গতকাল ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে সারা দেশ। সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে কয়েক সেকেন্ডের সেই ভূমিকম্পে মাটি ও দালানকোঠাসহ কেঁপেছে চারপাশ। অল্প সময়ের জন্য হলেও থমকে গিয়েছিল গোটা দেশ। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামও এর বাইরে ছিল না। মাঠে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ চলছিল। হঠাৎ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো চারপাশ। বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের ড্রেসিংরুম থেকে মুহূর্তে সংকেত দেয়া হলো ভূমিকম্প হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে খেলা বন্ধ করলেন আম্পায়াররা। বাংলাদেশ দলের হেড কোচ ফিল সিমন্স তো ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে মাঠের বাইরেই চলে যান। তবে মাঠেই ছিলেন বাংলাদেশ দলের ১১ ফিল্ডার। দুই আইরিশ ব্যাটার ও দুই আম্পায়ার। এমন ভূমিকম্পে যে খোলা মাঠই তুলনামূলক নিরাপদ। তাই ক্রিকেটাররা ড্রেসিংরুমে না গিয়ে মাঠেই অবস্থান করেছেন। এভাবেই কেটে যায় কয়েক মিনিট। তিন মিনিট বন্ধ থাকার পর ১০টা ৪১ মিনিটে আবার শুরু হয় বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডের টেস্ট ম্যাচ। গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা তখন আয়ারল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের ৫৬তম ওভার চলছে। মেহেদী হাসান মিরাজের ওভারের দ্বিতীয় বলের পরই মাঠে উপস্থিত সবাই ভূমিকম্পের কম্পন টের পান। এই কম্পনে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক দর্শক দ্রুত নিচে নেমে আসতে শুরু করেন। তবে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ভূমিকম্প থেমে গেলে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয় এবং খেলা পুনরায় শুরু হয়। খেলা শুরুর কিছুক্ষণ পরই বাংলাদেশের স্পিনার তাইজুল ইসলাম দুর্দান্ত বোলিং করেন। একই ওভারে তিনি আউট করেন স্টিফেন ডোহেনি ও অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে। এতে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস দ্রুত চাপের মুখে পড়ে। ক্রিকেট মাঠে ভূমিকম্পের কারণে খেলা বন্ধ হওয়া অত্যন্ত বিরল ঘটনা। এর আগে সর্বশেষ এমন ঘটনা ঘটেছিল ২০২২ সালে, জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ ম্যাচে। সেবার ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্পে কুইন্স পার্ক ওভালে খেলা সাময়িক বন্ধ হয়েছিল। সেই ম্যাচে ধারাভাষ্যকক্ষে থাকা অ্যান্ড্রু লিওনার্ড মন্তব্য করেছিলেন, পুরো মিডিয়া সেন্টারই কেঁপে উঠেছিল।
গতকাল মিরপুর টেস্টেও প্রায় একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেল ক্রিকেটার, দর্শক ও মাঠের কর্মীরা। তবে সৌভাগ্যবশত বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, খেলা অল্প বিরতির পর আবার স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে। ঠিক সেই সময়টায় ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল ? মাঠে থাকা ক্রিকেটাররা কি অনুভব করছিলেন? গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সকালের ভূমিকম্পের সময়ের অনুভূতি শেয়ার করলেন বাংলাদেশের তাইজুল ও আয়ারল্যান্ডের হাইনরিখ মালান । বাঁহাতি টাইগার স্পিনার তাইজুলরা মাঠে ছিলেন। প্রথমে বুঝতে পারেননি কি হয়েছে। তাইজুলের ভাষায়, ‘আসলে প্রথমে বুঝতে পারিনি। কিন্তু একটা সময় সম্ভবত মিডিয়া বক্স যে জায়গায়, সেখান থেকে একটা আওয়াজ আসছিল। ঐ একটা শব্দ আসছে দেখে তারপর অনুভব করি কিছু একটা হচ্ছে। তারপরে শারীরিকভাবেও একটা অনুভব হয়েছে। ঐ সময়ে একটা আতঙ্ক কাজ করছিল।’ আইরিশ কোচ হাইনরিখ মালান যদিও প্রোটিয়া, তবে এক সময় নিউজিল্যান্ডেও ছিলেন। সেই সময় ভূমিকম্প দেখার অভিজ্ঞতা আছে। তা জানিয়ে আইরিশ কোচ জানান, ‘দেখুন, আমি ব্যাক্তিগতভাবে কিছু ভূমিকম্পের ঘটনার সাক্ষী হয়েছি। আমি যখন নিউজিল্যান্ডে বাস করতাম। এটা কখনোই ভালো অনুভূতি না। এখানেও তাই।’ সফরকারী দলের কোচ আরও বলেন, ‘চেষ্টা করছিলাম মিনিট ধরে কী হচ্ছিল আমাদের ঘিরে। সঙ্গে চিন্তা ঘুরপাক খেয়েছে আরও বড় প্রভাবের কথা যে ভূমিকম্পটা হলো, সেটার ক্ষতি যেন খুব বেশি না হয় এই আশা। কয়েক মিনিটের জন্য যেন সব থমকে গিয়েছিল। তারপর আবার আমরা খেলায় ফিরেছি। এখন ভাবনাটা একটাই, যেন কোথাও বড় ধরনের ক্ষতি না হয়ে থাকে। অবশ্যই খোজাঁর চেষ্টা করব পরিস্থিতি যেটা হয়েছে তার বিষয়ে।’