স্পোর্টস রিপোর্টার: আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে প্রথম দিনটা নিজের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাটিং নেয়ার পর দিনশেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৯২ রান। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ৯৯ রানে এবং লিটন দাস ৪৭ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে শততম টেস্ট খেলতে নেমে ম্যাচের প্রথম দিন ৯৯ রানে অপরাজিত আছেন মুশফিকুর রহিম। ক্যারিয়ারের আরেকটি সেঞ্চুরির খুব কাছেই থেকে দিন শেষ করেন তিনি। অন্যদিকে লিটন দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যান। দ্বিতীয় দিনের সকাল অপেক্ষায় থাকবে মুশফিকের শততম ম্যাচের সেঞ্চুরি ও লিটনের ২০তম ফিফটির। এই টেস্টের মাধ্যমে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১০০ টেস্ট খেলার অনন্য রেকর্ডের মালিক এখন মুশফিকুর রহিম। তার এই অর্জনকে সম্মানিত করতে বিসিবি নানা আয়োজন রেখেছে। সেই আয়োজনকে আরও বর্নিল করে তুলেছে মুশফিকের ব্যাট। শতক থেকে মাত্র ১ রান দূরে তিনি। আজ ১ রান তুলতে পারলেই শততম ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়ার তালিকায় তিনি নাম লেখাবেন। যে তালিকায় জ্বলজ্বল করছে জাভেদ মিয়াদাঁদ, ইনজামামুল হক, রিকি পন্টিং, জো রুট, ডেভিড ওয়ার্নারদের মতো ২২ গজ কাঁপানো নাম। আজ দ্বিতীয় দিন সকালে বাংলাদেশ দ্রুত লিড বড় করার লক্ষ্য নিয়েই নামবে। তবে সবার চোখ থাকবে মুশফিকের অপেক্ষমাণ সেঞ্চুরির দিকে।

গতকাল ব্যাট হাতে উদ্বোধনী জুটিতে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম। ১৪তম ওভারে দলের রান হাফ-সেঞ্চুরিতে নিয়ে বিচ্ছিন্ন হন তারা। ঐ ওভারের চতুর্থ বলে রিভিউর সহায়তা নিয়ে সাদমানকে লেগ বিফোর আউট করেন আয়ারল্যান্ড স্পিনার এন্ডি ম্যাকব্রিন। ৬টি চারে সাদমান ৪৪ বলে ৩৫ রান করেন। সতীর্থকে হারানোর পর মোমিনুল হককে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন জয়। জুটিতে ৩১ রান যোগ হবার পর ম্যাকব্রিনের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন জয়। ৮৬ বল খেলে ২টি বাউন্ডারিতে ৩৪ রান করেন প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৭১ রান করা জয়। ৮৩ রানের মধ্যে দুই ওপেনার ফেরার পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। চার নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি তিনি। ১টি ছক্কায় ৮ রানে ম্যাকব্রিনের তৃতীয় শিকার হন শান্ত। ৯৫ রানে ৩ উইকেট পতনের পর জুটি বেঁধে প্রথম সেশন শেষ করেন মোমিনুল ও মুশফিক। ৩১ ওভারে ৩ উইকেটে ১০০ রান তুলে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে ম্যাকব্রিনের বলে চেড কারমাইকেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান মোমিনুল। তখন ২৩ রানে ক্রিজে ছিলেন তিনি। মামিনুলের পর ক্যাচ দিয়ে জীবন পান ২২ রানে থাকা মুশফিকও। আয়ারল্যান্ডের অভিষিক্ত স্পিনার গ্যাভিন হোয়ের বলে উইকেটরক্ষক লরকান টাকার ক্যাচ ফেলেন মুশির। এরপর আয়ারল্যান্ড বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন মোমিনুুল-মুশফিক। ৯৩ বল খেলে টেস্টে ২৪তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মোমিনুল। চা-বিরতির পর ইনিংসের ৬৩তম ওভারে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মুশফিক। ক্যারিয়ারের ২৮তম হাফ সেঞ্চুরি করতে ১০৯ বল খেলেন তিনি। ঐ ওভারেই ২শ স্পর্শ করে বাংলাদেশের রান। মুশফিকের অর্ধশতক পাবার পরের ওভারেই আউট হন মোমিনুল। ম্যাকব্রিনের বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল পায়ে লেগে ক্যাচ উঠে। দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ নেন এন্ডি বলবির্নি। ১টি বাউন্ডারিতে ১২৮ বল খেলে ৬৩ রান করেন মোমিনুল। চতুর্থ উইকেটে মুশফিকের সাথে ২১৪ বলে ১০৭ রান যোগ করেন মোমিনুল।

দলীয় ২০২ রানে চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে মোমিনুল ফেরার পর ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে শততম ম্যাচ খেলতে নামা লিটন দাস। ঐ সময় ৫৭ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। লিটনকে নিয়ে দলের রানের চাকা সচল রাখার পাশাপাশি সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান মুশফিক। দিনের শেষ ওভারের আগে ৯৭ রানে পৌঁছে যান তিনি। সেঞ্চুরি থেকে ৩ রান দূরে দাঁড়িয়ে মুশি। কিন্তু দিনের শেষ ওভারে চার বল খেলার সুযোগ পেলেও ২ রানের বেশি নিতে পারেননি মুশফিক। ফলে ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে যান মুশি। তার ১৮৭ বলের ইনিংসে ৫টি চার ছিল। ২ বাউন্ডারিতে ৮৬ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন লিটন। এই ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ৩ হাজার রান পূর্ণ করেন লিটন। মুশফিকের সাথে পঞ্চম উইকেটে ১৬০ রানে অবিচ্ছিন্ন ৯০ রান যোগ করেন লিটন। আয়ারল্যান্ড স্পিনার ম্যাকব্রিন দিনের ৪টি উইকেটই দখল করেছেন।