প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২৫০ উইকেটের মাইলফলক পূর্ণ করেছেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। মাত্র ৫৭তম টেস্টে ওই কীর্তির মধ্য দিয়ে ইতিহাসে নাম তুলেছেন। বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে তিনি যৌথভাবে সবচেয়ে দ্রুততম ২৫০ উইকেট নিয়েছেন। এর আগে শ্রীলংকান কিংবদন্তি ও বাংলাদেশের সাবেক স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথ ৫৭ টেস্টে ২৫০তম উইকেট শিকার করেছিলেন। যা বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে সবচেয়ে দ্রুততম। সমান টেস্টে তার রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন তাইজুল। এ ছাড়া পাকিস্তানি ডানহাতি লেগস্পিনার দানেশ কানেরিয়াও ৫৭তম টেস্টে ২৫০ উইকেট পেয়েছিলেন। সবমিলিয়ে তাদের ওপরে আছেন ৪ স্পিনার। যদিও তাদের কেউ ডানহাতি অফব্রেক কিংবা লেগস্পিনার। তবে বাঁ–হাতি স্পিনারদের মধ্যে রাজত্বটা কেবলই তাইজুল-হেরাথের দখলে।একদিন আগে সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার হন তাইজুল। মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিনে আয়ারল্যান্ডের ৩ উইকেট নিয়েছিলেন তাইজুল। তখন টেস্টে তার উইকেট ছিল ২৪৯টি। গতকাল অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে এলবিডব্লিুউ’র ফাঁদে ফেলে মাইলফলক পূর্ণ করেন ৩৩ বছর বয়সী এই তারকা। আম্পায়ার আউট দিলেও আইরিশ ব্যাটার রিভিউ নিয়েছিলেন। আম্পায়ার্স কলের সুবাদে সফল তাইজুল। তিনি ভাঙলেন কার্টির ক্যাম্ফার-ম্যাকব্রাইনের ২৬ রানের জুটি। সবমিলিয়ে টেস্টে দ্রুততম ২৫০ উইকেট শিকারের রেকর্ডটি ভারতীয় তারকা রবীচন্দ্রন অশ্বিনের। তিনি মাত্র ৪৫ টেস্টে ওই বিশ্বরেকর্ড গড়েন। তাইজুল-হেরাথ-কানেরিয়ার আগে ওই তালিকায় আছেন ৪ স্পিনার, অশ্বিন ছাড়া বাকিরা হলেন– মুত্তিয়া মুরালিধরন (৫১), শেন ওয়ার্ন (৫৫), অনিল কুম্বলে (৫৫)। ৫৭তম টেস্টে ২৫০ উইকেট পাওয়া বোলারের সংখ্যা ৬ জন। যেখানে তাইজুল সর্বশেষ নাম। তাদের ওপরে আছেন সবমিলিয়ে আরও ১৫ জন। এর আগে তাইজুল চলমান এই টেস্টেই বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারে সাকিবকে ছাড়িয়ে যান। বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক টেস্ট ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৭১ ম্যাচ। তার চেয়ে ১৪ টেস্ট কম খেলেই সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে গেলেন তাইজুল। সাকিব অবশ্য কেবল বিশেষজ্ঞ স্পিনারই নন, লম্বা সময় অলরাউন্ডার হিসেবে টাইগার ক্রিকেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। চলতি টেস্টের তৃতীয় দিনে চার উইকেট তুলে টেস্টে বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় সাকিব আল হাসানের ২৪৬ উইকেটের পাশে নাম লেখান তাইজুল। গতকাল শনিবার আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নিকে এলবিডাব্লিউ করে সাকিবকে ছাড়িয়ে যান তিনি। গতবছর কানপুরে ভারতের বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলা সাকিব ২৪৬ উইকেট শিকার করেছিলেন ৭১ টেস্টে। ৫৬ টেস্টে মেহেদি হাসান মিরাজের শিকার ২০৯ উইকেট। তাইজুলের অভিষেকের আগে সাকিব ৩৪ টেস্ট খেলেছেন। তার নেওয়া ২৪৬ উইকেটের ১২২টিই ওই সময়ে পেয়েছিলেন। তাইজুলের আগমণের পর বাকি ১২৪ উইকেট পেয়েছেন ৩৭ টেস্টে। সেই সাকিবকে এখন টেস্টে ছাড়িয়ে উইকেট-পর্বতের চূড়ায় তাইজুল। বাংলাদেশের তিন স্পিনার টেস্টে ২০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। ২০০ উইকেট পেতে সাকিবের লেগেছিল ৫৪ টেস্ট, তাইজুল সেটা ছুঁয়েছেন ৪৮ টেস্টেই। মিরাজের লেগেছিল ৫২ টেস্ট। সাকিব থাকায় কম্বিনেশনের কারণে টেস্টের একাদশে তাইজুল সুযোগ পেতেন না অনেক সময়। দেশের মাটিতে সুযোগ হলেও বাইরে একেবারে কালেভাদ্রে। সাকিবের সঙ্গে ৭১ টেস্টে মাত্র ২৬টিতে ছিলেন তাইজুল। যার ২২টি দেশের মাঠে। ৪টি বাইরে। যেই ৪টি দেশের বাইরে তার মধ্েয ২টি ভারতে এবং ১টি করে শ্রীলঙ্কায় ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে। পারফরম্যান্সের বিচারে দুইজন কাছাকাছি অবস্থান করছেন। একসঙ্গে খেলা ২৬ টেস্টে সাকিবের উইকেট সংখ্যা ১০২টি। তাইজুলের ৯৪টি। দেশে সাকিবের উইকেট ৮৪টি। তাইজুলের ৮৫টি। অ্যাওয়েতে সাকিবের শিকার ১৮টি। তাইজুলের ৯টি। তবে ক্যারিয়ারের ১৭ ফাইফারের ১৩টিই পেয়েছেন সাকিববিহীন ম্যাচে। পরিসংখ্যানই বলে দেয়, সাকিবের ছায়া থেকে বেরিয়ে তাইজুল হয়ে উঠেন আরো দ্েযাদিপ্যমান। দায়িত্বের মশাল থাকে তার হাতেই। হতে হয় স্পিন আক্রমণের নেতা। এখন পর্বতের চূড়ায়। তাইজুলের এই রেকর্ডের পর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সাকিব। সাকিবের প্রত্যাশা, ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত তাইজুলের নামের পাশে ৪০০ টেস্ট উইকেট থাকবে। গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে সাকিব বলেছেন, ‘অভিনন্দন তাইজুল, আমি দেখতে পাচ্ছি যে ক্যারিয়ার শেষ করার সময় তোমার ৪০০ টেস্ট উইকেট থাকবে। শুভকামনা।’

টেস্টে বাংলাদেশের শীর্ষ ৫ টেস্ট উইকেট শিকারি

তাইজুল ইসলাম- ২৫০*

সাকিব আল হাসান- ২৪৬

মেহেদী হাসান মিরাজ-২০৯

মোহাম্মদ রফিক-১০০

মাশরাফি বিন মুর্তজা- ৭৮