জাতীয় দল নির্বাচনে সাধারণত অধিনায়কের মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার কথা। কিন্তু সেটা দেয়া হয়নি বলে এবার অভিযোগ করেছেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। নির্বাচকদের বিরুদ্ধে এবার তিনি সরাসরি অভিযোগ করেছেন। আজ থেকে চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এই সিরিজ শুরুর আগে এবার দল গঠন নিয়ে বোমা ফাটালেন লিটন। টি-টোয়েন্টিতে ফর্মে নেই শামীম হেসেন পাটোয়ারি। সর্বশেষ তিন টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাঁহাতি এই ব্যাটারের স্কোর ০, ১, ১। বাজে ফর্মের কারণে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠেয় সিরিজে বাদ দেয়া হয়ে তাকে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে টি- টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাস বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটার শামীম হোসেনকে বাদ দেওয়ায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। লিটন জানান, শামীমের বাদ পড়া কিংবা তার জায়গায় ডানহাতি মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে নেওয়ার বিষয়টি তাকে জানানো হয়নি। ‘আমি সবসময় ভাবতাম, ক্যাপ্টেনের স্কোয়াড গঠনে ভূমিকা থাকা উচিত। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আমাকে যে দল দেয়া হবে, সেখান থেকেই সেরাটা বের করে আনতে হবে।’ লিটন বরেন,‘অবশ্যই সে থাকলে ভালো হতো। কিন্তু এটা আমার সিদ্ধান্ত নাÑএটা নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত। শামীমকে বাদ দেওয়া হয়েছেÑএই কথাটাও আমাকে জানানো হয়নি।’ তিনি আরও যোগ করে বলেছেন, ‘আমি সবসময়ই মনে করি, কোন খেলোয়াড় আসছে বা যাচ্ছেÑ তা ক্যাপ্টেনের জানার কথা। তার বাদ পড়ার তেমন কোনও কারণও দেখছি না। স্কোয়াডে যে ১৫ জন আছে, সবাই সক্ষম। তার পরও শামীম থাকলে ভালো লাগত।’ এখানেই থামেননি লিটন। ইঙ্গিত দেন, স্কোয়াড নির্বাচনে তার প্রভাব কার্যত নেই বললেই চলে, ‘নির্বাচক আর বোর্ড আমাকে পরিষ্কার বলে দিয়েছেÑযে দল দেব, সেই দল নিয়েই খেলতে হবে। কে আসবে, কে যাবেÑএই জায়গায় এখন আর আমার কোনও ভূমিকা নেই।’ তিনি নির্বাচক প্যানেল, প্রধান কোচ ও অধিনায়কের মধ্যে যোগাযোগ আরও উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন, ‘এটাকে অপমান বলবো না, কিন্তু কোচ আর ক্যাপ্টেনের জানা উচিত। আমরা কিছুই জানি না। আর একই ঘটনা বিশ্বকাপে হলে তখনও আমাকে তাদের দেয়া দল নিয়েই খেলতে হবে।’ মিডল অর্ডারে ডানহাতি ব্যাটারদের ভিড়ে একজন বাঁহাতিকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তের ক্রিকেটীয় যুক্তিতেও প্রশ্ন তোলেন লিটন, ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। বিষয়টা বিবেচনা করা উচিত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডানহাতি-বাঁহাতির সমন্বয় লাগে। এখন যাদের দলে নেয়া হয়েছে তারা সবাই যোগ্য প্রমাণিত বলেই এসেছে। তারা চেষ্টা করবে সেরাটা দেওয়ার।’ লিটন উল্লেখ করেন, শামীম দুই-তিনটা সিরিজে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে, যেটা দরকার ছিল। সব খেলোয়াড়ের কাছে সব সিরিজে পারফরম্যান্স আশা করা ঠিক নয়। শামীমের বাদ পড়া শামীমের জন্য হতাশাজনক বলেও মনে করেন লিটন। অধিনায়ক হিসেবে আক্ষেপ নিয়ে লিটন বলেন, দঅধিনায়ক হিসেবেও আমি সরি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না তাকে (শামীম)। কারণ, আমি এক্সপেক্ট করি না কখনোই আমাকে ১৫টা খেলোয়াড়ই প্রতিদিন পারফর্ম করে দেবে। দু-তিনটা সিরিজে যখন পারফর্ম করবে না, তাকে আমার সমর্থন দেয়াটা উচিত। আমি সত্যিই সরি যে আমি তাকে সমর্থন দিতে পারিনি। আমি এত দিন জানতাম, যখন অধিনায়ক হয় মানুষ, তার দল গোছানোর একটা পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু সম্প্রতি জানতে পারলাম, যে দলটা আমাকে দেয়া হবে, আমার কাজ হচ্ছে সেই দলটাকে নিয়ে ভালো কিছু দেয়া মাঠে।' বাংলাদেশ অধিনায়কের মতে, দল নির্বাচনে অধিনায়ক ও কোচের ভূমিকা থাকা উচিত।

এভাবে চলতে থাকলে অধিনায়ক হিসেবে তিনি থাকবেন কি না সেই ব্যাপারে লিটন বলেন, দলটা পরে দেখা যাবে।' বোর্ড ও নির্বাচকদের এমন ভাবনা, চাপিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া অধিনায়কের জন্য অপমানজনক কি না সেই উত্তরটাও খোলামনে দিয়েছেন লিটন, ‘ইনসালটিংয়ের জায়গা বলবো না। আমার মনে হয় কোচ ও অধিনায়কের জানা উচিত। সেই জায়গা থেকে আমরা কিছুই জানি না। যদি বিশ্বকাপেও সেইম জিনিস ঘটে, আমাকে বিশ্বকাপেও চেষ্টা করবো সেরা ১১ জন খেলানোর।’ লিটনের যে ধরনের ব্যক্তিত্ব, এমন ঘটনার পর কি তিনি অধিনায়ক থাকবেন? তার সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘ওইটা পরে দেখার বিষয়।’