বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করবেন না সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ। কারণ তার দাবী, তিনি নির্বাচিত বোর্ড সভাপতি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদকে পদত্যাগ করতে বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তার জায়াগায় অক্টোবরে বোর্ডের নির্বাচন পর্যন্ত বিসিবি প্রধান হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে নিয়োগ দিতে চায় সরকার। এ নিয়ে ২৮ মে রাতে নিজ বাসভবনে এক বৈঠকে ফারুক আহমেদকে সরকারের এই মনোভাবের কথা জানান ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। কিন্তু বৈঠকে পদত্যাগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানাননি ফারুক। চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ২-১ দিন সময় চেয়েছিলেন তিনি। ক্রিকেট বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম ক্রিকইনফো জানিয়েছে, বিসিবি সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করবেন না সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ। তিনি জানান, ‘ক্রীড়া উপদেষ্টা আমাকে পদত্যাগ করতে বলেননি। বলেছেন, তারা আমার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে চান না। কিন্তু আমি পদত্যাগ করবো না। কারণ আমি নির্বাচিত বোর্ড সভাপতি। আমার অফিসিয়াল বক্তব্য হচ্ছে, আমি এখনো চিন্তা করছি। কিছু সময় প্রয়োজন। আমি কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না, ঠিক কী কারণে পদত্যাগ করব। আমাকে পদত্যাগের কথা বলা হয়নি।' সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যর্থতা বা ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কারণ তাকে জানানো হয়নি তাকে। ফারুক নিজেই জানালেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই আমার প্রশ্ন ছিলÑকেন আমাকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে সরকার? ক্রীড়া উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাকে নাকি সরকারের ওপরমহল আর পছন্দ করছে না। এখন ওপরমহল মানে কারা, সেটা আপনারাই বুঝে নিন।’ তবে এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন ফারুক আহমেদ। তার মতে, যদি সত্যিই তার ব্যর্থতা থাকত, তাহলে সেটি জানানো হতো। ‘আমাকে আমার ব্যর্থতার কথা বলা হলে বুঝতাম কোথায় ভুল করেছি। কিন্তু কিছুই তো বলা হয়নি। শুধু বলা হচ্ছে, ওপরমহল আমাকে চায় না। তাহলে আমি কেন পদত্যাগ করব?’ তার বক্তব্যে উঠে এসেছে আরও গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। বিসিবির ভেতরে চলছে ষড়যন্ত্র। বিশেষ করে বোর্ডে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপের পর থেকে কিছু পরিচালকের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি, ‘তৃতীয় বিভাগের বাছাই ক্রিকেটে অনিয়মের তদন্তে বোর্ড পরিচালকদের একাংশের সম্পৃক্ততা প্রমাণ হয়েছে। বিপিএলে টিকিট বিক্রির নতুন পদ্ধতি চালু করে অনেক অপচয় রোধ করেছি। অথচ একজন পরিচালক আগের দুর্নীতিপূর্ণ পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। আমি সেটি হতে দেইনি। এরাই এখন ষড়যন্ত্র করছে।’ পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তের কারণে সরকার ও বোর্ডের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও জটিল হতে পারে কি নাÑএমন প্রশ্নে ফারুক বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর আমি কয়েক দিন পর দেব। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি তো এই পদ চাইনি, কারো দরজায়ও যাইনি। আমাকে ডেকে এনে সভাপতি করা হয়েছিল। এখন সরাতে হলে সুনির্দিষ্ট কারণও বলা উচিত।’ গত কিছু দিন ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ পদে পরিবর্তনের গুঞ্জন চলছে। এর মধ্যে শোনা যায়, বিসিবির দায়িত্ব নিতে পারেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব পেয়ে বিসিবিতে আসতে রাজিও আছেন তিনি। তবে সেক্ষেত্রে আগে ফারুককে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় তাকে সরিয়ে দেওয়া হলে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার খড়গ রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সব জায়গায় সংস্কারের হাওয়া লাগে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিসিবির সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলমের জায়গায় ফারুক আহমেদ ও নাজমূল আবেদীনকে বিসিবি পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। এরপর ২১ আগস্ট বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন পদত্যাগের পর বোর্ড সভায় পরিচালকদের বোর্ড ফারুক আহমেদ সভাপতি নির্বাচিত হন। সরকার মনোনীত পরিচালক হয়ে বোর্ড সভাপতি হওয়ার মাত্র ৯ মাস পর সরকারই কেন ফারুককে সভাপতির পদ থেকে সরাতে চাইছে, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাকে পদত্যাগ করতে বললেও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। তাকে জোরপূর্বক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিলে তা সরকারি হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। এতে করে আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেট। অতীতে ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলংকার ক্রিকেটকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা ভোগ করতে হয়েছিল। এদিকে কাল ৩১ মে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের যে সভা হওয়ার কথা ছিল, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেটি স্থগিত হতে পারে।
ক্রিকেট
আমি পদত্যাগের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না ------ফারুক আহমেদ
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করবেন না সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ।
Printed Edition
