ওয়ানডে সিরিজে হার দিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলংকাকে হারিয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরেছে টাইগাররা।
শনিবার দ্বিতীয় ম্যাচে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ অলআউট হয় ২৪৮ রানে। জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে টার্গেট ছিল ২৪৯ রান। ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের বোলিং আক্রমনে শ্রীলংকা ৪৮.৫ ওভারে ২৩২ রানে অলআউট হলে বাংলাদেশ জয় পায় ১৬ রানে।
বাংলাদেশের এই জয়ের নায়ক তানভির ইসলাম। তানভির একাই ৫ উইকেট নিয়ে দলকে জয়ী করতে বড় অবদান রাখেন। জয়ের জন্য শ্রীলংকার সামনে ২৪৯ রানের টার্গেটটা সহজই ছিল। তবে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলংকা। ব্যাট হাতে দলকে লড়াকু স্কোর এনে দেওয়ার পর বল হাতেও শুরুর আঘাতটা করেন তানজিম হাসান সাকিব। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই পাথুম নিশাঙ্কাকে ৫ রানে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন এই পেসার। ৬ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর কুশল মেন্ডিস ও নিশান মাদুশকার ব্যাটে এগিয়ে যায় শ্রীলংকা। কুশলের ঝড়ো ব্যাটিংয়েই দ্রুত স্কোরবোর্ডের রান উঠতে থাকে। ২০ বলে ফিফটির দেখা পান তিনি। এই জুটিতেই অষ্টম ওভারে স্বাগতিকদের স্কোর ছাড়ায় পঞ্চাশ। দলীয় ৬৯ রানে এই ঝড়ো জুটিটি ভাঙেন তানভির ইসলাম। মাদুশকারকে তাওহিদ হৃদয়ের তালুবন্দি করান তানভির। মাদুশকা আউট হন ১৭ রানে। তার ২৫ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার। দলীয় ৮২ রানে শ্রীলংকা হারায় তৃতীয় উইকেট। এবার কুশল মেন্ডিসকে এলবি আউট করে বিদায় করেন তানভিরই। তবে আউট হওয়ার আগে মেন্ডিস করেন ৫৬ রান। ২০ বলে তুলে নেন ফিফটি। এরআগে মাদুশকাকে নিয়ে তিনি যোগ করেন ৬৯ রান। দলীয় ৯৯ রানে শ্রীলংকার আরো একটি উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা। প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কাকে বিদায় দিয়ে দলকে ম্যাচে ফিরান শামীম হোসেন। ১৭ বলে ৬ রান করা লঙ্কান অধিনায়ককে তানভিরের তালুবন্দি করান শামীম। ফলে শ্রীলংকা ৯৯ রানে হারায় চতুর্থ উইকেট। দলীয় ১২৬ রানে আবার সফল আঘাত তানভির ইসলামের। এবার তানভির তুলে নেন কামিন্দু মেন্ডিসের উইকেট। তানভিরের বলে মিরাজকে ক্যাচ দেয়ার আগে তিনি করেন ৩৩ রান। দলীয় ১২৬ রানে প্রথম ৫ উইকেট নিয়ে দারুণ ভাবে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। দেখতে থাকে জয়ের স্বপ্ন। তবে জেনিথ লিয়ানাগের সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন দুনিথ ভেল্লালাগে। কিন্তু দলীয় ১৩২ রানে ভেল্লালাগেকে (১) নিজের চতুর্থ শিকারে পরিণত করেছেন তানভীর ইসলাম। তাতে ১৩২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে আরও বিপদে স্বাগতিক দল। শেষ পর্যন্ত ২৩২ রানে অরআউট হয় শ্রীলংকা। বাংলাদেশ জয় পায় ১৬ রানে।
এরআগে, সিরিজ বাচানোর ম্যাচে শ্রীলংকাকে বড় টার্গেট দিতে পারেনি বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ২৪৮ রানে। ফলে সিরিজ জয়ের জন্য শ্রীলংকা পায় ২৪৯ রানের সহজ টার্গেট। বাংলাদেশের হয়ে পারভেজ হোসেন ইমন, তাওহিদ হৃদয় ও তানজিম হাসান সাকিব ছাড়া কোন ব্যাটারই ভালো রান করতে পারেননি। দলের পক্ষে ইমন ফিফটিসহ সর্বোচ্চ ৬৭ রান ও তাওহিদ ফিফটিসহ ৫১ রান করেন। তানজিম সাকিব ৩৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। কলম্বোর আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং বেছে নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দলীয় সংগ্রহ ১০ স্পর্শ করতেই বিদায় নেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। মাত ৭ রান করেন এই ওপেনার। এরপর ৬৩ রানের জুটি গড়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন পারভেজ হোসেন ইমন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ইমন ফিফটি তুলে নিলেও ১৯ বলে ১৪ রান করে বিদায় নেন শান্ত। এরপর তাওহিদ হৃদয় ও ইমন মিলে আরেকটি জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। এটি বেশিদূর এগোতে পারেনি। কারণ ফিফটির পর ইনিংস বড় করতে পারেননি ইমন। শ্রীলংকার স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ৬৭ রানে। পাঁচে নামা মেহেদী হাসান মিরাজও পারেননি টিকে থাকতে। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ১০ বলে করেছেন ৯ রান। বিপর্যয়ে হাল ধরেছিলেন শামিম ও হৃদয়। কিন্তু তারাও জুটি ধরে রাখতে পারেননি। শামিম ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিলেও করতে পারেন ২২ রান। জাকের আলীও উইকেটে সেট হয়েছিলেন। কিন্তু দলকে ২০০ পার করার পর তারও বিদায় ঘটে ব্যক্তিগত ২২ রানে। তবে হৃদয় ফিফটি তুলে নেন। কিন্তু তানজিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে ৫১ রান করে রানআউট হয়ে ফেরেন হৃদয়। এই পরিস্থিতিতে সাকিব নিজেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। খেলেন ২১ বলে অপরাজিত ৩৩ রানের ঝড়ো ইনিংস। কিন্তু অপরপ্রান্তে আর কেউ সঙ্গ দিতে না পারায় দলকে আড়াইশ পার করাতে পারেননি তিনি। বাংলাদেশের ইনিংসও থামে ২৪৮ রানে ৪৫.৫ ওভারেই। শ্রীলংকার আসিথা ৪টি ও হাসারাঙ্গা ৩ উইকেট নেন।