বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনীত পরিচালক ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে এক অফিস আদেশে ফারুক আহমেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছে এনএসসি। ফলে তিনি আর বিসিবির পরিচালক নন। এর আগে, বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের নয় সদস্যের মধ্যে আটজন তার বিরুদ্ধে আনাস্থা প্রকাশ করেন। বিসিবির পরিচালক না থাকায় কার্যত সভাপতির পদও শূন্য হয়ে গেছে। গতকাল নতুন সভাপতি হয়েছে আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তবে এ ঘটনায় ফারুক আহমেদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তার অভিযোগ, তাকে অন্যায়ভাবে ও জোরপূর্বক পদচ্যুত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি এরই মধ্যে আইসিসিকে বিষয়টি জানিয়েছি। আমি নিশ্চিত, তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। খুব শিগগিরই বিসিবিতে আইসিসির পক্ষ থেকে চিঠি আসবে।’ তিনি শ্রীলংকার উদাহরণ দিয়ের বলেন, ‘দুই বছর আগে শ্রীলঙ্কায় সরকার পুরো ক্রিকেট বোর্ড ভেঙে দিয়েছিল। তখন আইসিসি দ্রুত হস্তক্ষেপ করে আগের বোর্ডকে পুনর্বহাল করেছিল। আমার বিশ্বাস, এখানেও একই রকম পদক্ষেপ আসবে ’ তবে বিসিবির অধিকাংশ পরিচালকই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। শুধুমাত্র তার আত্মীয় আকরাম খান ছাড়া বাকি আট পরিচালকই ফারুক আহমেদের বিপক্ষে মত দেন।

বিসিবির পরিচালক মাহবুব আনাম ও ইফতিখার রহমান মিঠু স্পষ্ট বলেন,‘ যেখানে সরকারই তার ওপর আস্থা হারিয়েছে, সেখানে আমরা কীভাবে তার পাশে থাকি?’ বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিসিবির পরিচালক হিসেবে ফারুক আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। ফলে যে প্রক্রিয়ায় তিনি বোর্ডে এসেছিলেন, সেটি এখন বাতিল। স্বাভাবিকভাবেই পরিচালক পদ হারানোয় তিনি আর সভাপতি পদেও বহাল থাকতে পারছেন না। তবে পদচ্যুতির বিষয়টি কোনোভাবেই মানতে পারছেন না ফারুক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন বলে খবর। তার দাবি, তার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে, তাকে জোরপূর্বক পদচ্যুত করা হয়েছে। ফারুক বলেন, ‘আমি আনচ্যালেঞ্জড যেতে দেব না। ফাইট করে যাব। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেখব। আমার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। আমি আইসিসিতে জানিয়েছি। এরই মধ্যে সেক্রেটারির মাধ্যমে আইসিসি সভাপতি জয় শাহকে পুরো ব্যাপারটি জানিয়েছি। এছাড়া আইসিসির অন্তত ৫-৭ জন পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবগত করেছি।’

গত ২৮ মে রাতে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার সঙ্গে ফারুক আহমেদের একান্ত বৈঠকের পর তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সরকার আর তাকে বিসিবির সভাপতি হিসেবে দেখতে চায় না। এর ঠিক পরপরই আসে পরিচালকদের আনাস্থা ও এনএসসির মনোনয়ন প্রত্যাহার। এর আগে ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যহারের অভিযোগ এনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাছে অনাস্থার চিঠি পাঠায় বিসিবির ১০ পরিচালকের ৮ জন। এই ঘটনার পর গতকাল সকাল থেকেই খবর চাউর হয় ফারুক দেশ ছেড়েছেন। কিন্তু এমন খবর প্রকাশের পর ফারুক নিজেই জানালেন ভিন্ন কথা। দাবি করেছেন, তার দেশ ছাড়া নিয়েও একটি মহল গুজব ছড়াচ্ছে! এক ভিডিও বার্তায় ফারুক নিজেই নিশ্চিত করেছেন তিনি দেশ ছাড়েননি। গুজবে কান না দিতেও অনুরোধ করেছেন তিনি। দেশ ত্যাগের গুঞ্জনের ফারুক বলেন, ‘পুরোপুরি মিথ্যা কথা। যারা আমাকে নিয়ে নাটক তৈরি করেছে এতদিন, তাদেরই একটা নাটকের শেষ অংশ মনে হচ্ছে এটা। আমি দেশেই আছি, গুজবে কান দিবেন না। আমি একটি সংবাদ সম্মেলন করার চেষ্টা করছি।’ দেশ ছাড়ার গুজবে ফোন চালু করার পাশাপাশি বেশ কিছু গণমাধ্যমেও বিবৃতি দিয়েছেন ফারুক আহমেদ। সেখানে ফারুক অভিযোগ করেন, একটি মহল তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, ‘এটা পুরোপুরি মিথ্যা কথা। যারা আমাকে নিয়ে এতদিন নাটক তৈরি করেছে, এটা তাদেরই একটা নাটকের শেষ অংশ আমার কাছে মনে হচ্ছে। আমি দেশেই আছি। গুজবে কান দেবেন না।’ প্রসঙ্গত, ফারুক আহমেদের বিদেশ যাওয়াটা চূড়ান্ত ছিল। শেষ মুহূর্তে তিনি বিদেশ যাননি। ভোর রাত থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকা এবং তার যাওয়ার পরিকল্পনা অনেকের জানার কারণেই ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করেছে। যদিও খবর প্রকাশের পর তিনি তার ফোন খুলেছেন এবং গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলেছেন।