বাংলাদেশের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এক টেস্টে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট নেওয়ার বিরল কীর্তি গড়লেন মেহেদী হাসান মিরাজ। গতকাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরাজ সেঞ্চুরিসহ করেন ১০৪ রান। সেই সাথে বল হাতে নেন ৫ উইকেট। মিরাজের আগে এই কীর্তি গড়েন সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজী। সাকিবের এই কীর্তি আছে দুইবার। সব মিলিয়ে টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছে ৩৯ বার। শুধু তাই নয়, একই দিনে দুই হাজার রানের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন ডানহাতি এই অলরাউন্ডার। সিলেটে প্রথম টেস্টে ১০ উইকেট নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। বাংলাদেশের অন্য ব্যাটারদের মতো তিনিও ব্যাট হাতে দুই ইনিংসে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তবে চট্টগ্রামে ভিন্ন মেজাজে দেখা গেলো এই অলরাউন্ডারকে। ৫২টি টেস্ট খেলে মিরাজের সেঞ্চুরি ছিল মাত্র একটি। অবশেষে চার বছরের অপেক্ষার প্রহর শেষ করেছেন সেঞ্চুরি করে। এটা তার টেস্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।

গতকাল সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পথে দারুণ একটি রেকর্ড গড়েছেন মিরাজ। দুই হাজার রানের মাইলফলক ও দুইশর বেশি উইকেট- টেস্টে এই ডাবলের ক্লাবে নাম লেখালেন তিনি। ৫৩ টেস্টে এই কীর্তি গড়ে চতুর্থ দ্রুততম অলরাউন্ডার হিসেবে এমন বিরল রেকর্ড গড়লেন তিনি। মিরাজের সঙ্গে যৌথভাবে এই তালিকায় চারে রবীন্দ্র জাদেজা। ৪২ ম্যাচে ২০০০ রান ও ২০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে টেস্টে এই রেকর্ড দ্রুততম করার কীর্তি ইয়ান বোথামের। দুইয়ে থাকা ইমরান খান ও কপিল দেব দুজনেরই এই কীর্তি গড়তে লেগেছে ৫০ টেস্ট। আর টেস্টের এই বিরল রেকর্ড করতে অশ্বিনকে খেলতে হয়েছে ৫১ টেস্ট। বাংলাদেশের হয়ে এই কীর্তি আর আছে কেবল সাকিবের। তার লেগেছিল ৫৪ ম্যাচ, মিরাজের একটি কম। তার মানে এই ডাবলে দেশের হয়ে মিরাজই এখন দ্রুততম। শুধু এই রেকর্ড ছুঁয়েই থেমে থাকেননি মিরাজ, ২০২১ সালের পর ছুঁয়েছেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। মিরাজের সেঞ্চুরির পেছনে বড় অবদান আছে তানজিম হাসান সাকিবের।

প্রথম সেশন থেকেই মিরাজকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন এই পেসার। দুজনের অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেট জুটিতে এসেছে ৯৬ রান। তানজিম ৪১ রান করে আউট হয়েছেন। তার আউটের কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেরেন মিরাজও। তার আগে ১৪৩ বলে সেঞ্চুরি ছোঁয়া মিরাজ থামেন ১০৪ রান করে। চট্টগ্রামেই তিনি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ব্যাটিংয়ে দারুন সেঞ্চুরির পর বল হাতেও আলো ছড়িয়েছেন মিরাজ। সিলেটে দশ উইকেট নেওয়া মিরাজ চট্টগ্রামে নিলেন ৫ উইকেট। তার ঘূর্ণি জাদুতেই মূলত ১১১ রানে জিম্বাবুয়ের ইনিংস থেমে যায়। ৩২ রান খরচায় তার শিকার পাঁচটি উইকেট। যা মিরাজের টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৩ ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার। সিলেটে হার দিয়ে সিরিজ শুরুর পর চট্টগ্রাম টেস্টে দাপুটে পারফরম্যান্সে জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়। মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামদের তোপের সামনে সফরকারীরা দাঁড়াতেই পারেনি। জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ও ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে হারানোর পথে রেকর্ড গড়েছেন মিরাজ। এ নিয়ে তিনি সাকিব আল হাসানের ১১ বছরের পুরোনো কীর্তিতে ভাগ বসালেন। এখন পর্যন্ত একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ফাইফার নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের দুজনের। সর্বোচ্চ দুইবার এই কীর্তি গড়েছিলেন সাকিব।

এ ছাড়া সোহাগ গাজীর এমন নজির রয়েছে একবার। সাবেক দুই তারকা ক্রিকেটারের রেকর্ডটির বয়স ১১ বছর হয়েছে। সাকিব ২০১৪ সালে সর্বশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একই টেস্টে ব্যাট হাতে ১৩৭ রানের পাশাপাশি বল হাতে দুই ইনিংসেই ফাইফার নিয়েছিলেন।

সেঞ্চুরির পাশাপাশি দুই ইনিংসেই পাঁচ উইকেট শিকারের রেকর্ডটি টাইগার ক্রিকেটার হিসেবে কেবল সাকিবের রয়েছে। সাবেক এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার আরেকবার টেস্টে ফাইফার ও সেঞ্চুরি করেন ২০১১ সালে, মিরপুরে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। অন্যদিকে, সোহাগ গাজী ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১০১ রান এবং ৭৭ রানে ৬ উইকেট শিকার করেন। এতদিন একই টেস্টে ফাইফার ও সেঞ্চুরির কীর্তি ছিল এই দুজনের। এরপর ১১ বছর আর কেউ ওই কীর্তিতে নাম লেখাতে পারেনি। তাদের সঙ্গে এবার সেই রেকর্ডটিই ভাগাভাগি করলেন মিরাজ।