গত জুনে শ্রীলংকার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। টাইগারদের এরপর কোনো টেস্ট ম্যাচ হয়নি। তবে ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আজ টেস্ট খেলতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই দলই প্রায় অর্ধবছর পর খেলতে নামছে লাল বলের ক্রিকেট। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট হবে ঢাকায়। এই টেস্টে মাঠে নামার আগে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সামনে দায়িত্ব দুটো। দলে স্থিতি ফিরিয়ে আনা এবং নিজের নেতৃত্বে টেস্ট সংস্কৃতিকে নতুন পথে নেওয়া। গত জুনের পর থেকে বাংলাদেশ খেলেছে ২৮টি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। আয়ারল্যান্ড খেলেছে ৯টি সাদা বলের ম্যাচ, তাদেরও টেস্ট অনভিজ্ঞতা স্পষ্ট। তবে বাংলাদেশের লক্ষ্য থাকবে একটাই। প্রতিপক্ষ কে না ভেবে জয় তুলে নেওয়া। সিলেটের উইকেটে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং সবসময়ই সুবিধাজনক। এ মাঠে প্রথমে ব্যাট করা দলগুলোর গড় ইনিংস ২৬৬ রান, যা সাধারণত ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে। আজ রোদ ঝলমলে আবহাওয়া ও বিকেলের দিকে তুলনামূলক ঠান্ডা তাপমাত্রা থাকবে বলে পূর্বাভাস। এই টেস্টে বাংলাদেশ দলে ওপেনিংয়ে ফিরে আসছেন মাহমুদুল হাসান জয়। তার সঙ্গী হতে পারেন শাদমান ইসলাম, যিনি চলতি বছরে ৪০-এর ওপর গড় নিয়ে খেলছেন। মাঝের সারিতে অভিজ্ঞ মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস থাকছেন ভরসার নাম। সিলেটের উইকেট ঐতিহ্যগতভাবে স্পিন সহায়ক। তাই মূল ভরসা থাকবে তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজের ওপর। পাশাপাশি কিছুটা বাউন্স থাকায় এবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। নতুন মুখ হিসেবে অভিষেক হতে পারে তরুণ বামহাতি স্পিনার হাসান মুরাদের। আয়ারল্যান্ডও ২০২৫ সালে মাত্র একটি টেস্ট খেলেছে। এবার তাদের দলটি অভিজ্ঞতার ঘাটতিতে ভুগলেও চমক দেখানোর সামর্থ্য রাখে। অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি এবং অভিজ্ঞ পল স্টার্লিং ও হ্যারি টেক্টর দলের ব্যাটিংয়ের মূল স্তম্ভ। পাশাপাশি কার্টিস ক্যাম্ফার, লরকান টাকার ও অ্যান্ডি ম্যাকব্রিন দলকে ভারসাম্য দিচ্ছেন। চারজন ক্রিকেটার কেড কারমাইকেল, স্টিফেন ডোহেনি, জর্ডান নীল ও লিয়াম ম্যাককার্থি প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে ডাক পেয়েছেন। লেগস্পিনার গ্যাভিন হোয়িও থাকতে পারেন অভিষেকের অপেক্ষায়। গত জুনে টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ওয়ানডে নেতৃত্ব হারানোর পর তিন ফরম্যাটে আলাদা অধিনায়কের জটিলতাকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছিলেন তিনি। তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে সেই দায়িত্বে ফিরলেন শান্ত। প্রথম টেস্টের আগেরদিন শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে শান্ত তার এই প্রত্যাবর্তনের পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন।

নেতৃত্বে ফেরা প্রসঙ্গে শান্ত বলেন, ‘তিন ফরম্যাটে আলাদা অধিনায়ক থাকায় আমি আগেই সরে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনায় সব পরিষ্কার। আমি কনফিডেন্ট, কোনো জটিলতা হবে না। অন্য দুইজন ক্যাপ্টেনের (লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ) সঙ্গেও কথা হয়েছে। এখন আমাদের মধ্যে ভালো যোগাযোগ আছে। এ কারণেই মনে হয়েছে (ফেরার) সময়টা সঠিক।’ অধিনায়কত্ব ছাড়ার পরের সময়টাকেও তিনি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। শান্ত যোগ করেন, ‘এই সময়টায় ভালোই ছিলাম। এখন বোর্ডের যে যোগাযোগ, যে মনোভাব তা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি বিশ্বাস করি দলই সবার আগে। বোর্ডে থাকা সাবেক ক্রিকেটারদের চিন্তাধারা আমার ভালো লেগেছে। তাই ফিরেছি।’ এই সিরিজেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে মুশফিকুর রহিম শততম টেস্ট খেলার মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছেন (দ্বিতীয় টেস্টে)। সতীর্থের এই অর্জনকে জয় দিয়ে উদযাপন করতে চান তিনি। শান্ত বলেন, ‘মুশফিক ভাইকে নিয়ে আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করছে। তার অভিজ্ঞতা আমাদের ড্রেসিং রুমে ভীষণ কাজে দেয়। আমরা চাই, দুইটা টেস্টই যেন জয়ের মাধ্যমে উদযাপন করতে পারি।’ গেল কয়েকমাস ধরে কোচ সালাউদ্দিনের অধীনে ব্যাটাররা পারফর্ম করতে পারছেন না। যে কারণে সমালোচনার তীব্র আগুনে পুড়ছিলেন তিনি। সেই চিঠিতে কারণ হিসেবে সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, ‘সিনিয়র সহকারী কোচ’ হিসেবে দায়িত্বটা উপভোগ করছেন না। তবে টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানালেন, সালাউদ্দিনের সঙ্গে প্রত্যেক ক্রিকেটার কাজ করাটা বেশ উপভোগ করছিলেন। এ নিয়ে শান্ত বলেন, ‘এটা তো উনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। বোর্ডের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে, এ নিয়ে আমার ধারণা নেই। এটা সালাউদ্দিন স্যার বলতে পারবেন। আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা হয়েছে। আমি আশা করি বোর্ড ও তার মধ্যে ভালো আলোচনা হবে।’ সালাউদ্দিনের সঙ্গে কাজ করা নিয়ে তিনি বলেন, ‘যতদিন কাজ করেছি উপভোগ করেছি। স্যার প্রত্যেক ক্রিকেটারকে সমানভাবে দেখার চেষ্টা করেন, সবাইকে প্রাধান্য দেন, যার যার ঘাটতি অনুযায়ী কাজ করেন। এই জায়গায় একটা গ্যাপ থেকে যায়। বাইরে থেকে অনেক কিছু মনে হয়, আমরা যা শুনছি, সব কিছুর সত্যতা নেই। এখন পর্যন্ত টেস্টে একবার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড। ২০২৩ সালের এপ্রিলে মিরপুরের ঐ টেস্টে ৭ উইকেটে জিতেছিল টাইগাররা। টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি ও হাফ-সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের জয়ে অবদান রাখেন মুশফিক। প্রথম ইনিংসে ১২৬ এবং পরের ইনিংসে অপরাজিত ৫১ রান করেন তিনি। ২০২৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩টি টেস্ট খেলেছে আয়ারল্যান্ড। তিন ম্যাচই জিতেছে তারা। আফগানিস্তানকে একবার ও জিম্বাবুয়েকে ২ টেস্টে হারায় আইরিশরা। গত ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ টেস্টে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়েকে ৬৩ রানে হারায় তারা।