মোস্তফা মোঘল, বগুড়া অফিস: ম্যাচের তখনো বাঁকি ৪ ওভার বাঁকি। বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ দলের রান ৪ উইকেটে ২৩১। জয়ের জন্য ২৪ বলে প্রয়োজন ২৪ বলে মাত্র ৩৫ রান। উইকেটে আছেন ৭৫ রানে অপরাজিত রিজান হোসেন এবং ১২ রানে খেলছেন আব্দুল্লাহ। প্রায় ১২ হাজারের অধিক দর্শক গ্যালারীতে বিজয়োল্লাস করছে। হঠাৎই সব থমকে গেল। স্টেডিয়াম জুড়ে পিনপতন নিরবতা। মাঠে ঢুকলে থার্ড আম্পায়ার। আলো স্বল্পতায় খেলা হবে কি হবে না এ নিয়ে দুই দলের অধিনায়কের সাথে সলাপরামর্শ শুরু করলেন আম্পায়ার। বিষয়টা টের পেতেই গ্যালারীতে শুরু হলো চিৎকার। সাথে সাথে জ¦লে উঠলো সবার মোবাইল। গ্যালারী ভর্তি দর্শকের মোবাইলের মিটিমিটি আলো লজ্জায় ডুবালো ক্রিকেট বোর্ডকে। ২০ বছর প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা খরচ করে ফ্লাডলাইট বসানো হলেও শুধুমাত্র আলোর অভাবে একটি ঐতিহাসিক ম্যাচ হতাশাজনক ভাবে শেষ হলো। যদিও আইসিসির নিয়ম মেনে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ দলকে ৫ রানে বিজয়ী ঘোষণা করলেন ম্যাচ রেফারি। কিন্তু দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর হাজার হাজার দর্শকের মনে যে উদ্দীপনার জন্ম নিয়েছিল, খেলা শেষ করতে না পারায় বুকভরা হতাশা নিয়েই মাঠ থেকে বেরিয়ে গেলেন দর্শকরা। স্টেডিয়ামের চারপাশে ফøাডলাইটের বিশাল চারটি টাওয়ার দাঁড়িয়ে থাকলেও শুধুমাত্র আলোর অভাবে একটি জমজমাট ম্যাচ শেষের আগেই শেষ হওয়া মেনে নিতে পারেনি দর্শকরা। মাঠে বোতল ছুঁড়ে মনের ক্ষোভ মেটালেন ক্ষুব্ধ দর্শকদের অনেকেই। দুই দুই দলের দুই ব্যাটারের দূর্দান্ত সেঞ্চুরীর পর অবশেষে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে আলোর কাছে পরাজিত হলো সফরকারী আফগানিস্তান অ-১৯ বনাম বাংলাদেশ অ-১৯ ক্রিকেট দলের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। আফগান যুবাদের ছুড়ে দেওয়া ২৬৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ২৩১ রান করার পর আলো স্বল্পতায় বৃষ্টি আইনে ৫ রানে জিতলো বাংলাদেশের যুবারা। বাংলাদেশ দলের পক্ষে সেঞ্চুরীয়ান কালাম সিদ্দিকী এ্যালেন প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন। ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের ছুঁড়ে দেওয়া ২৬৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৫ রানে দুই ব্যাটারকে হারিয়ে থমকে যায় যুব টাইগাররা। ৬০ রানে ৩য় উইকেটের পতনের পর গ্যালারী ভর্তি দর্শকরা স্তম্ভিত হয়ে যায়। কিন্তু মিডল অর্ডারে কালাম সিদ্দিকী এ্যালেন এবং রিজান হোসেনের সাহসী ব্যাটিং আবারও দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে থাকে। দুজনের ১৩৯ রানের জুটি শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের গ্যালারীতে থাকা দর্শকদের মাতিয়ে তোলে। দর্শকদের মুহুর্মুহু বাংলাদেশ বাংলাদেশ ধ্বনিতে নেচে ওঠে গোটা স্টেডিয়াম। এরই মাঝে সেঞ্চুরী তুলে নেন এ্যালেন। কিন্তু এক রান পরেই ১০১ রান করে এ্যালেন সাজঘরে ফেরার পর আবারও হোঁচট খায় বাংলাদেশ। কিন্তু অপর প্রান্তে রিজান একের পর এক চার মেরে দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন। অবেশষে ৪৬ ওভার শেষে বাংলাদেশ দলের রান যখন ৪ উইকেটে ২৩১ তখন আলো স্বল্পতায় খেলা শেষ করে দেন আম্পায়ার। অবশেষে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশকে ৫ রানে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। রিজান হোসেন অপরাজিত ছিলেন ৭৫ রানে। আফগানদের পক্ষে ওয়াহিদুল্লাহ জাদরান ২টি উইকেট লাভ করেন। এর আগে মঙ্গলবার সকালে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে আফগানিস্তান যুব দল। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৫ রান করার পর আফগান শিবিরে প্রথম আঘাত হানে বাংলাদেশ। ৫৬ রানে ২য় উইকেটের পতনের পর ঘুরে দাঁড়ায় আফগানিস্তান। শেষ মেষ মিডল অর্ডার ব্যাটার উজাইরুল্লাহর হার না মানা ১৪০ রানে ভর করে ৯ উইকেটে ২৬৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে সফরকারীরা। উজারুল্লাহ ১৩৭ বলে ১টি ছক্কা ও ১৬টি বাউন্ডারীতে এই রান করেন। দলের হয়ে খালিদ আহমাদজাই ৩৪ এবং ফয়সাল সিনোজাদা ৩৩ রান করেন। বাংলাদেশ দলের ইকবাল হোসেন ইমন ৫৭ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন। রিজান হোসেন ২টি, সবুজ ও আজিজুল হাকিম ১টি করে উইকেট লাভ করেন। বাংলাদেশ দলের পক্ষে সেঞ্চুরীয়ান কালাম সিদ্দিকী এ্যালেন প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন।ম্যাচ শেষে বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার প্রদান করেন। বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ও ম্যাচ রেফারি সেলিম সাহেদ এসময় উপস্থিত ছিলেন। এই জয়ের ফলে ৫ ম্যাচের ওানডে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশের যুবারা। ৩১ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৯টায় ২য় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে। বিনা টিকিটেই দর্শকরা এই ম্যাচটিও দেখার সুযোগ পাবেন।

দীর্ঘ ১৯ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেতে সকাল থেকেই দর্শকদের স্রোত নেমে আসে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে। বেলা বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে দর্শক উপস্থিতি। ১৮ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামের প্রায় বেশীর ভাগই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। আনুমানিক ১২ হাজারের মত দর্শক মাঠে বসে যুব ক্রিকেটারদের খেলা উপভোগ করেন। কিন্তু ম্যাচের ৪ ওভার বাঁকি থাকতেই আলোর ঘাটতিতে খেলা শেষ হওয়ায় হতাশ হয়ে বাড়ী ফেরেন দর্শকরা। অনেকে বোতল ছুঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্টেডিয়ামের চারপাশে ফøাডলাইটের বিশাল চারটি টাওয়ার দাঁড়িয়ে থাকলেও শুধুমাত্র আলোর অভাবে একটি জমজমাট খেলা বন্ধ হওয়া মেনে নিতে পারেননি দর্শকরা। তারা অতিদ্রুত ফøাডলাইট চালুর দাবি জানিয়েছেন।