নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বড় জয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। গতকাল সিলেটে প্রথম ম্যাচেই ব্যাটিং-বোলিংয়ে দাপট দেখিয়ে ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে টাইগাররা। এই জয়ে সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ দল। সিলেটে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান করে নেদারল্যান্ডস। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২৬ রান করেছেন তেজা। বাংলাদেশের হয়ে ২৮ রানে ৪ উইকেট শিকার করে ইনিংসের সেরা বোলার তাসকিন। জয়ের জন্য ১৩৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১৩ ওভার তিন বলে ৮ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারির পর তৃতীয় বলটি ছক্কায় উড়িয়ে দেন পারভেজ হোসেন ইমন। প্রথম ওভারে মার খেলে অফ স্পিনার আরিয়ান দত্ত অবশ্য শোধ তোলেন নিজের পরের ওভারেই। দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন পারভেজকে (৮ বলে ১৫)। লিটন ক্রিজে গিয়ে সেই আরিয়ানকেই টানা দুটি চার মারেন। বাঁহাতি স্পিনার ড্যানিয়েল ডোরামকে রিভার্স সুইপে ছক্কার পর তিনি চার মারেন কাভার দিয়ে। অধিনায়কের ঝড়ে পাওয়ার প্লেতে ৫৭ রান তোলে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লে শেষেও অধিনায়কের ব্যাটে সেই একই হাওয়া বইতে থাকে। তবে প্রথম বলে বাউন্ডারি দিয়ে শুরুর পর তানজিদ হাসান ঠিক ছন্দ পাননি আর। ৬৬ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তিনি অনেকটাই ছিলেন দর্শক। শেষ পর্যন্ত বাঁহাতি স্পিনার প্রিঙ্গলের ফুল টস লংঅনে তুলে দিয়ে বিদায় নেন এই ওপেনার (২৪ বলে ২৯)। ডাচদের অবশ্য লড়াইয়ে ফেরার কোনো সুযোগ দেননি লিটন। স্পিনের সামনে তার পায়ের কাজ ছিল দেখার মতো। উইকেটের চারপাশে শট খেলে ফিফটিতে পা রাখেন ২৬ বলেই। সবশেষ ১৯ ম্যাচে তার স্রেফ দ্বিতীয় ফিফটি এটি। গত সিরিজে দেশের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচে তার মোট রান ছিল ১৭। এশিয়া কাপের আগে অধিনায়কের ফর্মে ফেরা দলের জন্য বড় স্বস্তি। শেষ দিকে তিন ছক্কায় সাইফ হাসানের ১৯ বলে ৩৬ রানের ইনিংসও দলের জন্য সুখবর। ফেরার ম্যাচে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স তার দলে সুযোগ পাওয়ার কারণটিও ফুটিয়ে তুলছে। টানা দুটি ছক্কায় সাইফ শেষ করে দেন ম্যাচ। মোটামুটি সব প্রাপ্তির সন্তুষ্টি নিয়ে সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। এর আগে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১৩৬ রান করে নেদারল্যান্ডস। ফলে জয়ের জন্য ১৩৭ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। ব্যাট করতে নেমে নেদারল্যান্ডসের ওপেনার ম্যাক্স ও’ডাউড। তার মারকাটারি ব্যাটিংয়ে ৩ ওভারেই ডাচদের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ২৫ রান। শেখ মেহেদী ও শরিফুল ইসলামকে মেরে ১৪ বলেই ২৩ রান তোলেন ও’ডাইড। তবে অভিজ্ঞ পেসার তাসকিন বল হাতে নিতেই উইকেট বিলিয়ে দিতে বাধ্য হন ডাচ এই ওপেনার। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রথম বল হাতে নিয়েই ও’ডাইডকে আউট করেন তাসকিন। শট কভার অঞ্চলে জাকের আলী অনিকের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ডাচ ওপেনার। ব্যাক টু ব্যাক বোলিংয়ে এসে পরের ওভারের প্রথম বলেই আরেক ডাচ ওপেনার বিক্রমজিৎ সিংকেও (১১ বলে ৪) সাজঘরের পথ দেখান তাসকিন। এরপর চমক দেখান দুই বছর পর দলে জায়গা পাওয়া সাইফ হাসান। প্রথমবার বল হাতে নিয়েই উইকেট শিকার করেন এই অলরাউন্ডার। একটি নয়, ইনিংসের ১০তম আর নিজের প্রথম ওভারেই তুলে নিয়েছেন দুই দুটি উইকেট। সাইফের জোড়া আঘাতের পর শিকার ধরেন মোস্তাফিজুর রহমানও। সাইফ সাজঘরে ফেরান তেজা নিদারামানুরু (২৬ বলে ২৬) ও স্কট এডওয়ার্ডসকে (৭ বলে ১২)। আর মোস্তাফিজ আউট করেন শরিজ আহমেদকে (১৪ বলে ১৫)। নেদারল্যান্ডস থেমে যেতে পারতো ১০০ রানের আশপাশেই। তবে অষ্টম উইকেটে ১৫ বলে ২৭ রানের জুটি করে পুঁজি কিছুটা বাড়িয়ে নেন ট্রিম প্রিংগেল ও আরিয়া দত্ত। প্রিংগেল ১৪ বলে ১৬ রান করে ইনিংসের শেষ বলে দুইবার প্রান্ত বদল করতে গিয়ে রানআউট হন। ৮ বলে ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন আরিয়ান। বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ২৮ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ। সাইফ হাসান ২টি, আর মোস্তাফিজুর রহমান নেন ১ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

নেদারল্যান্ডস: ২০ ওভারে ১৩৬/৮ (ও’ডাউড ২৩, ভিক্রামজিৎ ৪, নিদামানুরু ২৬, এডওয়ার্ডস ১২, শারিজ ১৫, ক্রোস ১১, ক্লেইন ৯, প্রিঙ্গল ১৬*, আরিয়ান ১৩; মেহেদি ৪-০-২১-০, শরিফুল ৪-১-৩০-০, তাসকিন ৪-০-২৮-৪, মুস্তাফিজ ৪-০-১৯-১, রিশাদ ২-০-১৬-০, সাইফ ২-০-১৮-২)।

বাংলাদেশ: ১৩.৩ ওভারে ১৩৮/২(পারভেজ ১৫, তানজিদ ২৯, লিটন ৫৪*, সাইফ ৩৬*; আরিয়ান ৩-০-৩০-১, ক্লেইন ২-০-২৬-০, ডোরাম ৩-০-২৩-০, ফন মিকেরেন ২-০-১৭-০, শারিজ ১-০-১২-০, প্রিঙ্গল ২-০-১৬-১, ভিক্রামজিৎ ০.৩-০-১৪-০)

ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।