অস্ট্রেলিয়ার টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের পথচলা শুরু হলো বিশাল ব্যবধানে হেরে। ডারউইনে নুরুল হাসান সোহানের দলকে ৭৯ রানে উড়িয়ে দেয় পাকিস্তান শাহিনস (‘এ’ দল)। মারারা স্টেডিয়ামে গতকাল পাকিস্তানিরা ২০ ওভারে তোলে ২২৭ রান। ঝড়ো ফিফটি করেন বিপিএল খেলে যাওয়া খাওয়াজা নাফে ও আরেক ওপেনার ইয়াসির খান, পরে আরেকটি আগ্রাসী ফিফটি করেন আব্দুল সামাদ। বাংলাদেশ ১৯ বল বাকি রেখেই গুটিয়ে যায় ১৪৮ রানে। এক পর্যায়ে ১ উইকেটে ৯২ রানে থাকা দল পরের ৯ উইকেট হারায় ৫৬ রানের মধ্যেই। পাকিস্তানের দলটির একাদশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা ছিল কেবল চারজনের। একমাত্র মোহাম্মাদ ওয়াসিম ছাড়া তেমন অভিজ্ঞ নেই কেউ। বাংলাদেশের একাদশের ১০ জনের ছিল আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, তাদের বেশ কজন ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। কিন্তু তারা পাত্তা পেলেন না তরুণ পাকিস্তানি দলটির কাছে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তান বড় স্কোরের ভিত পায় দুই ওপেনারের ব্যাটে। আক্রমণের শুরুটা করেন নাফে, পরে সঙ্গ দেন ইয়াসিরও। পেস-স্পিন মিলিয়ে পাওয়ার প্লেতে ৫ বোলার ব্যবহার করেন অধিনায়ক সোহান। পাকিস্তানের রান তবু উঠে যায় ৬৯। ২৭ বলে ফিফটিতে পা রাখেন নাফে। রকিবুল হাসানের বলে তার ছক্কায় দশম ওভারে দলের রান পেরিয়ে যায় একশ। ১১ ওভারে ১১৮ রান তোলার পর ভাঙে এই জুটি। দ্রুত রানের চেষ্টায় দুই ব্যাটসম্যান প্রায় এক প্রান্তে চলে গিয়েছিলেন। রান আউট হয়ে ব্যাট মাটিতে ছুড়ে ফেলে সঙ্গীর ওপর রাগে গজরাতে গজরাতে মাঠ ছাড়েন নাফে। তার ৬১ রান আসে ৩১ বলে। একটু পরই ফেরেন ইয়াসির খানও। মাহফুজুর রহমান রাব্বির বলে ছক্কা মারার পরের বলেই কাট করতে গিয়ে কিপার সোহানের হাতে ধরা পড়েন তিনি ৪০ বলে ৬২ করে। পাকিস্তানের রানের গতি তাতে কমেনি। আব্দুল সামাদ ক্রিজে যাওয়ার পরপরই সাইফ হাসানের এক ওভারে মারেন চারটি ছক্কা। ১০ বলে ১৮ রান করেন মোহাম্মাদ ফাইক, তিন ছক্কায় ১৩ বলে ২৫ অধিনায়ক ইরফান খান। সামাদ অপরাজিত রয়ে যান ৫ ছক্কায় ২৭ বলে ৫৬ রান করে। বাংলাদেশের একজন বোলারও ভালো বোলিং করতে পারেননি। রান তাড়ায় চতুর্থ বলে উবেইদ শাহকে চার মারেন মোহাম্মাদ নাঈম শেখ। পরের বলেই জায়গা বানিয়ে খেলার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান বাঁহাতি ওপেনার। তবে বোলিংয়ে তুলাধুনা হওয়া সাইফ শোধ তোলার চেষ্টা করেন ব্যাটিংয়ে। ক্রিজে গিয়ে শুরু করেন তিনি বেদম মার। তার সঙ্গে যোগ দেন তরুণ জিসান আলম। দুজনের ব্যাটে পাওয়ার প্লেতে ৭৪ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লে শেষেও প্রথম তিন বলে দুটি ছক্কা একটি চার মেরে দলকে একশর কাছে নিয়ে যান সাইফ। রান উঠছে তখন বানের জলের মতো। তবে শট খেলার চেষ্টাতেই বাঁহাতি স্পিনার মাজ সাদাকাতকে উইকেট নিয়ে জিসান ফেরেন ১৭ বলে ৩৩ রানে। এরপর আর কোনো ব্যাটসম্যান ধরে রাখতে পারেননি সেই ধারা। ৩৪ ওয়ানডে ও ৭০ টি-টোয়েন্টির অভিজ্ঞ আফিফ হোসেন ৬ রান করতে পারেন ৮ বল খেলে। রানের গতি কমে আসে অনেকটাই। সেই গতিতে দম দেওয়ার চেষ্টায় সাইফ হাসানও বিদায় নেন। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৩২ বলে করেন তিনি ৫৭ রান। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন প্রথম বলেই ছক্কা মেরে কাভারে ক্যাচ দেন তৃতীয় বলে। মাহফুজুর রহমান রাব্বি ধুঁকতে ধুঁকতে ১০ বলে করেন ৩। পরে অধিনায়ক সোহান যখন ১৬ বলে ২২ করে বিদায় নেন, বাংলাদেশের লড়াই জমানোর শেষ আশাও শেষ হয়ে যায়। পরে ইনিংসও শেষ হয়ে যায় দ্রুতই। সোহানদের পরের ম্যাচ শনিবার নেপালের বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান শাহিনস: ২০ ওভারে ২২৭/৪ (নাফে ৬১, ইয়াসির ৬২, সামাদ ৫৬*, ফাইক ১৮*, ইরফান ২৫, মাসুদ ১*; রকিবুল ৪-০-৪৩-১, হাসান ৪-০-৩৪-১, মৃত্যুঞ্জয় ৪-০-৩৯-০, রিপন ৪-০-৪৫-০, মাহফুজুর ৩-০-৩৯-১, সাইফ ১-০-২৬-০)।
বাংলাদেশ ‘এ’: ১৪৮/১০ (নাঈম ৫, জিসান ৩৩, সাইফ ৫৭, আফিফ ৬, সোহান ২২, অঙ্কন ৬, মাহফুজুর ৩, মৃত্যুঞ্জয়, রকিবুল ১, ; উবেইদ , আজিজ, ওয়াসিম , মাসুদ, সাদাকাত ৪-০-২৬-১, আকরাম)।
ফল: পাকিস্তান শাহিনস ৭৯ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইয়াসির খান।