপুর-১০, গোল চত্বরে গুলিবিদ্ধ হন ওইখান থেকে হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসারত অবস্থায় রাত ১:১৫ মিনিটে শাহাদাত বরণ করেন। দেখতে দেখতে একটা বছর হয়ে গেল এই এক বছর উপলক্ষে সকল রাজনৈতিক দলগুলো তাদের জায়গা থেকে আমাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। তার মধ্যে সর্বপ্রথম জামায়াত সবার আগে আমাদের পাশে এগিয়ে আসেন। আমি সারাজীবন তাদের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ থাকব। তবে প্রত্যেক দলগুলোর কাছে আমার অনুরোধ বিপদে তারা আমাদের পাশে ছিলেন কিন্তু তাদের অবস্থান তৈরিতে এই শহীদ পরিবারগুলোকে তাদের মোহরা বানাবেন না। কারণ শহীদের কোন বিনিময় হয় না এবং হতে পারে না। যাদের রক্তের বিনিময় এই দেশটা দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছে স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে তাদের প্লিজ আপনারা ভুলে যাবেন না। আপনারা আপনাদের মোনাজাতে তাদের রাখবেন। তবে যেই স্বৈরাচার দমনে তারা তাদের জীবন দিয়ে গেলো সুন্দর একটা দেশের জন্য, আমরা কি আজও সেই সুন্দর একটা দেশ পেয়েছি। আজও খুন, চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী মুক্ত দেশ পাইনি। যেখানে একজন শহীদের মেয়ের নিরাপত্তা নেই, সেখানে আমরা আমাদের নিরাপত্তা কিভাবে আশা করবো।

তাই আসুন সবার জায়গা থেকে সুন্দর একটা দেশ গড়তে এগিয়ে আসি। আমার সবচেয়ে খারাপ লাগে যাদের রক্তের উপরে দাঁড়িয়ে তারা আজ নতুন দল গঠনে ব্যস্ত তারা ভুলে গেছে সেই শহীদের একটা বছর হয়ে গেল আজও শহীদের স্বীকৃতি পেলোনা । রাষ্ট্রকে আমি আমার বড় সম্পদ দিলাম রাষ্ট্র আমাকে কি দিলো বিধবার স্বীকৃতি , আমার সন্তানকে দিলো এতিমের স্বীকৃতি। আমি আমার প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে বুঝি একজন সিঙ্গেল মাদারের জীবন কতটা কঠিন। আমি একজন সংগ্রামী মা। আমি আমার সন্তানের বাবা মা দুটোই। আপনারাই বলেন আমার কি বিধবা হওয়ার বয়স হয়েছে? কি সুন্দর একটা সোনার সংসার ছিল আমি মাসুদ আর আমাদের একমাত্র মেয়ে আরোবী। আমার আরোবী ছিল বাবার জান পুরো পৃথিবী ওর একদিকে আর মেয়ে একদিকে। আর সেই মেয়ে আমার আরোবী আজও আশায় আছে তার বাবা ফিরে আসবে আল্লাহর কাছে গেছে সুস্থ হতে।

সে যখন বাবাকে খুব বেশি মিস করে তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে কতদিন হল বাবা আসে না, আমাকে আদর করে না, খেলা করে না আমার সাথে, কোলে নেয় না। আল্লাহ গো কতদিন হল বাবাকে দাওনা। বাবাকে ফিরায় দাও নয়তো আম্মুকে আর আমাকে বাবার কাছে নিয়ে যাও। এই কথা শুনে আমি মা হয়ে কেমন করে নিজেকে শক্ত রাখতে পারি। আমি এই রাষ্ট্রের কাছে আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই। সবাই আমার মাসুদের জন্য দোয়া করবেন। এই শহীদের অবদান কেউ ভুলে যাবেন না। এই এতিমের হক নষ্ট করবেন না।