জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৯৪ রান। ১১২ রানের লিড নিয়ে গতকাল দিন পার করেছে বাংলাদেশ। ফলে সিলেট টেস্টে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল টাইগাররা। জবাবে ২৭৩ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। ফলে প্রথম ইনিংসেই ৮২ রানে পিছিয়ে পড়ে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। আলোক স্বল্পতায় তৃতীয় দিনের খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ৪ উইকেটে ১৯৪ রান তুলেছে স্বাগতিকরা। এখন পর্যন্ত লিড ১১২ রানের। শেষ বিকেলে দলকে ভরসা দিয়েছেন অধিনায়ক শান্ত আর জাকের আলী। ১৫.২ ওভার ব্যাটিং করে এখন পর্যন্ত তারা অবিচ্ছিন্ন আছেন ৩৯ রানে। এরই মধ্যে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি তুলে নিয়েছেন শান্ত। ১০৩ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৬০ রানে অপরাজিত আছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৬০ বলে ৩ বাউন্ডারিতে জাকের অপরাজিত ২১ রানে। এই টেস্টে বাংলাদেশ কত রানের টার্গেট দিতে পারবে এটাই এখন দেখার বিষয়। তবে দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা মুমিনুল হক বলছিলেন, '৩০০ হলে খুব ভালো। সেটা না হলে ২৭০ থেকে ২৮০ এর ওপরে। আর ৩০০ হলে আমরা ভালো জায়গায় থাকবো। আত্মবিশ্বাস এই কারণে শান্ত জাকেরের পরে আমাদের টেলএন্ডারে যারা রয়েছেন তাইজুল তারপরে হাসান তারা ব্যাটিং করতে পারে। এজন্য আত্মবিশ্বাসটা বেশি।' মুমিনুল বললেন, 'অবশ্যই এসব জায়গা আমাদের যারা দুজন ব্যাটিং করছেন, এরপরে মিরাজ রয়েছেন অনেক ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিং করতে হবে, কালকে সকালে খেলা হয়তো খুব কঠিন হয়ে আসবে। সে সময়ে ক্যাল্কুলেটিভভাবে ব্যাটিং করা লাগবে, একটা সময় খেলাটা একটু ছাড়বে। সে সময়ে আমরা খেলাটা ধরতে পারবো।’

মুমিনুল আরো বলেন, ‘ক্রান্স মোমেন্ট, আমাদের যে সময়টা থাকবে সে সময়ে লম্বা সময়ের জন্য মনোযোগ দিয়ে ব্যাটিং করতে হবে। আমার আর শান্তর যেমন ৫০ রানের একটি জুটি হয়েছিল ওই জায়গা থেকে আমরা বের হয়ে গেছি এরকম কিছু মুহূর্ত লাগবে। সে সময় ৫০ রান কিংবা দেড়শো-১৭০ রানের জুটি করলে তখন তিনশ রানের লক্ষ্য সম্ভব।' দ্বিতীয় ইনিংসে সেট হয়ে বড় রান করতে ব্যর্থ মুমিনুল। বড় করতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলছিলেন, 'অবশ্যই, প্রস্তুতি ৫ দিনের নিয়েছি। আমার কাছে মনে হয় খুব একটা ভালো প্রস্তুতি ছিল। টেস্ট ম্যাচ যখন খেলি, তখন ১০০ এর চিন্তাভাবনা করে খেলি না। চিন্তা করি তিন-চার-পাঁচ সেশন কীভাবে ব্যাটিং করা যায়। আমি সিনিয়র ব্যাটার হয়েও দুই ইনিংসে সেট হয়ে আউট হয়েছি, হয়তো এক সেশন ব্যাটিং করেছি। আমার কাছ থেকে এটা কোনোভাবেই কাম্য না৷ তিন সেশন ব্যাটিং করতে পারলে প্রথম বা সেকেন্ড ইনিংসে ভালো একটা পজিশনে যেতে পারতাম।' বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে আরও একটি গৌরবময় অধ্যায় যোগ করলেন মুমিনুল হক। টাইগারদের হয়ে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ নেয়ার রেকর্ড এখন এই অভিজ্ঞ ব্যাটারের দখলে। সিলেটে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার চলমান টেস্টে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে পৌঁছান মুমিনুল। নাহিদ রানার বলে বেন কারানের ক্যাচ ধরেই তিনি ছুঁয়ে ফেলেন ৪১ ক্যাচের মাইলফলক, যার মাধ্যমে তিনি ছাড়িয়ে যান পূর্ববর্তী শীর্ষস্থানে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজকে। ২০১৩ সালে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করা মুমিনুল এখন পর্যন্ত ৭০টি টেস্টে ১২১ ইনিংসে ৪১টি ক্যাচ নিয়েছেন।

ক্যাচ নেয়ার গড় ০.৩৩৮ হলেও ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ফলে তিনিই এখন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ফিল্ডার। সবচেয়ে বেশি তিনটি ক্যাচ তিনি নিয়েছেন এক ইনিংসে। পূর্বে এই তালিকার শীর্ষে ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, যিনি ৫২ টেস্টের ৯৪ ইনিংসে ৪০টি ক্যাচ নিয়েছেন (গড় ০.৪২৫)। তৃতীয় স্থানে আছেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, যার ক্যাচ সংখ্যা ৩৮। তালিকার চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছেন যথাক্রমে ইমরুল কায়েস (৩০ ক্যাচ) এবং সাকিব আল হাসান (২৯ ক্যাচ)। সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৪ টেস্টে ২৮টি ক্যাচ নিয়ে দ্রুতই উপরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ফিল্ডিং লাইনআপে নির্ভরযোগ্য একজন খেলোয়াড় হিসেবে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন মুমিনুল হক। সর্বোচ্চ ক্যাচ নেয়ার এই রেকর্ড নিঃসন্দেহে তার ক্যারিয়ারের এক বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে।