আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হারের ব্যর্থতা ভুলে ঘরের মাঠে নতুন করে আজ মাঠে নামছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তিন ম্যাচ সিরিজের আজ প্রথম ওয়ানডে। প্রথম ম্যাচেই জয় দিয়ে শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডে সিরিজের আগে আত্মবিশ্বাসী টাইগার শিবির। গত সিরিজের ব্যর্থতা ভুলে নতুন করে শুরু করতে চান খেলোয়াড়রা। এমনটাই জানালেন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। গতকাল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে এসে সিমন্স বলেন,‘শেষ সিরিজে যেটা হয়েছে, সেটা পেছনে ফেলে দিতে হবে। আমরা জানি, আমরা তার চেয়ে অনেক ভালো দল এবং অনেক ভালো খেলতে পারি। তাই অনুশীলনে এখন পুরো মনোযোগ।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কার মতো দলে খেলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে সাহায্য করবে। ’ সিমন্স বলেন, ‘আমরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলেছি, তাদের স্পিনাররা দুর্দান্ত। তাই এই অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে আসবে। এখন আমাদের বোলাররা স্পিনার আর পেসাররা নিজেদের কাজটা ভালোভাবে করছে। ’ মিরাজের নেতৃত্ব নিয়েও কথা বলেন টাইগার হেড কোচ। তিনি বলেন, ‘মিরাজের অধিনায়কত্ব নিয়ে এখনই বিচার করা ঠিক না। মাঠে তার নেতৃত্ব ভালো। কিন্তু ম্যাচ জেতা নির্ভর করে ব্যাটসম্যানদের ওপরও। যদি ব্যাটসম্যানরা রান না করে, তাহলে কোনো অধিনায়কই জিততে পারবে না। মাঠে মিরাজ ভালো করছে, কিন্তু জেতার জন্য সবার অবদান দরকার। ’ সিমন্স জানান, দলের দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর মূল কৌশল মানসিকভাবে ইতিবাচক থাকা ও প্রস্তুতিতে ফোকাস রাখা। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি অনুশীলনে সঠিক দিকটা বজায় রাখতে। আগের ভুলগুলো ভুলে যাই, নতুন দিনে কিভাবে ভালো খেলব সেটাই ভাবি।’ তিনি আরও বলেন, তরুণ ক্রিকেটারদের পরিপক্বতা বাড়ানোই এখন অন্যতম লক্ষ্য। সিমন্সের মতে, ‘আমাদের দলে অনেক তরুণ আছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সময় নিয়ে পরিণত হয়, কেউ দ্রুত শেখে। আমরা চাই, ওদের মধ্যে সেই পরিণতিটা দ্রুত আসুক, কারণ ওদের সামর্থ্য আছে সেরা হওয়ার। ’ সিরিজের দল নির্বাচন নিয়ে সিমন্স ইঙ্গিত দেন, সিদ্ধান্ত হবে অনুশীলনের পর। তার মতে, ‘আজকের অনুশীলনের পরই আমরা ঠিক করব, কাল কেমন কম্বিনেশন নিয়ে নামব। এছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। টাইগার হেড কোচ মনে করেন, ব্যক্তিগতভাবে কেউ সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকতেই পারে। তবে জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে এসব জায়গা এড়িয়ে চলা উচিত। ক্রিকেটাররা খারাপ পারফরম্যান্স করে যখন সমালোচিত হন, যখন সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন; তখন তারা মাঠে জবাব দেওয়ার বদলে সোশ্যাল মিডিয়ায় জবাব দেন। এই বিষয়টিই পছন্দ করছেন না হেড কোচ সিমন্স। বাংলাদেশ কোচ বলেন, ‘আমি প্রথমত খেলোয়াড়দের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু করার বিষয়ে একমত নই। একজন ব্যক্তি হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা, আপনি যা চান তা বলার অধিকার আছে। কিন্তু একজন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হিসেবে, বাংলাদেশের একজন জাতীয় খেলোয়াড় হিসেবে, আমার খেলোয়াড়দের সেখানে থাকা উচিত নয়।’ অতি সম্প্রতি আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ শেষ করে দেশে ফিরে বিমানবন্দর থেকে বাসায় যাওয়ার পথে কিছু উশৃঙ্খল জনতা নাইম শেখসহ একাধিক ক্রিকেটারের গাড়ি আটকে আপত্তিকর কথাবার্তা বলে তাদের নাজেহাল করে। তার উত্তরে বাঁহাতি টপঅর্ডার ব্যাটার নাইম শেখ নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তা ফেসবুকে বেশ সাড়া জাগালেও হেড কোচ সিমন্স মোটেই খুশি হননি। তিনি বুঝিয়ে দিলেন, মাঠের বাইরের কোনো ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট না করলেই ভালো হয়। তাই মুখে একথা, ‘আমি চাই না আমার খেলোয়াড়রা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো কিছুর উত্তর দিক।’ তবে সিমন্স তার দলের কোনো ক্রিকেটারের সঙ্গে বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণের পক্ষে নন। বিশেষ করে জাকের আলীর মতো ক্রিকেটারদের গায়ের রং নিয়ে নানা আপত্তিকর কথা বলা হয়। এই বিষয়টি কিছুতেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। সিমন্সের পরিষ্কার কথা, ‘আমি বলব খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কিছুতে যেন বর্ণবাদী সুর আনা না হয়। আপনি কোথা থেকে এসেছেন, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। এর বর্ণবাদী অংশটি নিয়ে আমি বিরক্ত। জাকের আলী বা নাইম শেখের বিরুদ্ধে এটা ভালো নয়।’