প্রত্যয়
আবদুল হাই শিকদার
হয়তো তোমার বাগানে ফুটেনি প্রত্যাশা মতো ফুল
হয়তো ফ্যাসিস্ট শাসকের ভয়ে নড়নিকো একচুল
হয়তো তোমার জীবন খাতার প্রতি পাতা ভরা ভুল
হয়তো পুঁজির দেখানো পথেই ছিলে তুমি মশগুল।
হয়তো হয়েছো ব্যাকরণবিদ পড়েনিকো বই মূল
হয়তো বৃথাই কেটেছো সাঁতার পাও নাই খুঁজে কূল
হয়তো ধ্যানের ধান্য তালাশে বাঁধানো হুলুস্থূল
হয়তো কর্ণে ঝুলিয়ে ভেবেছো এটাই সোনার দুল।
হয়তো তোমার চারপাশ ছিল ভয়াবহ প্রতিকূল
হয়তো তোমার মৃত্তিকা থেকে হয়ে গেছো উন্মুল
হয়তো তোমার আশাহীনতার পথে পথে পোঁতা শূল
হয়তো তোমার অবয়বে মাখা দিশাহীন কালিঝুল।
হয়তো আগুনে ঝলসে গিয়েছে তোমার চৈত্র-ফাগুন
তবুও প্রকৃতি আপন নিয়মে জাগাবেই নবারুণ
দৃঢ় পদক্ষেপ দ্বিধাহীন মন খুব দরকার আজ
পত্রবিহীন বৃক্ষের ব্যথা আনবেই ঋতুরাজ।
সমর্পণ
আহসান হাবিব বুলবুল
শিশু ইসমাইলের গলায় যখন
ইব্রাহিম (আ.)-এর ছুরি চমকাচ্ছিল,
আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রভায় তখন কি
সাত আসমান ঝলকাচ্ছিল!
ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন আবদ্
প্রভুর কৃতজ্ঞতায় সিজদায়...
ভাসলো পৃথিবী আনন্দ বন্যায়!
ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হলো,
“নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কুরবানি,
আমার জীবন, আমার মরণ সবকিছুই
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য।”
দূরত্ব জানে
ফজিলা ফয়েজ
দূরত্ব জানে, তোমাকে ছাড়া কতটা থেমে যায় এই সময়।
জানালার বাইরে চাঁদটা আজ অন্যমনস্ক।
রোদ যেন ফিকে লাগে।
চিঠি লিখি মনে মনে,পাঠাই নাকারণ উত্তর নেই।
দূরত্ব এক বিষণ্নতার নাম।
এই শহর, এই ঘর, এই দিনলিপি সবই আছে
শুধু তুমি ছাড়া এই জীবন একটা অসমাপ্ত কবিতা।
পৃথিবীর বাঁক বদল
মোশাররফ হোসেন খান
পছন্দ হোক আর নাই হোক
পৃথিবী বদলে যাবে---
হয়তো সম্পূর্ণ অন্ধকার
হয়তো সম্পূর্ণ আলোকময়
হয়তো আধো আঁধার
হয়তো আধো আলো।
যাই হোক না কেন পৃথিবী বদলে যাবে।
হয়তো কোনো গোলার্ধই
আমূল পরিবর্তন হবে না---
সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র অপরিবর্তনীয়
পশু, পাখি, কীট পতঙ্গ ঠিকই থাকবে।
তাহলে কি নিয়ে বদলে যাবে পৃথিবী?
সেটা বলে দেবে ভবিতব্য।
পছন্দ হোক আর না হোক
পৃথিবী বদলে যাবে।
আমার প্রত্যাশা এই---
কেউ না কেউ আলোর আধার হয়ে ঘুরে দাঁড়াক।
দীপ্তিময় আলোর দিকেই হোক পৃথিবীর বাঁক বদল।
সময়ের অসহায়ত্ব
শাহানাজ শিউলী
সময়ের সাথে জীবন বদলায়,
বদলায় চোখের জ্যোতি,
ঝাপসা স্বপ্নগুলো ভাসে কপালের তিলক রেখায়।
প্রত্যাশারা দু’হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকে ফুটপাতের ভিখারির মতো।
জামার আস্তিনের ভাঁজে ভাঁজে প্রত্যাশাগুলো বন্দী
হয়ে পড়ে
অপারগতা গুলিবিদ্ধ পাখির মতো ছটফট করে
ঝুলন্ত ত্বকের বলিরেখায় চাওয়া-পাওয়াগুলো ধূসর হতে থাকে
বঞ্জনার অনলে বারবার পুড়ে ঝলসিত হয় দেশপ্রেমের প্রতিশ্রুতি
সময়ের চোখ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে
অসহায়ত্বের কাছে।
ঘুটঘুটে আঁধারে এলিয়ে পড়ে ক্লান্ত শরীরে।
স্মৃতির কাতরতায় ঝাপসা হতে থাকে সোনালী সময়।
শেকড়ের নদী
মুসা আল হাফিজ
কী নিবিড় কুমারী, জন্ম নিলো ছায়া থেকে।
তার কোনো শরীর নেই, কিন্তু কী সুন্দর- যেনো একটুকরো নীল কুয়াশা।
সে হাঁটে খালি মাঠ পেরিয়ে, শূন্য নদীর পাড় ধরে,
খোঁজে একটি বৃক্ষ, যার নাম ঠিকানা।
প্রথম বাতাসের সাথে কথা বলে সে :
“ওগো, বৃক্ষটি কই?”
