আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর দেখা যাবেনা ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেলকে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় সকালে প্রায় ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন রাসেল। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটালেন তিনি। কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে ঘরের মাঠে, পরিবারের সামনে দাঁড়িয়ে আবেগঘন বিদায় নিলেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। যদিও ব্যাটে-বলে কোনো জাদু ছড়াতে পারেননি নিজের শেষ ম্যাচে, ওয়েস্ট ইন্ডিজও হেরেছে বড় ব্যবধানে। তবে ম্যাচের ফলাফলের চেয়েও বেশি আলোচিত ছিলেন তিনি। মাঠে প্রবেশের সময় ‘গার্ড অব অনার’ পেয়েছেন দুই দলের ক্রিকেটারদের কাছ থেকে। জ্যামাইকার ক্রীড়া মন্ত্রী অলিভিয়া গ্রেঞ্জের সঙ্গে মঞ্চে উঠে পেয়েছেন একটি বিশেষ স্মারক। ছিল জ্যামাইকার পতাকায় মোড়ানো গিটার-আকৃতির ব্যাট-বল। ক্রিকেট আর রেগে সুরের এক অনন্য সংমিশ্রণ যেন রাসেলকে দিয়েই পূর্ণতা পেল। ম্যাচে ক্যামিও ইনিংস খেললেও বোলিংয়ে ছিলেন খরুচে। ফিল্ডিংয়েও মিস করেছিলেন দুটি ক্যাচ। তারপরও দর্শক, সতীর্থ আর গোটা ক্রিকেটবিশ্বের কাছে তিনি ছিলেন ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। ম্যাচ শেষে গ্যালারির ধারে গিয়ে ভক্তদের সঙ্গে ছবি তোলা, অটোগ্রাফ দেওয়া আর হৃদয়ভরা কৃতজ্ঞতার অনুভব; সবকিছুতেই যেন ফুটে উঠেছিল ভালোবাসা ও বিদায়ের চিহ্ন। এই ম্যাচে তার দল অসিদের কাছে হেরেছে ৮ উইকেটে। যা ছিল ঘরের মাঠে চলমান তিন ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি। এই ম্যাচ খেলে যে অবসরে যাবেন, সেই ঘোষণা সিরিজ শুরুর আগেই দিয়ে রেখেছিলেন রাসেল। ম্যাচ হারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সি গায়ে শেষবার কথা বলেছেন রাসেল। ম্যাচ পরবর্তী উপস্থাপনায় ৩৭ বছর বয়সী ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার বলেন, ‘আমি আবারও ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ যে নিজের ক্যারিয়ার এখানেই শেষ করতে পারছি। নিজের দেশ, পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সামনে খেলতে পেরে দারুণ সৌভাগ্যবান বোধ করছি।’ সব ক্রিকেটারই ক্যারিয়ারের শেষটা ভালো করতে চান। রাসেলও নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম নন। তবে সবকিছু চাওয়া অনুযায়ী হয়নি। রাসেলেরও হয়নি। তবে শেষ ম্যাচে দল ৮ উইকেটে হারলেও ভক্তদের সমর্থন পেয়ে খুশি রাসেল। ক্যারিবীয় তারকা বলেন, ‘ফলাফল হয়তো আমার পক্ষে যায়নি, তবে দিন শেষে আমি খুশি এবং কৃতজ্ঞ। শেষ দুই ম্যাচে দর্শকদের সমর্থন ছিল অসাধারণ। আমি সত্যিই এটি উপলব্ধি করেছি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করেছি।’ শেষে নিজের জার্সি-বুট তুলে রাখার সময় হয়েছে উল্লেখ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শুভকামনা জানান তিনি। রাসেল বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে সময় এসেছে বুটজোড়া তুলে রাখার। ভবিষ্যতের জন্য ছেলেদের জন্য রইল শুভকামনা। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা সাবিনা পার্কে শেষ করতে পেরে আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। সমর্থন অব্যাহত রাখবেন।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাসেলের অভিষেক হয় ২০১০ সালে ১৫ নভেম্বর, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে। ক্যারিয়ারে একটি টেস্টই খেলেছেন রাসেল। এরপর ২০১১ সালের ১১ মার্চ ওয়ানডে অভিষেক হয় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, বিশ্বকাপে। রাসেলের সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচটি ছিল ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টন্টনে, অর্থাৎ ৬ বছর আগে। আর প্রিয় ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে রাসেলের অভিষেক হয় ২০১১ সালে এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে। আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলে ৮৫তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে অবসরে গেলেন তিনি। ক্রিকেটে এমন অনেক ভক্ত আছেন, যারা আন্দ্রে রাসেলের ব্যাটিং দেখার জন্য মুখিয়ে থাকেন। বিশ্বক্রিকেটে একটি বড় সমর্থকগোষ্ঠী আছে, যারা রাসেলের দানবীয় ব্যাটিং দেখে নেশায় বুদ হয়ে থাকেন। সেটি হোক আন্তর্জাতিক কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট। কিন্তু গতকাল বুধবার রাসেলভক্তদের মন বেজায় খারাপ। কারণ, এখন থেকে আর প্রিয় তারকাকে আরদেখা যাবেনা।
ক্রিকেট
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় আন্দ্রে রাসেলের
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর দেখা যাবেনা ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেলকে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় সকালে প্রায় ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন রাসেল।
Printed Edition
