১৯৮৪ সালে প্রথম এশিয়া কাপ হওয়ার পর কেটে গেছে ৪১ বছর। অথচ মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসরে কখনও ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হয়নি। শেষ পর্যন্ত রোববার সেই প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্ধী পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে রেকর্ড নবমবারের মতো মহাদেশীয় আসরের শিরোপা ঘরে তুলল সূর্যকুমার যাদবের দল। ৫৩ বলে অপরাজিত ৬৯ রানের ইনিংস খেলে ফাইনালের নায়ক তিলক ভার্মা।
রোববার ২৮ হাজার দর্শক উপস্থিতিতে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মহাদেশীয় আসরের ফাইনালে আগে ব্যাট করতে নেমে ১৯.১ ওভারে ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। জবাব দিতে নেমে ১৯.৪ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে টস জয় পেয়ে ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ফলে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। তবে ফাইনাল ম্যাচেও আলোচনায় ছিল দুদলের ‘হ্যান্ডশেক’ বিতর্ক। এদিনও সেটির পুনরাবৃত্তি হয়েছে। গ্রুপ পর্ব ও সুপার ফোরের মতো ফাইনালেও টসের পর হাত মেলাননি দুই দলের অধিনায়ক। ফাইনাল ম্যাচে অবশ্য আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করে পাকিস্তান।
দুই ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান আর ফখর জামান মিলে প্রথম চার ওভারে করে ৩২ রান করা পাকিস্তান প্রথম ৬ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে তুলে ৪৫ রান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৮ ওভারে বিনা উইকেটে ৬৪ রান নিয়ে ব্যাট করছিল। দলের পক্ষে সাহিবজাদা ৪৭ আর ফখর জামান ১৫ রানে ব্যাটিংয়ে ছিলেন। ইনজুরির কারণে ফাইনাল ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছেন ভারতীয় অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন হার্শিত রানা ও আর্শদ্বীপ সিংও। তাদের বদলে খেলছেন রিংকু সিং ও শিবম দুবে। অপরদিকে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা একাদশ নিয়েই শিরোপা লড়াইয়ে নেমেছে পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টির এক নম্বর দল ভারত এশিয়া কাপে ছিল দুর্দান্ত ফর্মে। গ্রুপ পর্ব ও সুপার ফোর মিলিয়ে ছয় ম্যাচেই অপরাজিত ছিল দলটি। অন্যদিকে বিশ্বের সাত নম্বর দল পাকিস্তান ছয় ম্যাচে হেরেছে দুটিতেÑদুটিই ভারতের বিপক্ষে।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতও শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অভিষেক শর্মাকে (৫) দলীয় ৭ রানে ফেরান ফাহিম আশরাফ। স্লো ডেলিভারিতে মেরে খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন হারিস রউফের হাতে। পরের ওভারে শাহিন আফ্রিদির স্লো বলে তুলে মারার চেষ্টায় ঠিকঠাক লাগেনি সূর্যকুমার যাদবের (১) ব্যাটে। মিড অফে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন সালমান আগা।
সূর্য ব্যাট হাতে ধুঁকছিলেন চলতি বছর, সেই অফফর্ম এবারের এশিয়া কাপেও চালু রেখেছেন। ফাইনালসহ এই বছর ১১ ম্যাচে ভারতীয় অধিনায়কের রান মাত্র ১০০। নিজের দ্বিতীয় ওভারে ফাহিম ভারতীয় শিবিরে আবারও ধাক্কা দেন শুভমান গিলকে (১২) ফিরিয়ে। মিড অনে তার ক্যাটিও নেন রউফ। ৪ ওভারে ২০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ভারত বিপদে পড়ে। পাওয়ার প্লের ষষ্ঠ ওভারে ফাহিমকে চার-ছক্কায় ১১ রান নিয়ে সেই পরিস্থিতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠেন তিলক ভার্মা।
আবরার আহমেদের করা নবম ওভারে ডিপ মিডে ক্যাচ তুলেছিলেন সঞ্জু স্যামসন। কিন্তু ব্যক্তিগত ১২ রানে থাকা এই ব্যাটারের একেবারে সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করে বসেন হুসাইন তালাত। সেটাই বিপদের তিরটা পাকিস্তানের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। এরপর তিলক-স্যামসন মিলে গড়েম বোঝাপড়ার জুটি। রান নিয়ে প্রান্ত বদল করেছেন, সুযোগমতো হাঁকিয়েছেন বাউন্ডারি। ৫৭ রানে সেই জুটি ভেঙ্গেছেন আবরার, ব্যক্তিগত ২৪ রানে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন স্যামসন।
ভারতের ওপর প্রয়োজনীয় রানরেটের চাপ বাড়ছিল। রউফের করা ১৫তম ওভারে ২ চার ও এক ছক্কায় ১৭ রান নিয়ে তা থেকে কিছুটা মুক্তি দিয়েছেন তিলক। ৪১ বলে ব্যক্তিগত ফিফটিও পেয়ে যান এই বাঁহাতি ব্যাটার। পরের ওভারে আবরার ১১ রান দিলে ৪ ওভারে ভারতের আর ৩৬ রান প্রয়োজন হয়। শেষদিকে রোমাঞ্চ ছড়ায় দুবের আউটে। তবে তিলকের সঙ্গে তার ৬০ রানের জুটি ভারতের কাজটা সহজ করে ফেলেছিল। শেষ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ১০ রানের। চার-ছক্কায় তিলক ২ বল হাতে রেখেই ভারতের জয় নিশ্চিত করলেন।
এদিকে এশিয়া কাপের শিরোপা জয়ী ভারত ট্রফি ছাড়াও ৩ লাখ ডলার (প্রায় ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা) আর রানার্স-আপ দল পাকিস্তান পাচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার (যা প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা)।