রাজনীতির দুষ্টুচক্রে আটকা পড়ে ঝিমিয়ে থাকা বগুড়ার ক্রীড়াঙ্গন আবারও সতেজ হয়ে উঠছে। নানান সীমাবদ্ধার জাল ছিন্ন করে সাফল্যের পথে হাঁটছে ক্রীড়াঙ্গন। অভিজ্ঞতার সাথে তারুণ্যের মিশ্রণে গড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সৎ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে একের পর এক সাফল্য ধরা দিচ্ছে। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে সংস্কার শেষে চালু হচ্ছে সুইমিংপুল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আগষ্ট পর্যন্ত প্রায় ৭ মাসে ক্রিকেট, কাবাডি, ভলিবল এবং ফুটবলে জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে ১০টি ট্রফি জিতেছে বগুড়া জেলা।

চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজাকে আহ্বায়ক এবং জেলা যুব উন্নয়ন কমকর্তা তোছাদ্দেক হোসেনকে সদস্য সচিব করে ৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন প্রবীণ ক্রীড়া সংগঠক খাজা আবু হায়াত হিরু, তরুণ আম্পায়ার এবং সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাহমুদ রুবেল, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক হাসান আলী আলাল, ক্রীড়া সাংবাদিক মোস্তফা মোঘল এবং ছাত্রপ্রতিনিধি হাসান মোল্লা। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এই কমিটি আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। শুরুতেই দীর্ঘ দিন পরিত্যক্ত থাকা জেলা সুইমিংপুল সংস্কারের উদ্যোগ ছিল এই কমিটির সবচেয়ে কঠিন কাজ।

জেলা প্রশাসক ও ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক হোসনা আফরোজার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অর্থায়নে ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সুইমিংপুল সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যেকোন দিন উদ্বোধনের মাধ্যমে সাঁতারুদের জন্য সুইমিংপুল খুলে দেয়া হবে। লম্বা সময় ধরে বন্ধ থাকা ক্রিকেট লীগ চালুর উদ্যোগ নিয়েও তা আলোর মুখ দেখেনি। ক্লাব কর্মকর্তাদের অনীহার কারনে লীগ চালু করতে না পারলেও ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসক কাপ টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট এবং ডিএসএ কাপ টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নামে দু’টি জমজমাট ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। খুব শিঘ্রই জুলাই শহীদদের স্মরণে জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।

শুধু টুর্নামেন্ট আয়োজনেই থেমে নেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম। ক্রিকেট, কাবাডি, ফুটবল, ভলিবলসহ বিভিন্ন ইভেন্টে নিয়মিতভাবে জাতীয় ও বিভাগীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শিরোপা ছিনিয়ে আনছে বগুড়ার খেলোয়াড়রা। গত ফেব্রুয়ারি হতে চলতি আগষ্ট মাস পর্যন্ত ৭ মাসে জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে অসাধারন পারফর্ম করে ১০টি ট্রফি ছিনিয়ে এনেছে বগুড়ার ছেলে ও মেয়েরা। সবচেয়ে বেশি ৫টি ট্রফি জিতেছে কাবাডি দল। অনূর্ধ্ব-১৮ কাবাডিতে জাতীয় পর্যায়ে রানার্সআপ হয়েছে বগুড়া জেলা বালক দল।

রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে বালক দল চ্যাম্পিয়ন এবং বালিকা দল রানার্সাআপ হয়েছে। কাবাডিতে সম্প্রতি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে বগুড়া জেলা পুরুষ ও নারী দল বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এরপরই রয়েছে বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট দল। চলতি বছর অনূর্ধ্ব-১৪ এবং অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেটে রাজশাহী বিভাগীয় শিরোপা অর্জন করেছে বগুড়ার কিশোররা। সেই সাথে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিসিবি’র টায়ার-১ এ উন্নীত হয়েছে বগুড়া জেলা ক্রিকেট দল। ভলিবলে রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে রানার্সআপ হয়েছে বগুড়ার ছেলেরা। এছাড়া বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বগুড়া জেলা।

সাফল্যের শেষ এখানেই নয়। ক্রিকেটসহ বিভিন্ন ইভেন্টে জাতীয় দলের পাইপলাইনে নিয়মিত খেলোয়াড় সরবরাহ করছে বগুড়া। মুশফিকুর রহীম ছাড়াও দুই তরুণ তুর্কি তানজিদ হাসান তামিম এবং তাওহিদ হৃদয় বর্তমানে জাতীয় ক্রিকেট দলের অপরিহার্য্য খেলোয়াড়। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পেয়েছে বগুড়ার আরেক উদয়িমান ক্রিকেটারন ইলমান হাবিব। অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় দলের ক্যাম্পে রয়েছে তাওফিক শামস এবং আকাশ রায়। অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছে ইরফান, বায়জীদ এবং আফ্রিদি। এছাড়া নারী জাতীয় ক্রিকেট দলে রিতুন মণি ও শারমিন সুলতানা বগুড়ার প্রতিনিধিত্ব করছে।

বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খালেদ মাহমুদ রুবেল জানান, নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যেও জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে সবগুলো ইভেন্ট সচল রাখার চেষ্টা চলছে। ক্রিকেট, কাবাডি, ভলিবলসহ অন্যান্য খেলাধুলার বিষয়েও নানান ধরনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বগুড়ার মাঠ খেলায় পরিপূর্ণ রাখতে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। অল্পসময়ের মধ্যেই পুলিশ সুপারকাপ কাবাডি টুর্নামেন্ট, ভলিবল টুর্নামেন্ট এবং বয়সভিত্তিক ক্রিকেটারদের নিয়ে ‘ইমার্জিং কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট’ আয়োজনের প্রস্তু তি চলছে। এছাড়াও বয়সভিত্তিক ক্রিকেটার এবং কাবাডি খেলোয়াড়দের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

আহ্বায়ক কমিটির আরেক সদস্য, ক্রীড়া সাংবাদিক মোস্তফা মোঘল বলেন, “শুধু টুর্নামেন্ট আয়োজন নয়, পাশাপাশি শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম এবং সুইমিংপুলের সংস্কার নিয়ে শুরু থেকেই জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি সোচ্চার রয়েছে। ইতোমধ্যেই সুইমিংপুল সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যেই এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের সংস্কারের জন্য বিসিবি এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে বারবার তাগাদা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শুরুর প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য এনসিএল টি-টুয়েন্টির আগেই স্টেডিয়ামের গ্যালারিসহ অন্যান্য অংশের সংষ্কার কাজ শেষ হবে এমনটাই বিসিবি জানিয়েছে।

সবমিলিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি জেলার মরচে পড়া ক্রীড়াঙ্গনকে ঘষেমেজে সচল করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। সকলের সহযোগিতায় বগুড়ার ক্রীড়াঙ্গন সচল হয়ে উঠবে এমনটাই বিশ্বাস আমাদের।”