বিপিএলে স্পট ফিক্সিং নিয়ে গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি)। গত আগস্টে বিসিবির কাছে বিপিএলের ফিক্সিংয়ের অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল তিন সদস্যের স্বাধীন তদন্ত কমিটি। দুই মাস পর ৯০০ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। যেখানে দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। বিপিএলের সর্বশেষ আসরের পর আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য দুই সদস্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. খালেদ এইচ চৌধুরী ও সাবেক ক্রিকেটার শাকিল কাসেম। বিসিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনে শুধু দুর্নীতির বিষয়ই নয়, বরং পরিচালনাগত ঘাটতিগুলো নিয়েও সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর পুনর্গঠন, খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা জোরদার, ঝুঁকি মূল্যায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং যোগাযোগ প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিসিবি দুর্নীতিবিরোধী বিভাগে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয় আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা অ্যালেক্স মার্শালকে।

তিনিই বিপিএলের স্বাধীন তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনটি নিয়ে পরবর্তী কাজ করবেন। এদিকে চলমান প্রক্রিয়ার কারণে বিসিবি আপাতত কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ বা নাম প্রকাশ করবে না। প্রতিবেদনের তথ্যও প্রকাশ বাইরে আসবে না। ক্রিকেটকে পরিস্কার ও ‎দুর্নীতিমুক্ত রাখতে বিসিবি ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ইউনিট গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে থাকবেন একজন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান। বিপিএলের স্পট ফিক্সিংয়ের ৯০০ পৃষ্ঠার সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেয়ে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানিয়েছেন, অভিযুক্ত কারও নাম সামনে আনবে না বাংলাদেশ ক্রিকেটট বোর্ড (বিসিবি)। কেউ দোষী প্রমাণিত হলেও মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের নাম প্রকাশ্যে আনবে না তারা। তবে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে খেলা থেকে বিরত রাখা হবে। ৯০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে যাদের নাম এসেছে সে তালিকা প্রকাশ করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বুলবুল বলেন, ‘এই মুহূর্তে প্রকাশ করার মতো পরিস্থিতিতে আমরা নেই। কিন্তু ইভেনচুয়ালি করব।’ পরে বিসিবির সহ-সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন নাম প্রকাশ করা হবে কি না। দেখুন, প্রত্যেকের ব্যক্তিগত পরিচয় এবং এটা একান্ত একটা ব্যক্তিগত বিষয়, গোপনীয় বিষয়। সুতরাং আমাদের কমিটিটা ওরা চার্জ ফ্রেম করলে সেটা ভেতরে ভেতরে যোগাযোগ করা হবে। কোনো মিডিয়া বা পাবলিকলি কারও নাম আসবে না। কিন্তু হয়ত ওই ইনডিভিজ্যুয়াল জানবে।’ বিসিবির সহ-সভাপতি নিশ্চিত করেছেন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের কেউই খেলতে পারবেন না, ‘কারো বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ (স্পট ফিক্সিংয়ের) প্রমাণিত হয় তাহলে সে খেলতে পারবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেখুনÑ ওই ক্ষমতা কিন্তু বোর্ডের নেই কারও নাম প্রকাশ করার। যখন সে খেলতে পারবে না আপনারা বুঝবেন, সবাই বুঝবে। আমরা কিন্তু আদালত না। আপনাদেরকে এটা বুঝতে হবে এবং তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অধিকার আছে হিউম্যান রাইটস আছে। সুতরাং একটা নির্দিষ্ট খেলা নিয়ে সে যদি কোনো কিছু করে থাকে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে তাকে খেলা থেকে দূরে রাখা হবে। নাম প্রকাশ করে এটা নিয়ে আমাদের হেয় করার কিছু নেই।’ আসন্ন দ্বাদশ বিপিএলে বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা কিনতে আকাশবাড়ি হলিডে, রাজশাহীর জন্য নাবিল গ্রুপ ও নোয়াখালির জন্য বাংলা মার্ক আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই আছেন বিসিবির তিন পরিচালক। তবে বিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিপিএলের দল পরিচালনায় এমন কেউ যুক্ত থাকলে, তাদের বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

সেই সঙ্গে এই সংক্রান্ত সভায়ও ডাকা হবে না তাদের। এ প্রসঙ্গে বিসিবির সহ-সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘এবার আমাদের পরিচালকদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ইনডেমনিটি নেওয়া হবে। আর সত্যি বলতে গেলে, প্রত্যেককে একটি সেলফ-ডিক্লারেশন দিতে হবে। কে কোন দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন, সরাসরি বা পরোক্ষভাবে। যদি দেখা যায় আমাদের গভর্নিং কাউন্সিলের কেউ কোনোভাবে কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত, তাহলে তাকে গভর্নিং কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করতে হবে।’ সদস্য সচিব ইফতেখার রহমান মিঠু আশাবাদী– এবারের বিপিএলে কোনো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট থাকবে না। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি আইপিএলেও দেখেন, আপনি জানতেন যে আইপিএলের একটা দল ওদের সভাপতির মালিকানায় ছিল। প্রাথমিকভাবে সেলফ ডিক্লারেশন মানে, আমি আপনাদের জানিয়ে দিলাম যে আমি এই দলের সঙ্গে (আছি)। গভর্নিং বডির আমরা কেউ কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারব না। পাশাপাশি ওই সংশ্লিষ্ট সভায় আমন্ত্রণ করা হবে না।’