বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন বর্জন করেছেন আরো দুই প্রার্থী। এদের একজন লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ ক্লাবের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাদল। আরেক জন রাজশাহী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর হাসিবুল আলম। নানারকম হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে এই নিয়ে মোট ১৮ জন প্রার্থী সরে দাঁড়ালেন বিসিবি নির্বাচন থেকে। নির্বাচনের বাকি ৪৮ ঘণ্টা। হেভিওয়েট প্রার্থীরা অনেকেই সরে দাঁড়ানোয় নির্বাচনের আমেজ অনেকটাই কমে গেছে। সেই আমেজটা আরো কমিয়ে দিলেন অভিজ্ঞ সংগঠক লুৎফর রহমান বাদল। লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ ক্লাবের চেয়ারম্যান এবার কাউন্সিলর হয়েছিলেন। মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে পরিচালক হওয়ার জন্য। কিন্তু নির্বাচনের ঠিক ৪৮ ঘন্টা আগে নিজের থেকে সরে গেছেন তিনি।
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। ভোটের ব্যালটে তার নামও থাকবে। কিন্তু ভোটারদের তিনি মেসেজ দিয়ে দিচ্ছেন, তিনি আর নির্বাচনে নেই। কেন এই সিদ্ধান্ত কারণ ব্যাখ্যা করেননি এই ক্রিকেট সংগঠক। তবে সিদ্ধান্তটি নিতে বাধ্য হয়েছেন জানিয়ে তিনি বললেন, অদূর ভবিষ্যতে সময় পক্ষে পেলে তিনি সব খোলাসা করবেন। তার পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ক্লাবের চেয়ারম্যান। যদিও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় পেরিয়ে গেছে গত বুধবার দুপুরেই। এখন কাগজে-কলমে তাই নামটি থাকবেই। তবে নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ থাকছে না। বাদল চিঠিতে বলেছেন, ‘আমি লুৎফর রহমান বাদল, লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের চেয়ারম্যান, আসন্ন বিসিবি নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলাম। এখানে কারও দিকে আঙুল তুলছি না। তবে অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কখনও অনুকূলে থাকলে সবাইকে জানাবো, কেন এবং কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম।’ এরপর যোগ করেন, ‘কাঁদা ছোড়ার দিকে আমি যেতে চাই না। যারা এই নির্বাচনে জয়ী হয়ে পরিচালক হচ্ছেন, তাদের প্রতি শুভকামনা। তবে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, একাধিক প্যানেলে নির্বাচনটা হলে সেটা মাইলফলক হয়ে থাকতো। যারা পুরো সময় আমার পাশে ছিলেন, তাদের ধন্যবাদ।’ রাজশাহী বিভাগ থেকে পরিচালক পদের লড়াইয়ে ছিলেন হাসিবুল আলম। গতকাল সকালে বিসিবিতে এসে নির্বাচন বর্জনের কথা জানান রাজশাহী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার এই কাউন্সিলর।
আনুষ্ঠানিকভাবে নাম প্রত্যাহারের সুযোগ অবশ্য গত বুধবারই পেরিয়ে গেছে। ব্যালট পেপারে তাই হাসিবুলের নাম থাকবেই। তবে তার অংশগ্রহণ আর থাকছে না। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে হাসিবুল জানান, তিনি মূলত বিসিবি ভবনে এসেছিলেন জানতে, রাজশাহীর বিভাগীয় কোটায় কতজন কাউন্সিলর ই-ভোটে ভোট দেবেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাননি। তার অভিযোগ, শুরু থেকেই তাকে ভোটারদের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছে। ফলে সুষ্ঠু ভোটের কোনো পরিবেশ নেই বলে মনে করছেন তিনি। ‘গত ২ অক্টোবর আমি নির্বাচন কমিশনকে একটি চিঠি দিয়েছি। আমার ভোটারদের খুঁজে পাচ্ছি না, ভোট চাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না। আমি মনে করি মুখলেছুর রহমানের (এই ক্যাটেগরির আরেক প্রার্থী) মনোনয়নপত্র বাতিল করা উচিত। তিনি যেভাবে ভোট করছেন, তা পুরোপুরি অবৈধ। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব কাউন্সিলর প্রলোভনে পা দিয়েছেন, তাদের কাউন্সিলরশিপও বাতিল করতে হবে। যদি এভাবে চলতে থাকে, তবে বিসিবি নির্বাচনের মান আরও খারাপ হবে। আগের নির্বাচনের চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি এখন চোখে পড়ছে। সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে না, বরং এটা প্রহসনের নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে। তাই আমি মনে করছি এই প্রক্রিয়ায় ভালো কোনো ফল আসবে না। ফলে আমি স্বেচ্ছায় নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়ালাম। আর অংশগ্রহণ করব না’ হাসিবুল আলম সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চাপাইনবাবগঞ্জের মুহাম্মদ মুখলেছুর রহমান (শামীম) রাজশাহীর ভোটারদের ঢাকায় একটি হোটেলে গোপনে রেখেছেন। গত বুধবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে তামিম ইকবালসহ মোট ১৬ জন প্রার্থী নাম প্রত্যাহার করে নেন নির্বাচন থেকে। এরপর গত ২৪ ঘণ্টায় দুই ক্যাটাগরি থেকে দুই প্রার্থীর সরে দাঁড়ানোয় বিসিবি নির্বাচনের পরিবেশকে ঘিরে প্রশ্নগুলোকেই আরও উচ্চকিত করছে।