নূরুন্নাহার নীরু
মা ! মা ! মাগো! তুমি কোথায়? আমার হাত দুটো খুব ব্যথা করছে৷ কিছু ধরতে পারছি না কেন মা? আমার হাত দুটো কোথায়? তবে কি---! মাগো তুমি কিছু বলছো না যে ! (পর্দা উঠবে৷ দেখা যাবে একটি শরনার্থী ক্যাম্পে শোয়া মাহমুদ আজ্জুর৷ ইসরাইলের বোমার আঘাতে দুটো হাতই উড়ে গেছে কিশোর মাহমুদের৷ উপস্থিত ডাক্তাররা কোনরকম হাতের কাছে থাকা যন্ত্রপাতি দিয়েই অপারেশন করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছেন৷ এনেস্থেশিয়ার ব্যবস্থা না থাকাতে সীমিত প্রচেষ্টায় চলছিল এ অপারেশন৷ কর্তব্যরত ডাঃ সেই অপারগতার কথা স্বীকার করে আজ্জুরের মায়ের কাছ থেকে বিদায় নেবেন৷
মাহমুদের অজ্ঞান অবস্থায় এ অপারেশন চলাতে যখন তার জ্ঞান ফিরলো সে পূর্ণমাত্রায় অনুভব করছিল তার হাতের ব্যথা এবং বুঝতে সক্ষম হচ্ছিল মায়ের উপস্থিতি সহ চতুষ্পার্শ্বের অবস্থা৷৷)
Íবাবা আজজুর! এইতো আমি৷ এইতো তোমার মা ! আমি তোমার কাছেই আছি বাবা! তোমার হাত দুটো তো আল্লাহ কবুল করে নিয়েছেন৷ ওরা এখন বেহেশতের বাগানে অন্য সাথীদের সাথে খেলছে৷ ওদের জন্য তুমি আফসোস করো না বাবা! ওরা তোমাকে অনেক অনেক সম্মান ও মর্যাদায় উত্তীর্ণ করে দিয়ে গেছে৷ বাবা আমার, ধৈর্য ধরো৷ ধৈর্যশীলদের সাথে আল্লাহ আছেন৷
(মা খাওলা ইয়াকুত ব্যতিব্যস্ত হয়ে কথাগুলো বলেন৷ কোনরকম মিথ্যা বাহানার আশ্রয় না নিয়ে সাবলীলভাবে তিনি কথাগুলো বলবেন৷ মাথায় হাত বুলিয়ে স্বস্নেহে সাহস জোগাবেন কিশোর পুত্রের৷ দৃঢ় আশ্বাসে স্মরণ করিয়ে দিবেন মাহমুদের এ ত্যাগ আল্লাহর কাছে পরম কবুলযোগ্য৷)
Í তবে কি আমার হাত দুটো নেই! (আবারো মাথা ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করবে মাহমুদ আজ্জুর৷ এবং ধরা গলায় বলবে)
Íমাগো আমি ধৈর্যশীলদের মধ্যেই থাকতে চাই৷ আমি কেন কাঁদবো? এইতো তবু আমি তোমায় দেখতে পাচ্ছি, আমার প্রিয় ভুমি ফিলিস্তিনকে দেখতে পাচ্ছি, আরো দেখতে পাচ্ছি মহান আল্লাহর সৃষ্টি এই পৃথিবী! না মা! আমি কাঁদবো না! তুমি দোয়া করো আমি যেন ধৈর্যশীলদের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারি ৷ আমার এই হাত দুটো আল্লাহ কবুল করেছেন, আমি তাতেই সন্তুষ্ট ৷ আমি যেন আমার অন্যান্য ফিলিস্তিনি ভাইদের সাথে বেহেস্তের সবুজ পাখি হয়ে যেতে পারি।
(হঠাৎ থেমে যাবে মাহমুদ৷ চোখ ঝাঁপসা হয়ে উঠবে জমাট মেঘের তোড়ের মতো তবু নিজেকে সংবরণ করে বলবে)
কিন্তু কিভাবে মা? আমি কিভাবে পাথর ছুঁড়বো ওই ইসরাইলীদের দিকে? তবে কি আমি লড়াই করে শহীদ হবো না?
চিন্তা করো না বাবা! তুমি কি ভুলে গেছো মুসাব সাহাবীর কথা? ওহুদ যুদ্ধে হাত হারিয়ে তিনি তো বুক দিয়েই লড়েছিলেন কাফেরদের বিরুদ্ধে!! সেভাবেই তুমিও লড়ে যাবে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু থাকতে৷ তোমাকে অবশ্যই লড়তে হবে ঐ ইসরাইলী জালিমদের বিরুদ্ধে৷
(দৃঢ় প্রত্যয়ে দূর্বার কন্ঠে মা বলে যাবেন কথাগুলো৷ যা ফিলিস্তিনী মায়েদের স্বাভাবিক শিক্ষা সন্তানের জন্য৷)
আল্লাহ তোমাকে কবুল করুক বাবা! আমিন৷
(মা পুনরায় দোয়া করবেন দুহাত তুলে৷)
আমিন ! হে আল্লাহ আমাকে সে শক্তি দাও৷ আমাকে তুমি দ্রুত সুস্থতা দাও৷
(মাহমুদও অনাগত দিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে আল্লাহর সাহায্য চাবেদৃঢ় কন্ঠে৷)
ওরা সমস্বরে বলে উঠবেঃ আমিন!
(অবশেষে মা ছেলে দুজনেরই আমিন শব্দ বাজতে থাকবে আর পর্দা নেমে যাবে৷)