শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে পাকিস্তানকে দ্বিতীয় টি টোয়েন্টিতে বিধ্বস্ত করে এক ম্যাচ আগেই প্রথমবারের মতো টি টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। এদিন বল হাতে জ্বলে ওঠেন বাংলাদেশের দুই পেসার তানজিম হাসান সাকিব ও শরিফুল ইসলাম। তাকে যোগ্য সহায়তা করেন শেখ মেহেদী।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে জাকের আলীর ৪৮ বলে ৫ ছক্কা ও ১ চারে ৫৫ এবং শেখ মেহেদীর ২৫ বলে ২ ছক্কা ও সমান চারে ৩৩ রানের ওপর ভর করে ২০ ওভারে ১৩৩ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে পাকিস্তানকে শুরু থেকে চেপে ধরে টাইগাররা। নিয়মিত বিরতিতে তারা উইকেট হারাতে থাকে। একপর্যায় তারা স্কোরবোর্ডে ৩০ রান তুলতেই হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট। শেষ পর্যন্ত সব উইকেট হারিয়ে ১২৫ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। ফলে বাংলাদেশ ৮ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
গত মে মাসে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে গিয়েছিল বাংলাদেশ। যেখানে ঘরের মাঠে টাইগারদের বিধ্বস্ত করে সিরিজ জিতেছিল ম্যান ইন গ্রিনরা। সেই হার সহজভাবে নিতে পারেনি শান্ত-লিটনরা। তাই পাকিস্তানকে নিজেদের ডেরায় পেয়ে গজরে উঠেছে টাইগাররা। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে দাপট দেখিয়ে টানা দুই জয় তুলে নিয়েছে স্বাগতিকরা।
এতে ১ ম্যাচ আগে সিরিজ নিশ্চিত করল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক কোনো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল টাইগাররা। এর আগে ৬টি টি-টোয়েন্টি সিরিজে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। যেখানে ৫টিতেই জিতেছিল পাকিস্তান। আর একটি জয় টাইগারদের, সেটি ছিল ১ ম্যাচের সিরিজ। তাই এক ম্যাচের বেশি এমন টি-টোয়েন্টি সিরিজে এই প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ দল। তৃতীয় ম্যাচে জয় তুলতে পারলে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার ইতিহাস গড়বে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় স্বাগতিকদের হারিয়ে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ দলের শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। সিরিজ জয়ের ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৮ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান জাকের আলী এবং শেখ মেহেদী হাসান। জাকেরের দৃঢ় অর্ধশতকেই ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৩৩ রানে অলআউট হয় টাইগাররা।
অপরদিকে সিরিজে ফেরার লড়াইয়ে ১৩৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় পাকিস্তান। ১৫ রান সংগ্রহে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে রয়েছে পাকিস্তান শিবির। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম রানে প্রতিপক্ষের ৫ উইকেট তুলে নেয়। পাকিস্তানও এই সংস্করণে এর আগে এত কম রানে ৫ উইকেট হারায়নি। পাকিস্তানের আগের রেকর্ড ১৬/৫, গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। বাংলাদেশের আগের রেকর্ড ২৪/৫। ২০২১ সালে পাপুয়া নিউগিনির প্রথম ৫ উইকেট বাংলাদেশ পেয়েছিল ২৪ রানে।
প্রথম ওভারেই রিশাদের দারুণ থ্রো-তে রানআউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাইম আইয়ুব। পরের ওভারেই মোহাম্মদ হারিসকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফিরে যান এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
