জাতীয় ক্রিকেট দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঝামেলাসহ নানান কারণেও আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটা ২০২৩ ভারত বিশ্বকাপে। ভারতে বিশ্বকাপেই উঠেছিল শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ। ২০২৩ এর শেষ সময়ে এসে আলোচনার তুঙ্গে ছিল নাসুম আহমেদ ইস্যু। টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে টাইগার এই ক্রিকেটারকে ‘শারীরিক হেনস্থার’ অভিযোগ উঠে খোদ হেড কোচের বিরুদ্ধে। মেজাজ হারিয়ে ড্রেসিংরুমেই এই ক্রিকেটারকে চড় দিয়েছিলেন কোচ হাথুরুসিংহে। তখন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন লঙ্কান এই কোচ। ৫ আগস্ট পরবর্তী বিসিবির দায়িত্বে আসা ফারুক আহমেদের বোর্ডে লঙ্কান এই কোচ ছাঁটাই হন। সেসময় বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছিলেন, ‘একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটারকে আপনি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে পারেন না। সে কারণে যে শাস্তি পেতে হয়, সেটাই হচ্ছে (ছাঁটাই)। এটা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। এখন হয়েছে, আমি খুশি।’ অসদাচরণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করে বিসিবি। সেসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন লঙ্কান কোচ। অস্ট্রেলিয়ার কোড স্পোর্টসের সঙ্গে আলাপকালে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে জানালেন এমন কিছুই হয়নি সেই বিশ্বকাপে। ব্যাটারদের গ্লাভস নিয়ে যেতে নাসুমের পিঠে আলতো হাতে ইশারা করার কথা প্রকাশ্যে এলেও অভিযোগগুলো পুরোপুরি উড়িয়ে দেন লঙ্কান এই কোচ। তাতে সায় দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক ব্যাটিং কোচ নিক পোথাস। চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ভাষ্য, ‘আমি কখনোই কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে ঝগড়া করিনি। নিজের আবেগ কখনো খেলোয়াড়দের সামনে প্রকাশ করিনি। হতাশা থেকে হয়তো আমি ডাস্টবিন ছুঁড়ে ফেলেছি- যেকোনো কোচের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু যা হয়েছে, তার থেকে এটা একেবারেই আলাদা। এটা আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।’ বিসিবির বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের প্রতি অভিযোগও করেছেন হাথুরুসিংহে, ‘জানি না অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত আমি কত সুযোগ মিস করেছি। তারা শুধু আমার চুক্তি বাতিল করার চেষ্টা করেছে। এটা নতুন সভাপতির (ফারুক আহমেদ) পূর্বপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত ছিল।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ওপর নিজের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার গুরুতর অভিযোগও করেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, ‘ক্রিকেট আমার সবকিছু। কারণ এটাই আমার ক্যারিয়ার।
তারা আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে উল্টো অভিযোগ এনে আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছে।’ হাথুরুসিংহে বলেছেন, ‘আমার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সিইওর শেষ কথা ছিল, আমার চলে যাওয়া উচিত। সে বলেছিল, ‘বোর্ডের কাউকে বলার দরকার নেই, আপনার কি টিকিট আছে?’ এটি আমার জন্য একটি সতর্কতা সংকেত ছিল। তখনই আমি একটু ভয় পেয়ে যাই।’ নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন তিনি, ‘সাধারণত সেই দেশে বাইরে বের হলে আমার একজন ড্রাইভার এবং একজন গানম্যান সঙ্গে থাকতো। সে বলেছিল, ‘আজ কি আপনার গানম্যান ও ড্রাইভারকে এনেছেন?' আমি বললাম, না, 'শুধু ড্রাইভার আছে।’ তারপরই আতঙ্ক আরও বেড়ে যায় হাথুরুসিংহের, ‘আমি সরাসরি ব্যাংকে গিয়েছিলাম, দেশ ছাড়ার টাকা তোলার চেষ্টা করছিলাম।
আমি যখন ব্যাংকে ছিলাম তখন টিভিতে একটি ব্রেকিং নিউজ প্রচার হচ্ছিল; ‘চন্ডিকাকে বরখাস্ত করা হয়েছে, একজন খেলোয়াড়কে লাঞ্ছিত করার কারণে।’ ওই সময় ব্যাংক ম্যানেজার এগিয়ে আসেন, ‘যখন এই খবর সামনে এলো, তখন ব্যাংক ম্যানেজার বললেন, ‘কোচ, আমাকে আপনার সঙ্গে যেতে হবে। রাস্তায় মানুষ আপনাকে দেখলে সেটা আপনার জন্য নিরাপদ নয়।’ বিমানবন্দরেও নিজেকে গোপন রেখেছিলেন হাথুরুসিংহে, ‘তখন আমি আতঙ্কিত, কারণ আমাকে দেশ থেকে বের হতে হবে। আমার এক বন্ধু আমাকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মধ্যরাতের ফ্লাইট ধরতে বিমানবন্দরে নিয়ে গিয়েছিল। আমি টুপি ও হুডি পরেছিলাম। অনিরাপদ লাগছিল নিজেকে।’