টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে দাপুটে সাফল্যের পর আজ থেকে শুরু হচ্ছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। চট্টগ্রামের বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ঘিরে দুদলের প্রস্তুতিই ছিল চোখে পড়ার মতো। সাগরিকায় গতকাল অনুশীলনে অংশ নেয় বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড দল। পটস্টে হতাশার পর আইরিশরাও এই সিরিজে ঘুরে দাঁড়িয়ে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক লড়াই উপহার দিতে বদ্ধপরিকর।

টেস্টে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা দ্রুত ফরম্যাট বদলে টি-টোয়েন্টিতেও সেই ছন্দ ধরে রাখতে চায়। বিশেষ করে ওপেনারদের ধারাবাহিকতা, মিডল অর্ডারের দায়িত্বশীলতা এবং স্পিন আক্রমণের সাফল্যÑ সবই আজকের ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে তিন ম্যাচের এই সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য নিজেদের টি-টোয়েন্টি কৌশল ঝালিয়ে নেওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ।

অন্যদিকে টেস্ট সিরিজে ব্যর্থ হলেও সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে নিজেদের শক্তির জায়গা দেখাতে উন্মুখ আয়ারল্যান্ড। গত কয়েক বছরে টি-টোয়েন্টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলায় পরিচিত দলটি বাংলাদেশের কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে অনুশীলনে জোর দিয়েছে। স্পিন মোকাবেলায় বিশেষ প্রস্তুতিও নিয়েছে তারা।

চট্টগ্রামের উইকেট সবসময়ই রানপ্রবণ। তাই ব্যাটসম্যানদের জন্য সুযোগ থাকলেও ম্যাচের ভাগ্য স্পিনারদের ওপরও অনেকাংশে নির্ভর করবে-এমনটাই ধারণা স্থানীয় কোচদের। দুই দলের লক্ষ্য একটাই-জয়ে সিরিজ শুরু করা। আজ সন্ধ্যায় টসের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হবে নতুন লড়াই, আয়ারল্যান্ডের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত টাইগাররা কতটা সফল হয় সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

পরিসংখ্যান ও শক্তির ভারসাম্য : টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যানে বরাবরই আয়ারল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এই ফরম্যাটে দুই দল মোট ৮টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে ৫টিতে এবং আয়ারল্যান্ড জিতেছে ২টিতে। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। ঘরের মাঠে এবং সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজের জয় বাংলাদেশের মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশের শক্তি: ঘরের মাঠে স্পিন সহায়ক কন্ডিশনে বাংলাদেশের স্পিনাররা, বিশেষ করে লেগ-স্পিনার রিশাদ হোসেন, আইরিশ ব্যাটারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারেন। এছাড়া লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয় এবং ফর্মে থাকা ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ব্যাটিং বিভাগে নির্ভরতা যোগাবেন।

আয়ারল্যান্ডের চ্যালেঞ্জ: টেস্ট সিরিজের হতাশা ভুলে টি-টোয়েন্টিতে পল স্টার্লিং এবং অভিজ্ঞ ব্যাটার হ্যারি টেকটর ব্যাট হাতে দলের মূল ভরসা। তবে তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে বাংলাদেশের স্পিনারদের সামাল দেওয়া এবং ধারাবাহিক পারফর্ম করা।

অধিনায়কের বার্তা ও দলীয় বিতর্ক : সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ দলের দল নির্বাচন নিয়ে একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু এবং টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাসের মধ্যে খেলোয়াড় শামীম হোসেন পাটোয়ারীকে দলে না রাখা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। লিটন দাস দল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করলেও প্রধান নির্বাচক জানিয়েছেন, বোর্ড তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, আয়ারল্যান্ড তাদের সেরা পারফর্মারদের নিয়েই শক্তিশালী দল গঠনের চেষ্টা করছে। বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য এই সিরিজটি তাদের কাছে কেবল একটি ম্যাচ জেতার সুযোগ নয়, বরং উপমহাদেশের কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়ার একটি বড় সুযোগ।

সিরিজটি কেন গুরুত্বপূর্ণ? : আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার এটিই বাংলাদেশের জন্য শেষ আন্তর্জাতিক অ্যাসাইনমেন্টগুলোর মধ্যে একটি। দলীয় কম্বিনেশন ঠিক করা, নতুন খেলোয়াড়দের পরীক্ষা করা এবং বিশেষ করে পাওয়ার-প্লে ও ডেথ ওভারে নিজেদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠা—এই সিরিজে বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য থাকবে।

বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে চোখ বাংলাদেশের : টেস্ট সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করার পর এবার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে তিন ম্যাচের এই সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য নিজেদের টি-টোয়েন্টি কৌশল ঝালিয়ে নেওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ।

ট্রফি উন্মোচন ও প্রস্তুতি : গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেল বে ভিউতে এক জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে সিরিজের কাঙ্ক্ষিত ট্রফি উন্মোচন করা হয়। দুই দলের অধিনায়ক-বাংলাদেশের লিটন দাস এবং আয়ারল্যান্ডের পল স্টার্লিং-এই সময় উপস্থিত ছিলেন। ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান থেকেই স্পষ্ট হয়েছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিজেদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে দুই দলই এই সিরিজকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে।