বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে আজ উৎসবের দিন। টেস্ট মর্যাদা লাভের ২৫ বছর। টেস্ট স্ট্যাটাসের রজতজয়ন্তী। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির রজতজয়ন্তীটাকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। বেশ ঘটা করে পালিত হবে টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির এই মাইলফলক। ফলে এক কেন্দ্র করে ক্রিকেট পাড়ায় একটা উৎসব, উৎসব ভাব। আজ মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে একসঙ্গে হবেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলা ক্রিকেটাররা। তাদের দেয়া হবে বিশেষ ব্লেজার ও সম্মাননা। ২০০০ সালের ২৬ জুন লন্ডনে আইসিসির সভায় ১০ নম্বর টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে টেস্ট মর্যাদা পেয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট খেলার দীর্ঘ লালিত স্বপ্নপূরণ হয়েছিল কোটি বাংলাদেশির। যা ছিল শুধুই স্বপ্ন, সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল ২০০০ সালের নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলার মধ্য দিয়ে। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর দেশের ক্রীড়াকেন্দ্র ঐতিহাসিক ঢাকা স্টেডিয়ামে ভারত অধিনায়ক প্রিন্স অব কলকাতা সৌরভ গাঙ্গুলির সাথে নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের টসের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় টেস্ট খেলুড়ে জাতি হিসেবে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক যাত্রা। পুরো দেশ ও জাতির স্বপ্ন পূরনের সারথী হন ১১ ক্রিকেট যোদ্ধা- শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, মেহরাব হোসেন অপি, হাবিবুল বাশার সুমন, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, আকরাম খান, নাঈমুর রহমান দুর্জয় (অধিনায়ক), আল শাহরিয়ার রোকন, খালেদ মাসুদ পাইলট, মোহাম্মদ রফিক, হাসিবুল হোসেন শান্ত ও বিকাশ রঞ্জন দাস (পরবর্তীতে ধর্মান্তরিত মাহমুদুল হাসান রানা)। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম সারির ক্রিকেটার গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, ফারুক আহমেদ, মিনহাজুল আবেদীন নান্নুরা। অনেক প্রথমের সাক্ষী হয়ে আছেন তারা। কিন্তু মর্যাদার টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে নেই তাদের নাম। দেশের জার্সিতে টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়ায় নিজেদের খুবই ভাগ্যবান মনে করছেন প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম। টেস্ট মর্যাদার রজতজয়ন্তীর আগের দিন গতকাল ধানমন্ডির রিয়া গোপী নারী স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আয়োজন নিয়ে কথা বলেছেন বুলবুল। সাংবাদিকদের বিসিবি সভাপতি বলেছেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে ক্রিকেট থেকে কিছুটা দূরে ছিলাম। তখন ভাবতাম, গত ২৫ বছরে হয়তো ২৫টি বড় আয়োজন হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো, ২৫ বছর পেরিয়ে আমরা এবার প্রথমবারের মতো একটি বড় আয়োজন করছি। এই প্রোগ্রামটি আমরা করছি মূলত দুটি কারণে- এক, টেস্ট ক্রিকেটের ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন; দুই, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেখানে ক্রিকেট কার্যত ঘুমিয়ে ছিল, সেসব জায়গায় একটা তাদেরকে একটা ‘ওয়েকআপ কল’ দেওয়া।’ মাঠের সংকট সমাধানে বিসিবি সভাপতি বেশ কিছু বৈঠক করেছেন বোর্ডের গ্রাউন্ড বিভাগের সঙ্গে। ক্রিকেট উন্নয়নে পুরো দেশেই ক্রিকেট কাঠানোর উন্নয়নের বিকল্প দেখেন না বলে মনে করেন বুলবুল। তার মতে কার্যকরী উদ্যোগের বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যেতে চান তিনি। আগের দিন বিসিবি সভাপতি দেশের সব জেলায় ক্রিকেট উইকেট হিসেবে সিনথেটিক টার্ফ বসানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের ৬৪ জেলায় ৬৪ জন কোচ রয়েছেন। তারা কী অবস্থায় আছেন, সেটি মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে আমরা ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ দেখছি। মিরপুরে বসে সারাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই মাঠপর্যায়ে কাজ করার মতো শক্তিশালী কোচ তৈরি করতে চাই। যেন তারা উপজেলা পর্যায়েও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন এবং সেই কার্যকারিতা আমরা ভবিষ্যতে জাতীয় দলে দেখতে পাই।’ কীভাবে টেস্ট সংস্করণে বাংলাদেশ দল ভালো করতে পারে সেই উদ্যোগ নিয়ে বুলবুল আরও বলেছেন, ‘আমরা অত্যন্ত সফলভাবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। কারণ, টেস্ট ক্রিকেটই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পরিচয়। টেস্ট খেলেই বাংলাদেশ আইসিসির পূর্ণ সদস্য হয়েছে। এই সংস্করণটিকে আমরা আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিতে চাই। টেস্ট ক্রিকেটে যে উন্মাদনা, ক্রিকেটের প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা এবং ক্রিকেটার হওয়ার যে স্বপ্ন এসব বিষয়কে সামনে রেখেই আমরা কাজ করছি এবং সফলভাবেই এগিয়ে চলেছি।’ বিসিবি সভাপতি আমিনুল বলেছেন, ‘আমাদের আগের ক্রিকেটাররা যারা ছিলেন, ফারুক ভাই ছিলেন, আতাহার আলী ভাই ছিলেন, নান্নু ভাই ছিলেনÑ অনেক ক্রিকেটার ছিল যারা টেস্ট খেলার সুযোগ পায়নি। আমরা ওই সময়টায় নিজেদেরকে ভাগ্যবান মনে করতাম যে প্রথম টেস্টে আমরা খেলতে পেরেছিলাম। যদিও আমাদের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষের দিকে ছিলাম, তারপরও আমরা মনে করি ভাগ্যবান।’

টেস্ট খেলার স্বীকৃতি পাওয়ার ২৫ বছর উদযাপন করছে বিসিবি। গতকাল ঢাকাতে ধানমন্ডির রিয়া গোপ মহিলা কমপ্লেক্সে রজতজয়ন্তী উদযাপনে গিয়েছিলেন আমিনুল। আনন্দময় পরিবেশে শিশু কিশোরদের সঙ্গে ব্যাট বল নিয়ে মেতে উঠেন বিসিবি সভাপতি। এই অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হয়েছে প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়কে। যিনি বিসিবির পরিচালক ছিলেন হয়েছিলেন সংসদ সদস্যও। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আড়ালে চলে গিয়েছেন। তাকে নিয়ে আমিনুল বলেছেন, ‘দাওয়াতও দিয়েছে, কলও করা হয়েছে।’ তবে দুর্জয় আসবেন না জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সেই স্কোয়াডে যারা এভেইলেবল আছে, সবাইকে কালকে(আজকে) আমাদের ক্রিকেট বোর্ডে দাওয়াত দিয়েছি। মূলত আমাদের পূর্বের সেই ২৫ বছরের স্মৃতিতে ফিরে যাওয়া। আমাদের সেই ক্রিকেটের বন্ধুত্ব, যাতে অটুট থাকে এবং তাদেরকে সম্মাননা জানানো।’ দেশজুড়ে নানা আয়োজনে রজতজয়ন্তী উদ্যাপনের দুটি কারণও ব্যাখ্যা করেছেন আমিনুল, ‘প্রোগ্রামটা আমরা দুইটা কারণে করেছি, একটা হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটের ২৫ বছর উদ্যাপন। আরেকটা হচ্ছে দেশব্যাপী বহু জায়গায় ক্রিকেট ঘুমিয়ে ছিল, তাদের একটা ওয়াকআপ কল দেওয়া। এটা আমরা অত্যন্ত সফলভাবে করতে পেরেছি।