২০২২ সালের জানুয়ারিতে সাড়ে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেলর অবশেষে মাঠে ফিরেছেন। ৪২ মাস পর ক্রিকেটে ফিরলেন টেলর এবং তার ক্যারিয়ারের নতুন পথচলা শুরু হলো গতকাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বুলাওয়েতে শুরু হওয়া সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে। যদিও টেলর দীর্ঘদিন ধরে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত তবে প্রত্যাবর্তনের টেস্টে তাকে ওপেনার হিসেবে খেলতে হয়েছে। টেলরের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ২০০৪ সালের ৬ মে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারারেতে। দীর্ঘ ২১ বছর ৯৩ দিনের টেস্ট ক্যারিয়ারের সঙ্গে এখনো টেস্ট খেলে যাচ্ছেনÑএমন ক্রিকেটারদের মধ্যে তার অভিষেক সবার আগে হয়েছে।। বর্তমানে টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘতম ক্যারিয়ারের তালিকায় তার নাম ১২তম। তার আগে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে শুধুমাত্র ব্রায়ান ক্লোজ, শচীন টেন্ডুলকার এবং সিড গ্রেগরির ক্যারিয়ারই বাইরের কোনো কারণ ছাড়া এতটা দীর্ঘ হয়েছে। এদিকে, গতকাল বুলাওয়েতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নেমেই বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিমকে ছাড়িয়ে গেছেন টেলর।
গত বছর জুলাইয়ে জিমি অ্যান্ডারসনের অবসর নেয়ার পর থেকে মুশফিক ছিলেন বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ টেস্ট ক্যারিয়ারের মালিক (২০ বছর ৩৩ দিন)। তবে, গতকাল টেলর নিষেধাজ্ঞা শেষ করে খেলতে নামলে মুশফিককে পেছনে ফেলেন। টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ারের মালিক উইলফ্রেড রোডস। তবে তার ক্যারিয়ার দীর্ঘ হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে। ইংল্যান্ডের ক্লোজও একইভাবে দীর্ঘ ক্যারিয়ার উপভোগ করেন, যদিও তার ক্যারিয়ারের পুরোটাই ক্রিকেটীয় কারণে হয়নি। ১৯৪৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকের পর তিনি কখনোই স্থায়ী জায়গা পায়নি দলে কিন্তু ১৯৬৫ সালে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হওয়ার পর সফলভাবে সাত টেস্টে নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে, জন ট্রাইকোস ১৯৭০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট অভিষেকের পর বর্ণবাদের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হয় প্রোটিয়ারা। এরপর তিনি জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলা শুরু করেন এবং জিম্বাবুয়ের হয়ে ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ বিশ্বকাপেও প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৯২ সালে জিম্বাবুয়ে টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ করলে সে বছর তিনি ২২ বছর ২২২ দিন পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরেন। মূলত আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ও অ্যান্টিডোপিং বিধি লংঘনের দায়ে সাড়ে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে হয়েছিল তাকে।
সেই নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে নতুন করে ইনিংস শুরু করছেন। জন্ম দিয়েছেন আলোচনার। দলে যুক্ত হওয়ার পর গতকাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের একাদশেও ফিরেছেন তিনি। নিষেধাজ্ঞার পর নিজের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আজ সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানকে টেইলর জানিয়েছেন, ‘শাস্তির মুখোমুখি হওয়া, নিজের ভেতরের বিশৃঙ্খলার সঙ্গে লড়াই করাÑএর কোনও নির্দিষ্ট দিন ছিল না, অনেকগুলো দিন একেকটা ট্রমার মতো কেটেছে। এক অন্ধকার খাদে পড়ে যাওয়া, আর সেখান থেকে জীবনের এই সম্পূর্ণ ও অদৃশ্যমান ভেঙে পড়ার অনুভূতির মধ্য দিয়ে কেবল টিকে থাকার চেষ্টা করছিলাম। সেটা ছিল ভীষণ কঠিন। সবসময় একটা লজ্জা আর অপরাধবোধ ছিলÑপরিবারকে নিরাশ করার। এটা সামলানো অনেক কঠিন ব্যাপার। কিন্তু আমার পরিবার যেভাবে পাশে থেকেছে, সাহায্য করেছেÑতা ছিল অভূতপূর্ব। মাঝে মাঝে আফসোস হয়, কেন আরও আগেই তাদের ওপর ভরসা করিনি।’
তিনি আরও জানান, ‘কিন্তু তখনও মনে হয়েছিল, এটা আমার নিজের ভুল এবং নিজেকেই ঠিক করতে হবে। ভেবেছিলাম স্বপ্নটা শেষ হয়ে গেছে এবং সেটাই মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু পরে নিজেকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ আর আশ্বাস এসে ধরা দেয়, যা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। আমি যদি সেই জীবন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত না নিতাম, তাহলে আজকের এই কিছুই সম্ভব হতো না।’