এক বছরের জন্য বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের নতুন অধিনায়ক হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মিরাজের নেতৃত্বেই শ্রীলংকায় ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো অধিনায়ক হয়ে গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলেছেন মিরাজ। জানিয়েছেন নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে চান তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লম্বা সময়ে বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়দের অধীনে খেলেছেন তিনি। ২০১৭ সালে মাশরাফি মুর্তজার নেতৃত্বে ডাম্বুলায় শ্রীলংকায় বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল মিরাজের। সেই দেশেই আগামী মাস থেকে পূর্ণকালীন ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে পথচলা শুরু হবে তার।
এই আট বছরে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্বও দেখেছেন তিনি। সম্প্রতি লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে খেলেছেন। এবার তিনি নিজেই দেবেন নেতৃত্ব। সিনিয়রদের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগাতে চান এই তারকা ক্রিকেটার, ‘তাদের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। যেটা আমার ক্যারিয়ারে অনেক কাজে লেগেছে। বিশেষ করে তারা কীভাবে অধিনায়কত্ব করেছেন। আমি নিজেই খেলেছি তাদের অধিনায়কত্বে। এই জিনিসগুলো আমার ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। তারা যেভাবে কঠিন সিদ্ধান্তগুলো শক্তভাবে নিতেন, সেই জিনিসগুলো অনুসরণ করেছি। অনেক সময় কঠিন সময়ে শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় পক্ষে আসবে, অনেক সময় আসবে না। আপনি সিদ্ধান্তগুলো কীভাবে নিচ্ছেন, সেটি গুরুত্বপূর্ণ।’ মিরাজ বললেন, ‘বাংলাদেশ দলে মাশরাফি ভাইয়ের অধিনায়কত্বে আমার অভিষেক হয়েছে। অনেক অধিনায়ককে পেয়েছি আমি। এটা আমার জন্য ভালো লাগার বিষয়। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। যেটা আমি হয়তো আমার এই অধিনায়কত্বে কাজে লাগাতে পারবো।’ অধিনায়ক হিসেবে ড্রেসিংরুমে ঐক্য গড়ে তুলতে চান মিরাজ, ‘এখন তো আমাদের অবশ্যই দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসেছে। আমরা যথেষ্ট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি, প্রায় ৮-৯ বছর ধরে খেলছি। যারা জুনিয়র আছে তাদেরকে অবশ্যই পারফর্ম করতে হবে ওই পরামর্শগুলো দেবো। যেটা আমরা যখন প্রথমে ঢুকেছিলাম, বড় ভাইরা আমাদেরকে যেভাবে সাহায্য করেছে, চেষ্টা করবো ওভাবে সাহায্য করতে। ড্রেসিংরুমটাকে সেভাবে রাখার জন্য। যেন যেই ড্রেসিংরুমে থাকে না কেন, সে যেন অনুভব করে যে, না আমি একা নই, আমার সঙ্গে সবাই আছে।’ এর আগে শান্তর অনুপস্থিতিতে চারটি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে মিরাজের। এই প্রসঙ্গে বললেন, ‘একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমার অধিনায়কত্ব অভিষেক হয়েছিল। শান্ত অধিনায়ক ছিল। ও চোটে পড়েছিল দেখেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে আমাকে দেওয়া হয়েছিল। আমি যেহেতু সহ-অধিনায়ক ছিলাম। ওইরকম পরিস্থিতিতে অধিনায়কত্ব করা একটু কঠিন। কারণ হঠাৎ করে অধিনায়কত্ব করেছি। সেট-আপ ও পরিকল্পনা পুরো শান্তরই ছিল। আমার শুধু মাঠ চালাতে হয়েছে। অবশ্যই ওই চার ম্যাচে আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। আর হ্যাঁ লম্বা সময়ের জন্য পেলে একটু ভালো হয়। দলকে বুস্ট আপ করা যায় কীভাবে করলে ভালো হবে। যেহেতু এক বছরের জন্য পেয়েছি, চেষ্টা করবো দলকে সুন্দর একটা জায়গায় দাঁড় করাতে।’ ২৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডার আরও বললেন, ‘লম্বা সময় থাকলে ভিশন ভালো থাকে। সামনে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আছে। যেহেতু দল হিসেবে আমরা এখন একটু সংগ্রাম করছি, তাই বোর্ড হয়তো ভেবেছে একটা বছর একটা জায়গায় দাঁড় করাই দলটাকে। এরপর হয়তো পরবর্তী ধাপ দেখবে কন্টিনিউ করবে না কী করবে। এখন সময় এসেছে ওয়ানডে দলটাকে একটা জায়গায় দাঁড় করানোর। ২ জন সিনিয়র ক্রিকেটার অবসর নিয়েছেন। যারা সুযোগ পাবে তাদেরকেও এই জিনিসগুলো, কারা সুযোগ পাবে, আমার মনে হয় এই এক বছরের মধ্যে দলকে গুছিয়ে ঠিকঠাক করা যাবে।’ দলকে একটা ভালো অবস্থায় নেওয়ার প্রত্যয় মিরাজের, ‘এর আগে সিনিয়র ক্রিকেটার যারা ছিলেন তারা একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন।
এখন আমাদের দায়িত্ব, আমরা বাংলাদেশ দলকে একটা জায়গায় দাঁড় করাতে চাই। এখন একটু খারাপ সময় যাচ্ছে। তবে আশা করি এটা দ্রুত কেটে আসবে ইনশাআল্লাহ। এটা আমার বিশ্বাস।’ সাকিব আল হাসানকে আবারও বাংলাদেশ দলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন মিরাজ। যিনি গত বছরের আগস্টের পর আর দেশের জার্সিতে মাঠে নামেননি। মিরাজ জানালেন, পিএসএলের সময় সাকিবের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত আলাপ হয়েছিল দেশের হয়ে ফেরার আগ্রহ নিয়ে। মিরাজ বলেন, ‘পিএসএলের সময় ওনার সঙ্গে অনেক কথা হয়েছে আমার। আবার বাংলাদেশের হয়ে খেলার খুব ইচ্ছে ওনার।’ তবে মিরাজ জানেন, এটি শুধু ব্যক্তিগত ইচ্ছায় সম্ভব নয়। বোর্ডকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই অধিনায়ক হিসেবে সুযোগ পেয়েই বোর্ডের কাছে তার অনুরোধ রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি, ‘আমি এখন বোর্ডকে বলব যে তাকে খেলানো যায় কিনা। কারণ সাকিব ভাইকে দলের খুব কাজে লাগবে। ওনার মতো খেলোয়াড় দলে থাকার সুবিধা কী, সেটি তো আর নতুন করে বলতে হবে না।’ এই চাওয়া পূরণ হবে কিনা, সাকিব ফিরবেন কিনা। এটি পুরোটা নির্ভর করছে বোর্ড, সাকিব এবং সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর। তবে যাত্রার শুরুতেই বড় চিন্তার নাম হিসেবে যদি একজন থাকেন, তিনি সাকিব আল হাসান। এ নিয়ে অবশ্য সংশয় নেই।