DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

ক্রিকেট

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দক্ষিন আফ্রিকাকে ৫০ রানে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে নিউজিল্যান্ড। ফলে ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ কিউইরা।

স্পোর্টস রিপোর্টার
Printed Edition
Sports-Photo-Williamson-Rachin-jpg

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দক্ষিন আফ্রিকাকে ৫০ রানে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে নিউজিল্যান্ড। ফলে ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ কিউইরা। ২০০০ সালের পর আবারও ফাইনালের মঞ্চে দেখা হচ্ছে দল দুটির। সেবার কিউইরা ৪ উইকেটে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। সর্বশেষ ২০০৯ সালের রানার্স-আপ কিউইরা শিরোপা জয়ের মিশনে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে ৯ মার্চ। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায় শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচটি অনুষ্টিত হবে।

গতকাল পাকিস্তানের লাহোরে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে সেমিফাইনালে দ.আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের। প্রথমে ব্যাট করে কিউইরা দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে ৩৬৩ রানের বিশাল টার্গেট দিয়েছিল। রাচিন রাভিন্দ্রা ও শেন উইলিয়ামসনের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৩৬২ রান করে নিউজিল্যান্ড। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড। আগের কীর্তিটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার। চলতি আসরেই গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৫৬ রান করেছিল দলটি। ওই ম্যাচেই প্রথমে ব্যাটিং করে ৩৫১ রান তুলেছিল ইংলিশরা। এই টুর্নামেন্টে সাড়ে তিনশ রানের ইনিংস দেখা গেল কেবল এই তিন ম্যাচেই। ফলে জিততে হলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে করতে হবে ৩৬৩ রান। অবশ্য আইসিসি টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনালে তিনশ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই কারো। ২০১৫ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই ২৯৮ রানের লক্ষ্যে জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। শুধু তাই নয়, কিউইদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ডও গড়তে হতো প্রোটিয়াদের। কিন্তু এবার মিচেল স্যান্টনার ও গ্লেন ফিলিপসের স্পিন সামলে নিউজিল্যান্ডের ধারেকাছে যেতে পারেনি তারা।

আইসিসির টুর্নামেন্ট মানেই যেন রাচিন রাভিন্দ্রার ব্যাটিং ঝলক। চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা নিউজিল্যান্ড ওপেনার এবার আলো ছড়ালেন ফাইনালে ওঠার মঞ্চে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নান্দনিক ব্যাটিংয়ে উপহার দিলেন আরেকটি শতক। গতকাল ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে ১০৮ রান করেন রাভিন্দ্রা। ১০১ বলের ইনিংসটি সাজান তিনি ১ ছক্কা ও ১৩ চারে। তার পাঁচটি সেঞ্চুরিই এসেছে আইসিসি

টুর্নামেন্টে ১৩ ইনিংসে। বৈশ্বিক আসরে যা দ্রুততম পাঁচ সেঞ্চুরির রেকর্ড। তিনি ছাড়িয়ে গেছেন ১৫ ইনিংসে পাঁচ সেঞ্চুরি করা ভারতের শিখার ধাওয়ানকে। উইলিয়ামসনের ব্যাট থেকে আসে ২ ছক্কা ও ১০টি চারে ৯৪ বলে ১০২ রান। ওয়ানডেতে এটি তার পঞ্চদশ শতক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিনটি ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। রাভিন্দ্রা ও উইলিয়ামসনের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ১৬৪ রান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যেকোনো উইকেটে নিউজিল্যান্ডের যা সর্বোচ্চ। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ন্যাথান অ্যাস্টল ও স্কট স্টাইরিসের ১৬৩ রানের জুটি ছিল আগের রেকর্ড। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি উইল ইয়াং। ৩ চারে ২১ করে বিদায় নেন তিনি লুঙ্গি এনগিডির শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে।

এরপর শুরু হয় রাভিন্দ্রা ও উইলিয়ামসনের জুটির পথচলা। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন তারা দুইজন। ৪৭ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন রাভিন্দ্রা। উইলিয়ামসনের ফিফটি আসে ৬১ বলে। আরেকটু দ্রুত রান বাড়িয়ে কাক্সিক্ষত তিন অঙ্কে ৯৩ বলে পা রাখেন রাভিন্দ্রা। কিন্তু এরপর আর ইনিংস টেনে নিতে পারেননি তিনি। কাগিসো রাবাদার বলে কট বিহাইন্ড হয়ে বাজে তার বিদায় ঘণ্টা। কয়েক ওভার পর সেঞ্চুরিতে পা রাখেন উইলিয়ামসন। তিনিও পারেননি ইনিংস আরও বড় করতে। ভিয়ান মুল্ডারকে ফাইন লেগ দিয়ে খেলার চেষ্টায় ফিল্ডারের হাতে ধরা পড়েন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ড্যারিল মিচেল ১ ছক্কা ও ৪টি চারে ৩৭ বলে ৪৯ রানের চমৎকার ইনিংস খেলে ফেরেন। ঝড় তোলার মঞ্চ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি টম ল্যাথাম। তবে সুযোগ হাতছাড়া করেননি গ্লেন ফিলিপস। ২৭ বলে ১ ছক্কা ও ৬টি চারে ৪৯ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৭২ রানে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন এনগিডি। ৭০ রানে দুটি প্রাপ্তি রাবাদার।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের রেকর্ড রানের জবাবে পেরে উঠেনি দ.অফ্রিকা। যদিও টেম্বা বাভুমা ও রাসি ফন ডার ডুসেনের একশ ছাড়ানো জুটিতে লড়াই জমিয়ে তুলেছিল। স্যান্টনার এই জুটি ভেঙ্গে দিলে আর দাঁড়াতে পারেনি প্রোটিয়ারা। এই স্পিনারের পর ফিলিপস আঘাত করেন। তাতে হার সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ৯ উইকেটে ৩১২ রানে থামে আফ্রিকানরা। ৫০ রানে সেমিফাইনাল জিতে ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল নিশ্চিত করলো নিউজিল্যান্ড।

পঞ্চম ওভারে রায়ান রিকেলটন (১৭) ম্যাট হেনরির শিকার হন। ২০ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙার পর বাভুমা ও ডুসেন মিলে শক্ত জুটি গড়েন। ১০৫ রানে তাদের জুটি ভেঙ্গে দেন স্যান্টনার। বাভুমাকে ৫৬ রানে ফেরান তিনি। সেট হওয়া ডুসেনও ৬৯ রানে তার শিকার। এরপর কিউই অধিনায়ক মাত্র ৩ রানে ফেরান দারুণ ফর্মে থাকা আইনরিখ ক্লাসেনকে।

১৬৭ রানে চার উইকেট পড়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকা ওখানেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারায়। এইডেন মার্করামকে (৩১) ফিরতি ক্যাচে মাঠছাড়া করেন রাচিন রবীন্দ্র। উইয়ান মুল্ডার (৮) মাইকেল ব্রেসওয়েলের শিকার হওয়ার পর ফিলিপস জোড়া আঘাত হানেন। মার্কো ইয়ানসেন (৩) ও কেশভ মহারাজ (১) প্যাভিলিয়নে ফেরেন।

কাগিসো রাবাদাকে নিয়ে ডেভিড মিলার বাউন্ডারি ওভার বাউন্ডারিতে গ্যালারি মাতান। তাতে কেবল ব্যবধানই কমেছে। বড় শট খেলতে গিয়ে হেনরির বলে ফিলিপসের ক্যাচ হন রাবাদা (১৬)। ইনিংসের বাকি সময়ে একাই লড়াই করেছেন মিলার। এক উইকেট হাতে রেখে দলের হার সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালেও ৪৬ বলে ৩ চার ও ২ ছয়ে পঞ্চাশ করা এই ব্যাটার সেঞ্চুরির জন্য ছুটতে থাকেন। শেষ ওভারে সফলও হন তিনি। ৬ বলে তাকে করতে হতো ১৮ রান। দুটি চার ও ছয় হাঁকানোর পর শেষ বলে ২ রান নিয়ে ৬৭ বলে সেঞ্চুরি উদযাপন করেন মিলার। ১০০ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

অপরদিকে বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে স্যান্টনার সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন। দুটি করে পান হেনরি ও ফিলিপস।