কামরুজ্জামান হিরু : লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের রেকর্ডগড়া বোলিংয়ে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৭৪ রানের দুর্দান্ত এক জয় পেয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম লেগ স্পিনার হিসেবে ৬ উইকেট পেলেন রিসাদ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল মেহেদি হাসান মিরাজের দল।শনিবার ‘হোম অব ক্রিকেট’ খ্যাত মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করে ৪৯.৪ ওভারে মাত্র ২০৭ রানে অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়ায় দারুণ শুরুর পরও রিশাদের ঘূর্ণি জাদুতে ৩৯ ওভারে ১৩৩ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে নতুন বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার ব্রেন্ডন কিং ও অ্যালিয়াঞ্জ অ্যাথিনেস বাংলাদেশের বোলারদের দারুণভাবে সামলেছেন। তাদের পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটিতে সহজ জয়ের পথেই ক্যারিবিয়ানরা। তবে রিশাদ হোসেন বোলিংয়ে আসতেই ম্যাচের ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা।
দলীয় ৫১ রানের মাথায় ৩৬ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ২৭ রান করা অ্যালিক আথানজেকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে ক্যারিবিয়ান শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন রিশাদ হোসেন। এরপর ২০তম ওভারে রিশাদের বলে স্লিপে সাইফ হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনে নামা কেসি কার্টি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩০ বলে ৯ রান। নিজের পরের ওভারে ফিরে আরো দুই উইকেট নিয়েছেন রিশাদ। ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ব্যান্ডন কিংয়ের ব্যাট ছুঁয়ে যায়। উইকেটকিপার সোহান দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় বল গ্লাভসবন্দি করেন। কিং ৬০ বলে করেছেন ৪৪ রান। চতুর্থ বলে ফিরিয়েছেন শারেফান রাদারফোর্ডকে। সোহানের গ্লাভসবন্দি হয়ে ডাক খেয়েছেন তিনি।২৪তম ওভারে আবারো উইকেটের দেখা পান রিশাদ। এবার তার শিকার রোস্টন চেজ। ৬ রান করে চেজ ফিরলে ৯২ রানেই পঞ্চম উইকেট হারায় ক্যারিবিয়ানরা। আর এই ৫ উইকেটের সবকটি গেছে রিশাদের ঝুলিতে। এটি তার ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার। বাংলাদেশের প্রথম ডানহাতি স্পিনার হিসেবেও ওয়ানডেতে ৫ উইকেট পেয়েছেন রিশাদ।
একশর আগেই ৫ উইকেট হারানো উইন্ডিজ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। রোস্টন চেজ-গুড়াকেশ মোতিরা চেষ্টা করেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। উইন্ডিজের ইনিংসে শেষ পেরেক মারেন রিশাদ। ৩৯তম ওভারে বোলিংয়ে ফেরেন এই লেগি। তার শেষ বলে মেহেদি হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন জেডন সিলস। এই ম্যাচের আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে রিশাদের সেরা বোলিং ছিল গত ১১ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩৭ রানে ২ উইকেট। সেটিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দিনেই ৬ উইকেট পেয়েছেন তিনি। এছাড়া পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ২টি এবং তানভীর ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজ ১টি করে উইকেট পান।
এর আগে প্রায় ৫০ ওভার খেলেও বলার মতো পুঁজি গড়তে পারেনি না বাংলাদেশ। একটা সময় তো দুইশর নিচেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। শেষদিকে রিশাদ হোসেন আর তানভীর ইসলামের ব্যাটে কোনোমতে সে শঙ্কা কেটেছে। শেষ পর্যন্ত ৪৯.৪ ওভারে ২০৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। মিরপুরে টস হেরে ব্যাট করতে নামে টাইগাররা। ৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই ধুঁকতে থাকে স্বাগতিক দল। তানজিদ হাসান তামিমকে বাদ দিয়ে ওপেনিংয়ে ফেরানো হয় সৌম্য সরকারকে। সঙ্গে ছিলেন সাইফ হাসান। দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলেই সাইফ হাসানকে এলবিডব্লিউ করেন রোমারিও শেফার্ডকে। এলবিডব্লিউটা এতটাই স্পষ্ট ছিল যে, সাইফ হাসান রিভিউ নেওয়ার সাহস করেননি। ৩ রানে বিদায় নেন তিনি।
এরপরের ওভারের প্রথম বলেই জেডেন সিলসকে কভার পয়েন্ট এরিয়া দিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন সৌম্য সরকার। দীর্ঘদিন পর দলে ফিরে ৪ রানেই সাজঘরে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।তৃতীয় উইকেটে হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত আর তাওহিদ হৃদয়। যদিও জুটিটি ছিল ধীরগতির। ১২০ বল খেলে ৭১ রান যোগ করেন তারা। শান্তর এলবিডব্লিউয়ে ভাঙে এই জুটি। খারে পিয়েরির বলে ফেরার আগে শান্ত করেন ৬৩ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৩২।
এরপর দলকে অনেকটা পথ এগিয়ে নেন হৃদয়। তবে মিরপুরের ধীরগতির পিচে তার হাফসেঞ্চুরি করতে লেগেছে ৮৭ বল! তবে ক্যারিয়ারের ১১তম ফিফটির পর বেশিদূর এগোতে পারেননি তিনি। ৫১ রানেই সাজঘরে ফিরেছেন হৃদয়।জাস্টিন গ্রেভসের অনেকটা বাইরের বলে খোঁচা মেরে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়েছেন হৃদয়। ৯০ বলে ৫১ রানের ইনিংসে ৩টি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।
পঞ্চম উইকেটে অঙ্কন আর মেহেদী হাসান মিরাজ যোগ করেন ৫৫ বলে ৪৩ রান। রস্টন চেজের স্পিনে মিরাজ ছক্কা হাঁকাতে গেলে ভাঙে এই জুটি। ২৭ বলে ১৭ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরপর নিজের ভুলে ফিফটি মিস করেন অভিষিক্ত অঙ্কন। চেজকে হাঁটু গেড়ে বড় শট মারতে গিয়ে মিস করেন, হন বোল্ড। ৭৬ বলে ৪৬ রানের ইনিংসে ৩টি চার মারেন অঙ্কন। ১৬৫ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।নুরুল হাসান সোহান করেন ১০ বলে ৯। রিশাদ হোসেন ১২ বলে ১ চার আর ২ ছক্কায় ২৬ রানের ক্যামিও উপহার দিয়ে দলকে দুইশর কাছাকাছি নিয়ে যান। ৪ বলে ১ ছক্কায় ৯ করেন তানভীর ইসলাম।ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেডেন সিলস ৩টি এবং রস্টন চেজ ও জাস্টিন গ্রেভস নেন ২টি করে উইকেট।