জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটে প্রথম টেস্টে হেরেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে আজ থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট। সিলেট পর্ব শেষে বাংলাদেশ দল এখন অবস্থান করছে দ্বিতীয় টেস্টের ভেন্যু চট্টগ্রামে। দ্বিতীয় টেস্ট শুরু আগে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন বাংলাদেশের হেড কোচ ফিল সিমন্স। সাম্প্রতিক সময়ে জিম্বাবুয়ে টেস্ট দলের বেহাল দশা। তাদের ক্রিকেটের মান তলানির দিকে যাচ্ছে, গত চার বছরে ১০ টেস্ট খেলে একটিতেও জিততে পারেনি দলটি। তাদের কাছে প্রথম টেস্টে কি না নাজমুল হোসেন শান্তর দল হেরে গেল অনায়াসে। শুধু কি হার, প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বাজে খেলেছে বাংলাদেশ দল। ফলে সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হচ্ছে দল। অথচ গত প্রায় এক দশকে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জেতাটা অভ্যাসের মতো হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। সেখানে এমন পারফরম্যান্সে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়াটাই স্বাভাবিক। বিস্তর সমালোচনাও হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে। এমতাবস্থায় সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন কোচ ফিল সিমন্স। প্রথম টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে সফলতার পথের জন্য আরও সময় চেয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, প্রথম টেস্টে ভালো ব্যাট করতে পারিনি। নিজেদেরই অপ্রয়োজনে চাপে ফেলে দিয়েছি। বাংলাদেশিদের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা অনন্য। তবে দীর্ঘমেয়াদে উন্নতি আনতে সময় ও সঠিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজন। আমি জানি, এখানে খেলাটার প্রতি এবং বাংলাদেশের ভালো করার ব্যাপারে আবেগটা কেমন। তবে আমি আপনাদের ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করব। কারণ, আমরা ঠিক কাজটা করার চেষ্টা করছি, যাতে ভালো খেলতে পারি, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।’ সিলেট টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৯১ রানে গুঁটিয়ে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসেই পিছিয়ে গিয়েছিল ৮২ রানে। পরের ইনিংসে আশা জাগিয়েও লিড ১৭৪ রানের বেশি করতে পারেনি টাইগাররা। ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসই বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিয়েছিল বলে মনে করেন সিমন্স। চট্টগ্রামে ঘুরে দাঁড়াবে দল, এমনই আশা তার, ‘আমরা ইতিবাচক টেস্ট ক্রিকেট খেলতে চাই। শুধু ঠেকিয়ে ঠেকিয়ে ২০০ রান করার চিন্তা নেই। আপনারা বারবার বলছেন, পরিবর্তনের কথা। আমরা যেখানে যেতে চাই, তার জন্য কিছুটা সময় লাগবেই।’ সিলেটে বাংলাদেশের তিনজন হাফসেঞ্চুরি করতে পারলেও কেউ ইনিংসটি বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যেতে পারেননি। অনেকেই আউট হয়েছেন বাজে শট খেলে। এ বিষয়টিও সিমন্সের সংবাদ সম্মেলনে উঠে এসেছে। আপাতত ব্যাটসম্যানদের প্রতি সিমন্সের বার্তা, ‘কিছু বাজে শট ছিল, কিছু সফট ডিসমিসাল হয়েছে। সামনে এগোনোর পথে এসব জায়গায় উন্নতি করতে হবে। এক–দুই–তিন টেস্ট ম্যাচে এটা হবে না।’ প্রথম টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুব বেশি রান তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে তারা গুটিয়ে যায় দুইশ রানের আগেই। দ্বিতীয় ইনিংসে দুইশ পার করলেও বেশিদূর যেতে পারেনি। সিমন্স জানান, লক্ষ্য হওয়া উচিত ইতিবাচক খেলা। কেবল দুইশ রানের লক্ষ্যে খেলতে থাকলে পাওয়া যাবে না সফলতা। আর এই ইতিবাচকতা হতে হবে ধারাবাহিক। বাংলাদেশের কোচ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক টেস্ট ক্রিকেট খেলা, যেন দিন শেষে শুধু ২০০ রান করে বাঁচার চিন্তা না থাকে। দুই-তিন টেস্ট পরপর ভালো খেলে থেমে গেলে হবে না, ধারাবাহিক পারফরম্যান্সই আমাদের মূল লক্ষ্য।’ আজ থেকে চট্টগ্রামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। হোয়াইটওয়াশ এড়াতে এই টেস্টে সিমন্স বোলিং লাইনআপ সাজিয়েছেন ভিন্নভাবে। তিন পেসার হাসান মাহমুদ, খালেদ আহমেদ ও তানজিম সাকিবের ওপর আস্থা রেখেছেন তিনি। মনে করেন, গতি নয় বরং তাদের দক্ষতাই পার্থক্য গড়ে দিতে পারেনি। সিমন্স বলেন, ‘গতি কমলেও আমাদের বোলারদের দক্ষতা আছে, যা ম্যাচের পার্থক্য গড়তে পারে। ’ দ্বিতীয় টেস্টে কেমন হতে পারে পিচের কন্ডিশন, পেস নাকি স্পিনে সুবিধা মিলবে সেটা নিয়েও রয়েছে বিস্তর চিন্তা। শেষ টেস্টের জন্য বাংলাদেশ দলের স্কোয়াডে রয়েছেন ৪ স্পিনার ২ পেসার। চট্টগ্রামের উইকেট, কন্ডিশন সিলেটের চেয়ে বেশ কিছুটা ভিন্ন। ফলে একাদশে পরিবর্তন হবে সেটা বলায় যায়। চট্টগ্রামে বাড়তি স্পিনার একাদশে দেখা যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব অবশ্য দেননি টাইগার হেড কোচ ফিল সিমন্স। বাড়তি স্পিনার খেলানো প্রসঙ্গে ফিল সিমন্স বলেন, ‘হয় ৩ পেসার, ২ স্পিনার নয়ত ৩ স্পিনার ২ পেসার (এরকম একাদশ) হবে। তবে নির্দিষ্ট করে এখনই বলতে পারছি না। ফাইনাল সিদ্ধান্ত পরে নিব আমরা।’ পরে চট্টগ্রামের উইকেট নিয়ে সিমন্স বলেছেন, ‘উইকেট দারুণ লাগছে। হার্ড, ফ্ল্যাট। আমরা আশা করি এর ফায়দা নিতে পারব। কিছুটা টার্ন পেলে আশা করি ভালো হবে আমাদের জন্য।’