চতুর্থ ওভারে বল করতে এসে এবার ফখর জামানকে ফেরান শরিফুল। আগের ম্যাচে একাই লড়াই করেছিলেন এই ওপেনার। ৩৪ বলে খেলেছিলেন ৪৪ রানের ইনিংস। সেই ফখর জামান এদিন শরিফুলের উঠে আসা বল পুল করতে গিয়ে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৮ বলে ৮ রান।
২৩ বলে ৯ রান করা আগা সালমান ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে তাওহিদ হৃদয়কে ক্যাচ দিয়েছেন। উৃইকেটটি পেয়েছেন মেহেদী হাসান। ৩০ রানের ৬ উইকেট হারানো পাকিস্তানকে চোখ রাঙাছে এই সংস্করণে নিজেদের সর্বনি¤œ স্কোর।
১১ রানে দাঁড়ানো খুশদিল রিশাদ ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দিলেও তা তালুবন্ধী করতে ব্যর্থ হন পারভেজ হোসেন।তবে জীবন পেয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না খুশদিল শাহ। পরের ওভারে মেহেদী হাসানের বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন ব্যক্তিগত ১৩ রানে ও দলীয় ৪৭ রানে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান।
আব্বাস আফ্রিদিকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে অষ্টম উইকেট এনে দিয়েছেন শরীফুল ইসলাম। ৮৮ রানে ৮ উইকেট হারানো পাকিস্তান নবম উইকেট হারাতে পারত ওভারের শেষ বলে। ফাহিম আশরাফের তোলা ক্যাচ ছেড়েছেন তানজিম হাসান। বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে থাকা ফাহিম ২৭ বলে করেছেন ৪০ রান। ১৮ বলে ৩৭ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের।
এর আগে মঙ্গলবার টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ৩ রান করে দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন ওপেনার নাঈম শেখ।
নাঈমের বিদায়ের পর দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন লিটন কুমার দাস। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি টাইগার অধিনায়ক। ৯ বলে রান করে ফেরেন তিনি। এরপর পিচে এসেই রান আউটে কাটা পড়েন তাওহীদ হৃদয়। এতে ২৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
তবে লড়াই করার চেষ্টা করছিলেন আগের ম্যাচের নায়ক পারভেজ ইমন। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে পঞ্চম বলে পাকিস্তানকে ক্যাচ উপহার দিয়ে বসেন এই ব্যাটার। এতে ১৪ বলে ১৩ রানে ফেরেন তিনি। এতে পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৯ রান তোলে টাইগাররা।
এরপর দলের হাল ধরার চেষ্টা করছেন শেখ মাহেদী ও নাঈম শেখ। দুজনের ব্যাটে ভর করে ১০ ওভারে ফিফটি তুলে নেয় টাইগাররা। ৪৯ বলে ৫০ রানের জুটি গড়েছিলেন তারা। কিন্তু এরপর ক্যাচ আউট হন মাহেদী। ২৫ বলে ৩৩ রান করেন তিনি।
৪ বলে ১ রান করে তাকে সঙ্গ দেন শামীম পাটোয়ারী। এরপর ৪ বলে ৭ রান করে তানজিম সাকিব ও ৪ বলে ৮ রান করে আউট হন রিশাদ হোসেন। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করছিলেন জাকের।
নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিংয়ে ৪৬ বলে ফিফটি তুলে নেন জাকের। তবে ইনিংসে শেষ বলে ছক্কা হাকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে কাটা পড়েন তিনি। তার ৪৮ বলে ৫ রানে ভর করে ১৩৩ রানের লড়াকু পুঁজি পায় টাইগাররা।
পাকিস্তানের হয়ে দুটি করে উইকেট শিকার করেন সালমান মির্জা, আহমেদ দানিয়াল ও আব্বাস আফ্রিদি। এ ছাড়াও ফাহিম আশরাফ ও মোহাম্মদ নাওয়াজ নেন একটি করে উইকেট।
বাংলাদেশ দল: মোহাম্মদ নাঈম, পারভেজ হোসেন, লিটন দাস (অধিনায়ক), তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলী, শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান, শরীফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান।
পাকিস্তান দল: ফখর জামান, সাইম আইয়ুব, মোহাম্মদ হারিস, আগা সালমান (অধিনায়ক), হাসান নেওয়াজ, মোহাম্মদ নেওয়াজ, খুশদিল শাহ, ফাহিম আশরাফ, আব্বাস আফ্রিদি, সালমান মির্জা ও আহমেদ দানিয়াল।