প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে মোহামেডান-আবাহনী লড়াই আজ। সকাল ৯টায় শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হবে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের এ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। দুই দলেরই প্রথম রাউন্ডে এটা শেষ ম্যাচ। আগের ১০ খেলায় ৯টিতে জিতে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে এককভাবে সবার ওপরে আবাহনী। আর সমান ম্যাচে ২ পরাজয় ও ৮ জয়ে ১৬ পয়েন্ট পাওয়া মোহামেডান আছে দ্বিতীয় স্থানে। নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, পারভেজ হোসেন ইমনের দল আবাহনী জিতলে অবস্থান হবে আরও মজবুত। তখন নিকট প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে আরও ২ পয়েন্ট মানে মোট ৪ পয়েন্ট এগিয়ে যাবে আকাশি-হলুদরা। অন্যদিকে রনি তালুকদার, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, আবু হায়দার রনি, এবাদত হোসেন ও তাইজুল ইসলামে গড়া মোহামেডান জিতে গেলে পয়েন্টে আবাহনীকে ছুঁয়ে ফেলবে। নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবালের হার্টঅ্যাটাক হওয়ার পর দল পরিচালনায় আসা তাওহিদ হৃদয়ের নেতৃত্বে কাগজে-কলমের এক নম্বর দল মোহামেডান শেষ ম্যাচে এসে আবাহনীর সমান (১১ খেলায় ১৮ করে) পয়েন্ট পাবে কিনা, সেটাই দেখার। একসময় দুই দলই ছিল প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। ৭০ দশকের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে ৮০-৯০ দশক ও বর্তমান শতাব্দীর প্রথম দিকেও ঢাকাই ক্রিকেটে আবাহনী আর মোহামেডানই ছিল শেষ কথা। সাথে ভিক্টোরিয়া, আজাদ বয়েজ, বিমান, কলাবাগান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, জিএমসিসি আর রুপালী ব্যাংকও ছিল। তবে বেশিরভাগ সময় শিরোপা লড়াইটা মোটামুটি আবাহনী আর মোহামেডানের মধ্যেই কেন্দ্রীভূত থাকতো। ঢাকা লিগ, দামাল স্মৃতি, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস ও স্বাধীনতা দিবস ক্রিকেটের বেশিরভাগ ট্রফি উঠেছে আকাশি হলুদ ও সাদাকালো শিবিরেই। গতবার আবাহনী ও মোহামেডান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে সেয়ানে-সেয়ানে। আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আর মোহামেডানকে রানার্সআপ হয়েই তুষ্ট থাকতে হয়। এবারও দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী আছে খুব কাছাকাছি। অবশ্য এবারের দল দুটির যাত্রা শুরু হয়েছিল হার দিয়ে। নাজমুল হোসেন শান্তর আবাহনীর লিগ যাত্রা শুরু হয় ইমরুল কায়েসের অগ্রণী ব্যাংকের কাছে হেরে। আর মোহামেডান প্রথম দিন হোঁচট খেয়েছিল নবাগত গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের কাছে। প্রথম ম্যাচের হারের ধাক্কা সামলে নিয়েছে আবাহনী। তারপর টানা ৯ ম্যাচ জিতেছে আকাশি-হলুদরা।
অন্যদিকে মোহামেডান একটি ম্যাচ বেশি হেরেছে; গুলশানের পর হেরেছে এনামুল হক বিজয়ের গাজী গ্রুপের কাছে। দুই দলই বেশ ভালো খেলেছে। আবাহনীর পক্ষে বাঁহাতি ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন আছেন ফর্মের তুঙ্গে। মাত্র ১৫ বলে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড গড়া এ বাঁহাতি ওপেনার ১০ ম্যাচে ৫৩৩ রান করেছেন। রান তোলায় এখন তিন নম্বরে অবস্থান করছেন তিনি। এছাড়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের দুর্দান্ত অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স (১৯ উইকেট ও ৩৪৩ রান) আবাহনীর সবচেয়ে বড় আস্থা ও নির্ভরতার জায়গা। এবারের লিগে মোসাদ্দেকই ছিলেন আবাহনীর প্রধান চালিকাশক্তি। ব্যাট ও বল হাতে দলের প্রয়োজনে সেরা পারফর্ম করেছেন এ অলরাউন্ডার। ব্যাটারদের মধ্যে মোহাম্মদ মিঠুন (৯ ম্যাচে ৩৩৬ রান) এবং অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও (৮ ম্যাচে ২৮২ রান) মোটামুটি পারফর্ম করেছেন। বোলারদের মধ্যে আবাহনীর সবচেয়ে সফল পারফরমার বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসান। ২১ উইকেট দখল করে রাকিবুল এখন উইকেট শিকারে দ্বিতীয়। অন্যদিকে মোহামেডানের সবচেয়ে বড় আফসোস ও অনুশোচনার নাম তামিম ইকবাল। হার্ট অ্যাটাকের আগে দু-দুটি ম্যাচ জেতানো শতক উপহার দিয়ে ৭ ম্যাচে ৩৬৮ রান করে ফেলেছিলেন মোহামেডানের প্রধান ভরসা। তামিমের অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতির পর মোহামেডান ব্যাটিংয়ের হাল ধরেছেন মূলত দুজন-মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (১০ ম্যাচে ৩৮৩ রান) এবং অধিনায়ক তাওহিদ হৃদয় (৭ ম্যাচে ৩৬৫ রান)। এছাড়া ওপেনার রনি তালুকদার (৩১০ রান) ও মেহেদী হাসান মিরাজও (২৪৪ রান) মাঝেমধ্যে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠে দলকে এগিয়ে নিতে রেখেছেন কার্যকর অবদান। তবে দুই সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম (৭ ম্যাচে ১৭৩ রান) আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৪ ম্যাচে ব্যাট করে ৩৩ রান) সে তুলনায় নিষ্প্রভ। কার্যকর অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। সে তুলনায় মোহামেডান বোলাররা অনেক বেশি ভালো বল করেছেন। সমীহ আদায়ের পাশাপাশি সাফল্যও বয়ে এনেছেন। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বোলিং লাইন আপে। এ বাঁহাতি স্পিনার ১০ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে সর্বাধিক উইকেট শিকারি।