আব্দুস সালাম

ছামেতদের বাড়ির কাছে আকরাম স্যারের বাড়ি। একজন ভালো অঙ্কের স্যার হিসেবে এলাকায় তার বেশ সুনাম রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা তার কাছে পড়তে আসে। আলিনা তাদের মধ্যে একজন। দেখতে শ্যামবর্ণের হলেও রয়েছে মায়াবী চেহারা। কারোর দৃষ্টির আঙ্গিনায় আলিনা আবির্ভাব মানেই তার রূপের ফাঁদে তার দৃষ্টিটা কিছুক্ষণের জন্য আটকে যাওয়া। চোখ ফেরাতে মন চাইবে না। আর যুবক ছেলেদের কথা বলাই বাহুল্য। পাড়ার ছামেত দুরন্ত স্বভাবের মেধাবী ছাত্র। কলেজের ছাত্র সংসদের নেতা হওয়ার সুবাদে কেউ না কেউ তার সাথে থাকেই। অনেকের সঙ্গে তার জানাশোনা। দুষ্ট ছাত্রদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সখ্য। আলিনাকে দেখার পর থেকে ছামেতের মধ্যে পরিবর্তন আসতে থাকে। তার দুরন্তপনায় ছেদ পড়ে। তার মনটা পড়ে থাকে আকরাম স্যরের বাড়িতে। কারণে অকারণে স্যারের বাড়িতে তার আনাগোনা বেড়ে যায়। আলিনা ঠিকই বুঝতে পারে ছামেতের চোখের ভাষা। তার উপস্থিতির কারণ। এভাবেই দিনের পর দিন চলতে থাকে। একদিন এক কাজিনের মাধ্যমে আলিনার সঙ্গে ছামেতের পরিচয় হয়। তারপর থেকে চলার পথে কিংবা স্যারের বাসায় আলিনার সঙ্গে ছামেতের দেখা হলে প্রায়ই কথা হতো। এভাবেই একের পর এক পেরিয়ে যায় সপ্তাহ মাস বছর। ছামেত দূর সম্পর্কের আত্মীয় হওয়ায় আকরাম স্যার তাকে কিছু বলার সাহস পেত না। তাছাড়া ছামেত কোন কারণে মাইণ্ড করলে স্যারের খুব অসুবিধা হয়ে যাবে। তাই মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য করত। দেখেও না দেখার ভান করত।

একসময় ছামেত বুঝতে পারে আলিনা তাকে পছন্দ করে না। কৌশলে তাকে এড়িয়ে যায়। কিন্তু ছামেত তা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। আলিনার মনে একটু জায়গা করে নিতে সে চেষ্টার ত্রুটি করে না। এই চেষ্টাই যে কাল হবে কে জানত? আলিনা আকরাম স্যারের বাড়িতে পড়তে আসা বন্ধ করে দেয়। ছামেতের মনের মধ্যে আলিনাকে না পাওয়ার একটা কষ্টের বীজ বপন করে। ধীরে ধীরে সেই বীজ একদিন অঙ্কুরিত হয়। একসময় তা বড় হয়ে মহীরূহে পরিণত হয়। অবশ্য সেই কষ্ট তাকে বেশিদিন বয়ে বেড়াতে হয়নি। এসএসসি পাস করার পর আলিনা ছামেতদের কলেজে ভর্তি হয়। তত দিনে আলিনা অনেক সুন্দর হয়েছে। তার সঙ্গে ছামেত কথা বলে বুঝতে পারে শুধু দৈহিক শ্রী বৃদ্ধিই ঘটেনি আচার ব্যবহারেও কেমন যেন পরিপূর্ণতা এসেছে তার। অনেকদিন পর হলেও ছামেতের মনের আকাশ থেকে কুয়াশার মেঘ কেটে সূর্যের দেখা মিলে। ছামেতের মনের গহীনে বাসনা জাগে উদিত সূর্যের আলোয় আলোকিত হতে। আলিনার মাঝে একাকার হয়ে মিশে যেতে চায় ছামেত। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও ছামেতের মন আকাশে দেখা যায় কালো মেঘের ঘনঘটা। আলিনার নির্লিপ্ততা আর তার নতুন বন্ধুদের সঙ্গ ছামেতের বুকে যন্ত্রণার শেল হয়ে বিঁধে। ইতোমধ্যে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছামেতের মনোবাসনার কথাটা জেনে যায়। বন্ধুদের পরামর্শে ছামেত আলিনাকে সরাসরি প্রপোজ করে। কিন্তু আলিনা সেই প্রস্তাবে সম্মত হয় না। ভদ্র ভাষায় সেই প্রস্তাবকে ফিরিয়ে দেয়। সেই সাথে ছামেতের কাছে একটা অনুরোধ করে- তাকে নিয়ে সে যেন কোন স্বপ্ন না দেখে। ছামেত ভগ্ন মনোরথ হয়ে ফিরে আসে। সে নিজেকে খুব অসহায় মনে করে। তার কাছে মনে হয় পৃথিবীর সকল কষ্ট একত্রে হয়ে তার বুকে বাসা বেঁধেছে।

