ড্র হয়েছে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা প্রথম টেস্ট। গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ড্রয়ের দেখা মিলল প্রায় ১২ বছর পর। সবশেষ ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার ম্যাচই অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়েছিল। এরপর ২৬ টেস্টের প্রতিটিতেই ফল আসে। সবশেষ ২০২২ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষেই চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র করেছিল বাংলাদেশ। এরপর খেলা ২১ টেস্টের ৭টি জেতে তারা আর হারে অন্য ১৪টি। এই ম্যাচ ড্র হওয়ায় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ চক্রের শুরুতেই পয়েন্ট পেল বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা। সমান ৪ করে পয়েন্ট এবং শতকরা ৩৩.৩৩ পয়েন্ট নামের পাশে তুলল দু’দল। ম্যাচের প্রথম দুই ইনিংসে বাংলাদেশ ৪৯৫ ও ৬ উইকেটে ২৮৫ এবং শ্রীলংকা ৪৮৫ ও ৪ উইকেটে ৭২ রান করে। প্রথম টেস্ট ড্র হলেও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ব্যাটার হিসেবে এক টেস্টে দুই ইনিংসেই দ্বিতীয়বারের মতো সেঞ্চুরি রেকর্ড গড়েছেন। গল টেস্টের দুই ইনিংসে ১৪৮ ও অপরাজিত ১২৫ রান করেন শান্ত। তবে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের বিদায়ী টেস্টে জয় পায়নি শ্রীলংকা। ড্র’র স্বাদ নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করলেন ১১৯ ম্যাচে ৮২১৪ রান করা ম্যাথুজ। গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিন শেষে ৩ উইকেটে ১৭৭ রান করেছিল বাংলাদেশ। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ১৮৭ রানে এগিয়ে ছিল টাইগাররা। বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ৫৬ ও মুশফিকুর রহিম ২২ রান নিয়ে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেন। দিনের শুরুতে ক্যাচ দিয়ে ৬৬ রানে থাকা অবস্থায় বেঁচে যান শান্ত। জীবন পেয়ে মুশফিকের সাথে ১০৯ রানের জুটি গড়েন শান্ত। প্রথম ইনিংসে চতুর্থ উইকেটেই ২৬৪ রান জড়ো করেছিলেন দু’জনে। দলীয় ২৩৭ রানে রান আউটের ফাঁদে পড়ে হাফ-সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় থামেন মুশফিক। ৪টি চারে ৪৯ রান করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রান করেছিলেন মুশফিক। মুশফিক ফেরার পর বৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকার পর ব্যাট হাতে নেমে দ্রুত ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লিটন দাস ৩ ও জাকের আলি ২ রানে আউট হন। জাকের ফেরার সময় ৯৬ রানে দাঁড়িয়ে শান্ত। এরপর নাইম হাসানকে নিয়ে ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শান্ত। ৯ চারে ১৯০ বলে সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ১৪৮ রান করেছিলেন শান্ত। বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে এক ম্যাচের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে দু’বার এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেন শান্ত। এছাড়াও বিশ্বের ১২তম ব্যাটার হিসেবে দুই টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির নজির গড়েন শান্ত। তবে অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করা ১৬তম ব্যাটার তিনি। সেঞ্চুরির পর দ্রুত রান তুলেছেন শান্ত। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ২৮৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। এতে জয়ের জন্য ২৯৬ রানের টার্গেট পায় শ্রীলংকা। ৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৯৯ বলে ১২৫ রানে অপরাজিত থাকেন শান্ত। নাইম ৭ রানে অপরাজিত থাকেন। থারিন্দু রতœায়েকে ৩ উইকেট নেন। ২৯৬ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৩২ রানের সূচনা করে শ্রীলংকা। এরপর ১৬ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারায় লংকানরা। ষষ্ঠ ওভারে শ্রীলংকার ওপেনার লাহিরু উদারাকে ৯ রানে শিকার করে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট উপহার দেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। পরের ওভারে পাথুম নিশাঙ্কাকে সাজঘরে ফেরত পাঠান স্পিনার নাইম। ২৪ রান করেন প্রথম ইনিংসে ১৮৭ রান করা নিশাঙ্কা। ৩৪ রানের ২ উইকেট পতনের পর সাবধানে খেলতে শুরু করেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার দিনেশ চান্ডিমাল ও বিদায়ী টেস্ট খেলতে নামা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। ৮১ বল খেলে ১৩ রান যোগ করেন তারা। এ অবস্থায় ১ রানের ব্যবধানে তাইজুলের শিকার হন চান্ডিমাল ও ম্যাথুজ। চান্ডিমাল ৬ ও ম্যাথুজ ৮ রান করেন। ৪৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চিন্তায় পড়ে শ্রীলংকা। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে কামিন্দু মেন্ডিস ও অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ৫৩ বলে ২৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়লে ম্যাচটি ড্র হয়। কামিন্দু ও ডি সিলভা ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন। তাইজুল ২৩ রানে ৩টি ও নাইম ২৯ রানে ১ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন শান্ত। আগামী ২৫ জুন থেকে কলম্বোতে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে নামবে দুই দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৯৫

শ্রীলংকা ১ম ইনিংস: ৪৮৫

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২৮৫/৬ ডিক্লে.

শ্রীলংকা ২য় ইনিংস: লক্ষ্য (২৯৬) ৩২ ওভারে ৭২/৪ (নিসাঙ্কা ২৪, উদারা ৯, চান্দিমাল ৬, ম্যাথিউস ৮, কামিন্দু মেন্ডিস ১২*, ধানাঞ্জায়া ১২*; হাসান ৩-০-১৯-০, তাইজুল ১৬-৬-২৩-৩, নাঈম ১৩-৪-২৯-১)।