মো. রফিকুল ইসলাম : বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে গত বুধবার ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট খেলতে নামেন মুশফিকুর রহিম। গতকাল নিজের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এবার কিংবদন্তিদের কাতারে নিজের নামও লিখিয়েছেন। বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান স্পর্শ করলেন এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। টেস্ট ক্রিকেটে মুশফিক গড়লেন নতুন ইতিহাস। ঢুকলেন শততম টেস্টের শত রানের ক্লাবে। যেখানে জাভেদ মিয়াদাঁদ থেকে শুরু করে হালের ডেভিড ওয়ার্নার পর্যন্ত আছেন। মুশফিক বিশ্বের ১১তম ক্রিকেটার হিসেবে নিজের শততম ম্যাচে সেঞ্চুরি গড়ার রেকর্ড গড়লেন। গতকাল মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে দ্বিতীয় দিনের ব্যাটিংয়ে নামেন মুশফিক। দ্বিতীয় ওভারে জর্ডান নেইলের বল লেগ স্টাম্পে ঠেলে ১৯৫ বলে শতক পূর্ণ করে নিজের প্রথাগত দুহাত উঁচিয়ে উদযাপনে মাতেন টেস্টে বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটার। মুশফিক টেস্টে এর আগে সেঞ্চুরি করেছেন ১২টি। সেসবের তিনটিকে পরিণত করেছেন ডাবল সেঞ্চুরিতে। তবে ১৩তম সেঞ্চুরি নিশ্চিতভাবেই সবচেয়ে আলাদা। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলে এমনিতেই ইতিহাস গড়েছেন। সেই উপলক্ষ সেঞ্চুরি দিয়ে রাঙিয়ে ঢুকে গেলেন এমন এক এলিট ক্লাবে যেখানে ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে তার আগে ছিলেন কেবল দশজন।

মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনের শেষ সেশনে খেলার যতই সময় গড়াচ্ছিল, ততই মুশফিকুর রহিমের সতীর্থ, বিসিবি ম্যানেজমেন্ট এবং দর্শকদের মুখে হাসি ফুটছিল। কারণ ঐতিহাসিক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে মুশফিক। নিজের শততম টেস্ট ম্যাচে শত রানের দ্বারপ্রান্তে। তবে অপেক্ষা বাড়লো। দিনের আলো ফুরিয়ে এলে ৯৯ রান নিয়ে গতকাল সকাল শুরু করেছেন মুশফিক। সঙ্গী লিটন দাস। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে মুশফিক ৯৯ রানে অপরাজিত অবস্থায় ছিলেন। 'নার্ভাস নাইনটি' পেয়ে বসেছিল মুশফিককে। দিনের শুরুটা করলেন মেডেন ওভার দিয়ে। অপেক্ষা বাড়লো। তবে সেশনের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলেই পৌঁছে গেলেন ঐতিহাসিক মুহূর্তে। মুশফিকের আগে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করা নামগুলো বিশ্ব ক্রিকেটে অনেক বড়। ১৯৬৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই রেকর্ডে প্রথম নাম লেখান ইংল্যান্ডের কলিন কাউন্ড্রে। ১৯৮৯ সালে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরিতে তাতে যোগ দেন পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াঁদাদ। ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শততম টেস্টে ১৪৯ রানের ইনিংস খেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তি গর্ডন গ্রিনিজ। ২০০০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের শততম ম্যাচে ১০৫ রানের ইনিংস খেলেন ইংল্যান্ডের সাবেক উইকেটকিপার ব্যাটার আলেক স্ট্রুয়ার্ট। ২০০৫ সালে পাকিস্তানের ইনজামাম উল হক ভারতের বিপক্ষে শততম টেস্টে করেন ১৮৪ রান। রিকি পন্টিং দুইবার নাম লেখান এই তালিকায়। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজের শততম টেস্টের দুই ইনিংসেই করেন সেঞ্চুরি। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ ২০১২ সালে নিজের শততম টেস্ট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ১৩১ রান। আরেক প্রোটিয়া ব্যাটার হাশিম আমলা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জোহেন্সবার্গে তার শততম টেস্ট রাঙান ১৩৪ রানের ইনিংস খেলে। ইংল্যান্ডের জো রুট ও ডেভিড ওয়ার্নার আরেকটু আলাদা। এই দুজনের নিজের শততম টেস্টে করেন ডাবল সেঞ্চুরি। ২০২১ সালে ভারতের বিপক্ষে চেন্নাইতে এই কীর্তি গড়েন রুট। ওয়ার্নার ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করেন ঠিক ২০০ রান।