মিরপুর স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং দলের চার দিনের ম্যাচে ঘটেছে এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। খেলাধুলার সৌহার্দ্যকে ভেঙে দিয়ে মাঠেই দুই খেলোয়াড় জড়িয়ে পড়েন শারীরিক বিরোধে। এই অনভিপ্রেত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন বাংলাদেশের রিপন মন্ডল ও দক্ষিণ আফ্রিকার ইনোসেন্ট এনটুলি। ঘটনাটি বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের ইনিংসের ১০৪তম ওভারে। দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিংয়ের বোলার ইনোসেন্ট এনতুলির করা প্রথম বলে ছক্কা হাঁকান রিপন। এরপরই রিপনের দিকে এগিয়ে যান এনটুলি, শুরুতে তাকে ধাক্কা দেন। রিপনকে বারবার ক্রিজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে রিপনের হেলমেট ধরে টান দেন প্রোটিয়া এই পেসার। পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকজন ফিল্ডার ও আম্পায়াররা এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। ততক্ষণে অবশ্য এক দফা হাতাহাতি হয়ে গেছে দুই ক্রিকেটারের মধ্যে। যদিও পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার বদলে আম্পায়ারদের সামনেই দ্বিতীয়বারের মতো রিপনের হেলমেট ধরে জোর করে টানার চেষ্টা করেন প্রোটিয়া পেসার। দুই দফায় আম্পায়ারদের প্রচেষ্টায় দু’জনকে আলাদা করা গেলেও এনটুলির উত্তেজনা তখনও কমেনি। এক হাতে ইঙ্গিত করতে করতে রিপনের দিকে কিছু বলতে থাকেন তিনি। ক্রিকেট মাঠে এমন আচরণ নিঃসন্দেহে খেলোয়াড়দের পেশাদারিত্ব ও স্পোর্টসম্যানশিপকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। মাঠের ঘটনা নিয়ে ম্যাচ রেফারি সেলিম শাহেদ বলেছেন, ‘আম্পায়ার রিপোর্ট দেবে। এরপর আমরা এর বিষয়ে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। এখন তাই কী হবে বলা যাচ্ছে না।’ ঘটনার পরে ঠা-া মাথায় ব্যাটিং করেছেন রিপন। যদিও লাঞ্চের পর এসে এনটুলির বলেই আউট হন তিনি। আউট হওয়ার আগে খেলেন ৪৩ রানের ইনিংস। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ ইমার্জিং দল ৩৭১ রান করেছে। রিপনকে স্ট্যাস্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে আউট করার পর অবশ্য খুব বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়নি প্রোটিয়া এই পেসারকে। এদিকে রিপন ম-লের করা ৮১ বলে ৪৩ রানের লড়াকু ইনিংসে দলের বড় সংগ্রহে অবদান রাখেন। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ইমার্জিং দল তোলে ৩৭১ রান। লেজের ব্যাটসম্যানদের লড়াইয়ে সাড়ে তিনশ ছাড়ানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং দলের ৬ উইকেট নিয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় চার দিনের ম্যাচে দ্বিতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৫২ রান। বাংলাদেশের চেয়ে ২১৯ রানে পিছিয়ে তারা। ফলো-অন এড়াতে প্রয়োজন আরও ৭০ রান। ৭ উইকেটে ২৪২ রান নিয়ে গতকালের খেলা শুরু করা বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত থামে ৩৭১ রানে। দলকে সাড়ে তিনশ পার করানোর কারিগর লেজের তিন ব্যাটসম্যান রকিবুল, রিপন ও মেহেদি হাসান। তাদের দারুণ লড়াইয়ে এ দিন আরও ১২৯ রান যোগ করে বাংলাদেশ। স্পষ্ট দুই ভাগে বিভক্ত বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। ওপেনার ইফতেখার হোসেনের সেঞ্চুরির পরও প্রথম ছয় ব্যাটসম্যান মিলে করতে পারেন মাত্র ১১৯ রান। বাকি পাঁচ জনের কেউ দুই অঙ্কও ছুঁতে পারেননি। আর শেষের পাঁচ ব্যাটসম্যানের চারজনই খেলেন ত্রিশছোঁয়া ইনিংস। সব মিলিয়ে তাদের ব্যাট থেকে আসে ২০৯ রান। এর সঙ্গে অতিরিক্ত পাওয়া ৪৩ রানের সৌজন্যে ৩৭০ ছাড়ায় স্বাগতিকরা। নতুন দিনে প্রথম ঘণ্টায় উইকেট পড়তে দেননি রকিবুল ও রিপন।
পানি পানের বিরতির পর কোবানি মোকোয়েনার শর্ট বলে ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে দিনের প্রথম ছক্কা পেয়ে যান রকিবুল। পরের বলে আবার পুল করার চেষ্টায় লাগে তার ব্যাটের কানায়। শর্ট কাভারে সহজ ক্যাচ নেন ডিয়ান ফরেস্টার। ৪৫ রানে ভাঙে জুটি। ৩১ রান করে ফেরেন রকিবুল। মধ্যাহ্ন বিরতির পর টিকতে পারেননি রিপন। সেই এনটুলির বলেই ক্রিজ ছেড়ে মারার চেষ্টায় স্টাম্পড হন তিনি। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৮১ বলে করেন ৪৩ রান। তার বিদায়ে ভাঙে ৬৭ রানের নবম উইকেট জুটি। এরপর নাঈম আহমেদের সঙ্গে জুটিতে ১৯ রান যোগ করেন মেহেদি। আন্দিলে মোগাকানের বেশ কয়েকটি শর্ট বলে পরাস্ত হওয়ার পর স্লোয়ারে ক্যাচ আউট হন নাঈম। ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৮ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন মেহেদি। প্রোটিয়াদের হয়ে ৪২ রানে ৪ উইকেট নেন মোগাকানে। ৪০ ওভার হাত ঘুরিয়ে এনটুলি পান ৩ উইকেট। ইনিংসজুড়ে এলোমেলো বোলিংয়ে মোট ১৭টি 'নো' বল করে সফরকারীরা। এর মধ্যে মোকোয়েনা একাই করেন ১০টি। শেষ দিকে আলোকস্বল্পতায় আগেভাগে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। কনর এস্তেহেইজেন ও জর্জ-ফন হিয়ার্ডিন তৃতীয় দিনে ফলো-অন এড়ানোর লড়াইয়ে নামবেন।