বন্ধুরাও ছামেতের মনকষ্ট দূর করার ব্যর্থ চেষ্টা করে। কিন্তু তারা হার মানার নয়। এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে। বন্ধুরা তাকে পরামর্শ দেয়- যেভাবেই হোক তোকে আলিনাকে বিয়ে করতে হবে। দেখবি বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। মেয়েরা যে পাত্রে থাকে সেই পাত্রের রূপ ধারণ করে। কোন সমস্যা হবে না। কীভাবে বিয়ে হবে তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। সবকিছু আমরা দেখব। ছামেত এতটা স্বার্থপর হিংসুক নয়। সে আলিনাকে কষ্ট দিতে চায় না। তাই সে বন্ধুদের প্রস্তাব রাজী হয় না। বন্ধুরাও নাছোড়বান্দা। শেষপর্যন্ত বন্ধুদের আবেগের কাছে হার মানে। সে বাধ্য হয়ে আলিনাকে বিয়ে করতে রাজী হয়। এরপর অত্যন্ত গোপনে শুরু হয় নীলনকশা বাস্তবায়নের কাজ। কলেজে আসার পথে একদিন বন্ধুরা আলিনাকে কৌশলে তুলে নিয়ে যায় দূরে কোথাও। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা জবরদস্তি করে ছামেতের সঙ্গে আলিনার বিয়ে পড়িয়ে দেয়। তারা আলিনাকে শাসিয়ে দেয় বিয়ের খবরটা আপাতত যেন গোপন থাকে। সুবিধা মতো সময়ে প্রকাশ করবে। অসহায়ের মতো মাথা নিচু করে নির্বাক থেকে মৌন সম্মতি জানায়। বেশি দেরি না করে সেদিন বন্ধুরাই আলিনাকে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল। বিদায়ের সময় আলিনাকে আলতোভাবে বুকের মধ্যে চেপে ধরে ছামেতে একটু আদর করেছিল।