বাতাস শুধু হাসে, কয় না কথা। ছড়িয়ে দেয় কেবল অনির্বচনীয়তা।
সামনে আকাশ, নক্ষত্রবিহীন। কুমারি ডাকে, ও আকাশ , বৃক্ষ কোথায়?
আকাশও নিশ্চুপ, শুধু দেখায় অন্তহীনতা ।
অবশেষে এক মরুভূমি, যার শেষপ্রান্তে,
বৃক্ষ। গাছটি মৃত নয়, জীবিতও নয়।
তার শেকড় উঠে গেছে জমাট বাঁধা আকাশের দিকে !
আর ডালপালা ডুবে গেছে মাটির গভীরে !
গাছটি কথা কয় শব্দ ছাড়াই :
“আমি তোমার জন্মসনদ,
তুমি আমাকে খুঁজে ফিরছো,
কিন্তু তুমি নিজেই আমার হারানো ডালপালা।”
কুমারী এখন না কাঁদছে, না হাসছে।
সে ধীরে ধীরে মিশে যায় বৃক্ষের শেকড়ে,
আর তার অন্তরে বইতে থাকে নদী।
ও নদী, আমাকে নেবে তুমি সুরেলা আমাতে ?
জন্ম-মৃত্যুর অধিক অর্জনে?
নদী বলে, আমাকে জাগাও তবে নিজের শেকড়ে!
প্রেমের পরিপত্র
জহির সাদাত
(আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ স্মরণে)
প্রাজ্ঞ বৃক্ষটি নিজস্ব ছায়া মেলে মহিমান্বিত হয়েছে
তাঁর শীতলতার আলেখ্যে খেলা করে
ঘুঙ্গুর পরা শিশু।
তাঁর প্রচেষ্টায় ঘুটঘুটে আঁধার কেটে
উন্মোচিত হয় সত্যের মোড়ক।
রিক্ত বেলাভূমিতে পড়ে সাহসের পলি।
ন্যায়ের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ প্রজ্জ্বলিত হয়
ফুলে ফুলে জারি হয় প্রেমের পরিপত্র।
আকস্মিক বৃক্ষটি হঠাৎ উড়াল দেয় অনন্ত অসীমে
তাঁর বিরহে হৃদয় আমার চৈত্রদাহে বিক্ষত ভূমি।
রক্তের সিঁড়ি
মুহাম্মদ নূরে আলম
অশ্রু গড়ায়ে পড়ে জুলাইয়ের শত শহীদের মায়ের
বুকের মধ্যে চাপা দিয়ে রাখা আছে কত শত শোক গাঁথা
আলমারিতে রাখা আছে শহীদেরই রক্তমাখা জামা।
আহা সেই জুলাইয়ের আবাবিলেরা।
আমাদের শহীদেরা।
আমাদের গাজীরা।
আমরা তোমাদের ভুলিনি প্রিয় ভাই বোনেরা।
এই আনন্দ,
এই মুক্তি,
এই উদযাপন সবই তোমাদের আত্মত্যাগের ফসল।
সমগ্র জাতির সম্মিলিত দুআ আজ তোমাদের জন্য।
আমাদের স্মৃতিতে,
আমাদের সত্তায় তোমরা চির জাগরূক থাকবে ।
বাংলাদেশের আকাশে উঠেছে ঈদের চাঁদ
ঈদ এসেছে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে।
জালিম ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশ।
ঈদ মোবারক।
ধৈর্য
হাফিজুর রহমান
ভুলের উর্ধ্বেও ভুল থাকে!
হুট করে ভুল-বোঝার মধ্যেও ভুল হতে পারে,
যাচাই বাছাই করা উচিত নির্ভুলভাবে -
চুড়ান্তভাবে- সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে।
দায় না এড়ানোই- সর্বত্রই শ্রেষ্ঠ ভুল!
ভুল হতে পারে দেখায়, ভুল থাকতে পারে শোনায়
অনেক বেশি ভুল হতে পারে ভেবে নেয়ায়;
তথ্য-সুত্রে নিশ্চিতের ক্ষেত্রে, ধৈর্যের বিকল্প নেই।
কবি ও কবিতা
বশির আহমেদ
কবিতা লিখলে মাঝে মাঝে কবি ও কবিতা হয়ে যেতে হয়,
আমি আজ কবিতার মতো,
নতুন পাঞ্জাবি পায়জামা সাড়া শরীরে আতরের ঘ্রাণ।
একটু বাড়তি আদর ভালোবাসা আপ্যায়ন তাও আবার ঈদ বলে কথা।
দুঃখের ন্যাতানো নদী সাঁতরিয়ে একটি উৎসব মুখর সকাল,
সমবেত ঈদের নামাজ প্রসন্ন দুপুর মাড়িয়ে শুভ্র বিকেলের মাদকতায়
কবিতা হওয়ার মৌন বাসনা,
অতঃপর রোদে পোড়া বিদগ্ধ সবুজের শরীরে ছুঁয়ে আমি কবিতা হলাম!
মায়া
ইবনে শহীদুল্লাহ্
মায়ায় পড়ে পুড়ছি,
মনের বিপরীতে জীবন চলছে।
অসীম এক গন্তব্যহীন পথে
যে পথে মায়ার চাদরে মোড়ানো
সম্মুখে হেঁটে যায় বায়ে কিংবা পিছে
যেদিকে ফেরাই আঁখি সর্বত্রই মিছে।
তবুও যেতে হবে জানি যেতে হবে বহুদূর অজানা রথে
মায়া অবারিত প্রেমেরই মতো হাঁটিতেছি সেই পথে।