বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান অধ্যায়ের কি তবে সমাপ্তি হয়ে গেলো! সাকিব নিজে এখনো অবসরের ঘোষণা দেননি। তবে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া এবার পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, সাকিবকে আর বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেয়া হবে না। গত সোমবার রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নিজের এমন কঠোর অবস্থানের কথা জানান ক্রীড়া উপদেষ্টা। ফলে সাকিবের অনানুষ্ঠানিক অবসর হয়ে গেলো, বলা যায়। সাকিবের এক ফেসবুক পোস্টের জেরেই তৈরি হয়েছে এমন জটিলতা। দুদিন ধরে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ভার্চুয়াল লড়াই চলছিল সাকিবের। এরই মধ্যে ক্রীড়া উপদেষ্টা সাফ জানিয়ে দিলেন, সাকিবের আর জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ নেই। আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের জার্সির পরিচয় বহন করতে দেওয়া, এটা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সুযোগ করে দেয়া সম্ভব নয়। ইতিপূর্বে এটা আমি বিসিবিকে না বললেও এখন আমার বোর্ডের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে, সাকিব আল হাসান আর কখনো বাংলাদেশ দলে খেলতে পারবেন না।’

কেন এমন সিদ্ধান্ত? সেটাও ব্যাখ্যা করেন আসিফ মাহমুদ। বলেন, “যতবার তিনি (সাকিব) দেশে আসতে চেয়েছেন, খেলার জন্য চেয়েছেন, বলেছেন- ‘আমাকে জোর করে নমিনেশন দেয়া হয়েছে। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। আমি শুধু এমপি ইলেকশনটা করেছি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছি।’ কিন্তু আসল সত্যটা তো হচ্ছে, তিনি আসলে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত, যার প্রমাণ আমরা পেলাম।” আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন সাকিব। দেশে যখন নির্বিচারে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চলছিল, তখন কানাডায় পরিবার নিয়ে ছুটির আমেজে ছিলেন তিনি। এমনকি তাদের সুন্দর মুহূর্তের ছবিও সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হয়। যাতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। তবে শেখ হাসিনার পতনের পর সাকিব ভোল পাল্টে একবার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হতাহতদের শ্রদ্ধা জানান। এরপর ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ফেসবুকে পোস্ট করে শ্রদ্ধা জানান সাকিব। সাকিবের এমন পোস্টের পরও সমালোচনা হয়েছিল।তবে তিনি সীমা ছাড়িয়ে গেছেন গত ২৮ সেপ্টেম্বর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে। ওই পোস্টে গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজের একটা ছবি দিয়ে সাকিব লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন, আপা।’ এরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ক্ষোভে ফোঁসে ওঠে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত-নিহতদের পরিবারও। আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। বাট আই ওয়াজ রাইট। ইন্ড অব দ্য ডিসকাশন।’ এর জবাবে গত রোববার রাতে সাকিব আবার নিজের ফেসবুকে লেখেন, ‘যাক শেষমেশ কেউ একজন স্বীকার করে নিলেন যে তার জন্য আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেয়া হলো না, বাংলাদেশের জন্য খেলতে পারলাম না!’

সাকিব এই পোস্ট দিয়ে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের সহানুভূতি নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ক্রীড়া উপদেষ্টা মনে করেন, আর ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। এরপরই বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, সাকিবকে আর বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেয়া হবে না।