বাংলাদেশি আবু হাসান মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের প্রচেষ্টায় কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ছোট্ট শহর পোর্ট অ্যালবার্নিতে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের একটি অংশ হওয়ার গৌরব অর্জন করার পথে। তার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায় পোর্ট অ্যালবার্নির এই সাফল্য আসতে যাচ্ছে।
আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্র। এই তিন দেশের যৌথ আয়োজনেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের মেগা ইভেন্ট। আগামী বছরের ১১ জুন থেকে ১৯ জুলাই এই তিন দেশের ১৬ ভেন্যুতে বিশ্বসেরার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবে ৪৮টি দেশ। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া আসরের এটি ২৩তম আসর। এই আসরে জায়গা করে নিতে এখনো বাছাইপর্বে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে অনেক দেশ। ইতোমধ্যে এশিয়ার ছয়টি দেশসহ বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত হয়েছে ১৩টি দেশের।
বিশ্বকাপের মহা আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর বড় শহরগুলো। কিন্তু আবু জাহাঙ্গীর কানাডার পোর্ট অ্যালবার্নির মতো একটি ছোট শহরের জন্যেও এই বিশাল সুযোগটি দেখতে পেয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে তিনি স্থানীয় নেতাদের নিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করেন। এজন্য তিনি ফিফা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তার প্রচেষ্টায় ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের জন্য পোর্ট অ্যালবার্নিকে যোগ্য অনুশীলন কেন্দ্র হিসাবে কর্তৃক স্বীকৃতি দিয়েছে ফিফা ।
গত ৩০ জুলাই, ২০২৫ ফিফা কানাডার স্টেডিয়াম ও ভেন্যু ব্যবস্থাপনার নির্বাহী পরিচালক ডন হার্ডম্যান, টেরি ডিকিন এবং আবু জাহাঙ্গীরের মধ্যে একটি ভার্চুয়াল মিটিং হয়। এই মিটিংয়ে, ফিফা আনুষ্ঠানিকভাবে পোর্ট অ্যালবার্নিকে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী যে কোনো দেশের জন্য প্রশিক্ষণের একটি যোগ্য আয়োজক শহর হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে পোর্ট অ্যালবার্নির জন্য একটি বড় অর্জন।
ফিফা নিশ্চিত করেছে যে, পোর্ট অ্যালবার্নির ‘টিম বেজ ক্যাম্প’ প্রস্তাবটি টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জাতীয় ফেডারেশনগুলোর কাছে সক্রিয় এবং দৃশ্যমান থাকবে। আগামী ৫ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনের জন এফ কেনেডি সেন্টারে চূড়ান্ত ড্রয়ের পর, যদি কোনো দেশ তাদের অনুশীলন কেন্দ্র হিসাবে পোর্ট অ্যালবার্নিকে বেছে নেয়, তাহলে ফিফা সেই জাতীয় দল এবং এই শহরের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পাদনে সহায়তা করবে।
২০২৬ বিশ্বকাপের অফিসিয়াল সময়সূচি অনুসারে, ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে এই অঞ্চলে। উত্তর আমেরিকার এই অঞ্চলের কানাডার ভ্যাঙ্কুভার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল, লস অ্যাঞ্জেলেস ও সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়াতে খেলা হবে। এই কারণে, গ্রুপ ‘বি’-এর কোনো দেশ পোর্ট অ্যালবার্নিকে তাদের দলীয় বেজ ক্যাম্প হিসেবে বেছে নিতে পারে, এমন সম্ভাবনা খুবই বেশি। এর মূল কারণগুলো হলো- নিকটবর্তী অবস্থান ও ভ্রমণ সুবিধা, ‘নিরিবিলি’ বেজের কৌশলগত সুবিধা, ফিফার অফিসিয়াল স্বীকৃতি, দ্রুত আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আদর্শ অবস্থান এবং কমিউনিটির সমর্থন।
নিকটবর্তী অবস্থান ও ভ্রমণ সুবিধা যে দেশগুলো প্যাসিফিক উত্তর-পশ্চিম (ভ্যাঙ্কুভার এবং সিয়াটল) এবং ক্যালিফোর্নিয়াতে তাদের ম্যাচ খেলবে, তারা পোর্ট অ্যালবার্নির অবস্থাকে অত্যন্ত সুবিধাজনক মনে করবে। এখানে থাকা একটি দল খুব সহজেই কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের আয়োজক শহরগুলোতে যাতায়াত করতে পারবে, যা খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে এমন ভ্রমণের ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করবে।
আবু হাসান মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের মতে, ‘এটি কেবল ফুটবল নিয়ে নয়, এটি পোর্ট অ্যালবার্নিকে বিশ্ব মানচিত্রে তুলে ধরার একটি সুযোগ।’ সেই সুযোগটাই তিনি কাজে লাগিয়েছেন। তার এই স্বপ্ন শুধু কথার কথা নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, পোর্ট অ্যালবার্নির মতো ছোট শহরগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে আসে।
আবু হাসান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (এএইচএম জাহাঙ্গীর) বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং এখন কানাডাতেও সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে একটি গুরত্বপূর্ণ রূপান্তরের অংশ ছিলেন। ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলো যাতে এলসি ছাড়াই আন্তর্জাতিক অর্ডার নিতে পারে, সে লক্ষ্যে পারচেজ অর্ডারকে এলসি বা বন্ডেড ওয়্যারহাউজের সীমার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার মতো ধারণা চালু করেন তিনি।
আমদানি-রপ্তানি নীতিমালার সংস্কারে তিনি শিল্পপতিদের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং হোম টেক্সটাইলকে একটি প্রতিযোগিতামূলক রপ্তানি খাতে পরিণত করতে ভূমিকা রেখেছেন।