ক্রিকেট ইতিহাসে বড় মাইলফলক স্পর্শ করেছে নেপাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৯ রানে জয় তুলে নিয়ে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পেল তারা। শারজাহতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৮ রান সংগ্রহ করে নেপাল। পরে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে নিয়ন্ত্রিত পারফরম্যান্সে ক্যারিবীয়দের থামিয়ে দেয় ১২৯ রানে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদের হাতেই। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখলো নেপাল। এর আগে ২০১৪ সালে আফগানিস্তানকে টি-টোয়েন্টিতে হারালেও তখন আফগানিস্তান ছিল সহযোগী সদস্য। শুধু জয়ের কারণেই নয়, ম্যাচটিকে নেপালের জন্য স্মরণীয় করে তুলেছে আরও কিছু মাইলফলক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটিই ছিল তাদের প্রথম টি-টোয়েন্টি এবং প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সূচনা। আর সেই সিরিজ শুরুর ম্যাচেই দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের প্রতিটি বিভাগে ছাপিয়ে গেল নেপাল। পুরো ম্যাচে ছিল দারুণ দলীয় প্রচেষ্টা। নেপালের ছয় ব্যাটার ছক্কা হাঁকান, ছয় বোলার নেন উইকেট, আর ফিল্ডিং ছিল নিখুঁত। টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক আকিল হোসেন। তবে নেপালের শুরুটা ভালো ছিল না, মাত্র ৩.১ ওভারে দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরেন। তবু দলীয় লড়াই ও দৃঢ়তায় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত স্মরণীয় জয় ছিনিয়ে নেয় তারা। অধিনায়ক রোহিত পাওডেল ৩৫ বলে ৩৮, কুশাল মাল্লা ২১ বলে ৩০ আর গুলশাল ঝা ১৬ বলে ২২ করে নেপালকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন। জবাবে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের কোনো ব্যাটারই দায়িত্ব নিতে পারেননি। আমির জাঙ্গো ২২ বলে ১৯, কিয়েসি কার্টি ১৫ বলে ১৬ আর নাভিন বিদায়সি ২৫ বল খেলে করেন ২২ রান। শেষদিকে ফ্যাবিয়েন এলেন ১৪ বলে ১৯ আর আকিল হোসেন ৯ বলে ১৮ রানের ইনিংস খেলেও দলকে জয়ের বন্দরে নিতে পারেননি। নেপালের কুশাল ভুরতেল ১৭ রানে শিকার করেন ২টি উইকেট। ওপেনার কুশল ভুর্তেল ম্যাচ শেষে বলেন, ‘কোচ চেয়েছিলেন আমরা যেন ‘কার্ডিয়াক কিডস’ ডাকনামটা মুছে ফেলতে পারি। আজ আমরা তা করতে পেরেছি। দেশের কঠিন সময়ে এই জয় নেপালের মানুষকে আনন্দ দিয়েছে। ’ অধিনায়ক রোহিত পাউড়েল সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৩৮ রান আর বল হাতে নিয়েছেন ১ উইকেট। ম্যাচসেরা হয়ে এই অলরাউন্ডার জয় উৎসর্গ করেছেন দেশের জেন-জি আন্দোলনে প্রাণ হারানো শহীদদের প্রতি। তিনি বলেন, ‘এই পুরস্কার তাদের জন্য যারা আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছেন। আমরা চাই আমাদের ক্রিকেট তাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখুক। ’ যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটি ছিল মূল স্কোয়াডের বাইরে থাকা খেলোয়াড়দের নিয়ে। তবুও নেপালের পারফরম্যান্সে ঐতিহাসিক গুরুত্ব অস্বীকার করার সুযোগ নেই। মাঠে এ জয় শুধু ক্রিকেট নয়, গোটা দেশের জন্যই প্রেরণার প্রতীক হয়ে থাকল।