বিয়ের বিষয়টি নিয়ে ছামেতের মনের মধ্যে একটা ভয় বাসা বাঁধে। একই ভয় আলিনার মনেও ছিল। তার মনের একপাশ যেমন ছামেতকে ঘৃণা করে। ঠিক অন্যপাশ ছামেতের জন্য ভালোবাসার ডালি সাজিয়ে বসে থাকে। ঘৃণা ও ভালোবাসার দোলায় দুলতে থাকে আলিনা। বিয়ের পর থেকে এভাবেই আলিনার মধ্যে একটু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। বেশ কয়েকদিন সে কলেজে আসা বন্ধ করে দেয়। সারাদিন মন খারাপ করে বাড়ির মধ্যে বসে থাকে। এর কারণ জিজ্ঞাসা করেও মা-বাবা কোন উত্তর তার কাছ থেকে কোন উত্তর পায় না। তাদের মনের মধ্যে দুঃশ্চিন্তা বাড়তে থাকে। অবশ্য মা-বাবাকে এর জন্য বেশিদিন কষ্ট করতে হয়নি। সকলের অনুরোধ রক্ষার্থে আলিনা আবার কলেজে যাওয়া শুরু করে। এয়ার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। আলিনাকে কলেজে দেখে ছামেতের বুকের মধ্যে একটা আনন্দের ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। তবে সে সাহস পায় না আলিনার মুখোমুখি হতে। ছামেতের বন্ধুরাও তাকে বলেছে কিছুদিন পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে। ওকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। বন্ধুদের পরামর্শ সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল। অবশ্য পরীক্ষার শেষদিন ছামেত আলিনার মুখোমুখি হয়েছিল। পরীক্ষা কেমন হয়েছে তা জানতে চেয়েছিল। আলিনাও স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিয়েছিল। ছামেতের ইচ্ছা করছিল তার সঙ্গে একান্তে বসে গল্প করতে। আলিনাও ভয় পাচ্ছে কেউ যদি দেখে ফেলে। কেমন যেন একটা ভয় তাদেরকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আলিনা দ্রুত বিদায় নেয়। ছামেতের ইচ্ছা করছিল আলিনার একটা হাত ধরে কিছুটা পথ হেঁটে যেতে। মনের সাধটা মনের সিঁকেই তুলে রাখে অন্য কোনদিন পূরণ করার বাসনায়। যতক্ষণ দেখা যায় ছামেত আলিনার পথচলা দেখতে থাকে। পথের বাঁকে মোড় ঘুরতেই আলিনা পিছন ফিরে তাকায়। দেখে একই জায়গায় ঠাই দাঁড়িয়ে ছামেত। চোখে চোখ পড়তেই দুই হাত নেড়ে বিদায় দেয় ছামেত।

পরীক্ষা শেষ হওয়ায় আলিনার আর কলেজে আসা হয় না। কয়েকদিন পর ছামেতের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। ভালোভাবেই সে পরীক্ষাগুলো শেষ করে। উচ্চরত শিক্ষার জন্য তাকে এই শহর ছাড়তে হবে। তার জন্য প্রস্তুতি চলতে থাকে। রেজাল্ট প্রকাশ হলে দেখা যায় আলিনা প্রথম শ্রেণিতে পাস করেছে। মাস দুয়েক পর ছামেতেরও অনার্সের রিজাল্ট প্রকাশ হয়। ২য় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। মাস্টার্স করার জন্য ছামেত ঢাকাতে চলে যায়। আলিনা একই কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়। ছামেত আলিনার স্মৃতি বুকে ধারণ করে ঢাকায় পড়ে থাকে। আলিনাকে দেখতে মন চাইলে সে বাড়ি চলে আসে। বাড়ি এলে আলিনার সঙ্গে কলেজে দেখা করে। আলিনার মনের মধ্যে ছামেত কবে যে একটা জায়গা করে নিয়েছে তা আলিনা বুঝতেই পারেনি।

একদিন দেখা যায় তার মনের পুরোটা জায়গা জুড়ে ছামেতের বসবাস। এভাবেই চলতে থাকে দিনের পর দিন, সপ্তাহর পর সপ্তাহ। মাস পেরিয়ে কবেই যেন বছর পার হয়ে যায়। ওদিকে ভালো ভালো জায়গা থেকে আলিনার বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। আলিনা সাফ জানিয়ে দেয় পড়াশুনা শেষ না করে সে কাউকে বিয়ে করবে না। পড়া শেষ করে ছামেত ঢাকায় একটা চাকরি খুঁজতে থাকে। ছোট বড় সব চাকরির জন্যই সে আবেদন করে। একটা চাকরি জোগাড় হয়ে গেলেই সে বিয়ের বিষয়টি সবাইকে জানাবে। আলিনাকে ঢাকাতে নিয়ে আসবে। আলিনাও অপেক্ষা করতে থাকে কবে সে ছামেতের একটা চাকরি পাওয়ার সুখবর শুনতে পাবে। চাকরি পেতে তার খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। বছর পার না হতেই মন্ত্রণালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি পেয়ে যায়। তার চাকরি পাওয়ার কথা শুনে সবচেয়ে খুশি হয়েছিল আলিনা।

ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব আসার পর তার মা-বাবা আলিনাকে বোঝাতে চেষ্টা করে। মা তাকে বলে, “তুই আর না করিস না। বিয়েতে রাজী হয়ে যা। ছেলে ভালো একটা চাকরি করে। অনেক টাকা বেতন। তাছাড়া ওদের আর্থিক অবস্থাও ভালো।

আমরা যে খুব বড়লোক তাও না। তোর বাবা কোনরকমে শিক্ষকতা করে সংসার চালান। খেয়ে দেয়ে কোনরকমে চলে যায়। অবশ্য সংসারে অভাব অনটন নেই। এটাই আল্লাহর কাছে বড় শুকরিয়া। তোর ছোট দুই বোনকে পড়াতেও আমাদের কষ্ট হচ্ছে। তাই বলছিলাম- এরকম প্রস্তাব সাধারণত পাওয়া যায় না। তুই রাজী হয়ে যা। না করিস না।” বিয়ের কথা শুনলে আলিনার মুখখানা মলিন হয়ে যায়। তার বুকের মাঝখানে ধক করে ওঠে। কেউ না বুঝলে মা ঠিকই বোঝে। এবার মা এর কারণ উদ্ঘাটনে মাঠে নামে। এক প্রকার বাধ্য হয়েই আলিনা মুখ খোলে। সত্য কথাটা বলে দেয়। সত্য কথা শোনার পর বাবা অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে। মা কান্নায় ভেঙে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে মা অনেক কথা বলে ফেলে। মা বলেছে তুই আমাদের মুখে চুনকালি দিয়েছিস। কপাল পোড়া, অলক্ষ্মী, হতচ্ছাড়া কোথাকার! বাবা নির্বাক নিঃস্তব্ধ। মা-বাবা যে ছামেতকে পছন্দ করেনি তা বুঝতে আলিনার মোটেই কষ্ট হয়নি। মুখ বুজে সবকিছুই তাকে সহ্য করতে হয়। তার বিশ্বাস একসময় সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। হ্যাঁ তা-ই হয়েছিল। কয়েক বছর পর সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। উভয় পক্ষের আত্মীয়-স্বজনরাও সবকিছু মেনে নেয়।

একসময় ছামেত ঢাকার মিরপুর এলাকায় আলিনাকে নিয়ে ভাড়াবাসায় থাকা শুরু করে। ছোট্ট তাদের সংসার। ছামেত অফিসে গেলে আলিনার একা একা ঘরে মোটেই মন বসত না। সারাক্ষণ পথপানে চেয়ে থাকত। কখন স্বামী ঘরে ফিরবে। ছুটির দিনগুলো তারা ভালোভাবেই উপভোগ করত। ওরা একে অপরকে ভাবত তারা এই শহরের সবচেয়ে সুখি দম্পতি। বছর তিনেক পর তাদের ঘরে নতুন এক অতিথির আগমন ঘটে। বাবা-মা হওয়ার স্বাদ পাওয়ায় তাদের সুখের ষোলকলা পূর্ণ হয়। পুত্র সন্তানকে নিয়ে আলিনার ব্যস্ততা অনেকখানি বেড়ে যায়। পুত্রের ভালো মন্দের ভাবনা তাকে সবসময় তাড়া করে বেড়ায়। জন্মের সাথে সাথে পুত্র যেন অভাবকেও সঙ্গে করে নিয়ে আসে। অসুখ-বিসুখ যেন শরীরের মধ্যে স্থায়ীভাবে ঠিকানা করে নিয়েছে। কিছুতেই ছাড়তে চায় না। প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পাওয়ার পরও ছামেত যা বেতন পায় তা দিয়ে কোনরকমে সংসার চলে। সংসারের সব সমস্যার সমাধান সে করতে পারে না। সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভাব অভিযোগও বাড়তে থাকে। ছোটখাটো বিষয় নিয়েও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই খুনসুটি হয়। মনোমালিন্য হয়। আবার ঠিক হয়ে যায়। ছামেত ভাবতে থাকে আলিনা অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। তার যে একটা সুন্দর মন ছিল তাতে এখন মরিচা পড়েছে। সে আর আগের মতো তাকে ভালোবাসে না। যে প্রয়োজনগুলো স্ত্রী গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করত সেই একই প্রয়োজন তার কাছে এখন গুরুত্বহীন। ছামেত মাঝে মাঝে অতীতের ভালো স্মৃতির কথা স্মরণ করে বর্তমানের দুঃখ ভোলার চেষ্টা করে। এভাবেই গত হতে থাকে একের পর এক তাদের মূল্যবান দিনগুলো।

ছামেত ইদানিং লক্ষ করেছে- সংসারের টুকিটাকি বিষয় স্ত্রী প্রায়ই ঝগড়াবিবাদে লিপ্ত হয়। ঝগড়ার সময় স্ত্রী যা যা বলে তার কোনটা এতটাই ভয়ংকর যে ছামেতের সারা জীবনের সুখকে এক নিমিষে নস্যাৎ করে দেয়। ছামেত সেগুলো হাসি মুখে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সে কিছুতেই বুঝতে পারে না- স্ত্রী কি সত্যি কথা বলছে? একটা বিষবাক্য সে কোনভাবেই ভুলতে পারে না। যার শিকার সে বারবার হয়। সেই বিষবাক্যের ধকল সে মোটেই সহ্য করতে পারে না।

আর তা হলো- “তোমার সঙ্গে বিয়ে না হলে আমার আরো ভালো জায়গায় বিয়ে হতো। তুমি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছ। আমি তোমাকে কক্ষনো বিয়ে করতাম না। তোমার সংসারের অভাব অনটন আমার একদম ভালো লাগে না।” ছামেত নির্জনে বসে ভাবতে থাকে তাহলে, সত্যিই আলিনা অসুখী? সে আমার সংসারে অতৃপ্ত? আবার পরক্ষণের ভাবে- তবে সে তো ঠিকই বলেছে। আমি তার অমতে জোর করে বিয়ে করেছি। ও তো আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়নি। তাহলে কি আমি সত্যিই ওকে সুখী করতে পারিনি? তাহলে কি ও এতদিন সুখে থাকার অভিনয় করেছে? কিন্তু আমার ভালোবাসায় তো কোন খাদ ছিল না। আমি তো শুধু তাকেই চেয়েছি। তাকে নিয়েই সুখে থাকতে চেয়েছি। তবুও একটা অপরাধ বোধ তাকে সবসময় দংশন করতে থাকে। নাহ! তার কিছুই ভালো লাগে না। যে সংসার ছিল আলোয় ভরা তা এখন আঁধারে ঢাকা। যে সংসার ছিল তার কাছে স্বর্গের মতো, সেই সংসারই তার কাছে এখন নরক।

স্ত্রী যতই মন্দ কথা বলুক না কেন ছামেত সবকিছুই সহ্য করতে পারে। কিন্তু স্ত্রী যখন বলে, “আমি তোমাকে বিয়ে করতাম না” তখন সে আর একদম সহ্য করতে পারে না। ওই একটি কথাই তার সব সুখকে নষ্ট করে দেয়। বারবার সে একই বিষবাক্যের শিকার হয়। সে এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজতে থাকে।