আগামীকাল থেকে গলে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা প্রথম টেস্ট। তার আগে গতকাল প্রথম দিনের অনুশীলন করেছে টাইগাররা। গত কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টি ও বজ্রঝড়ের কারণে হোটেলবন্দী থাকা বাংলাদেশ দল প্রথমবারের মতো মাঠে নামল অনুশীলনের জন্য। পরে দলের হয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রধান কোচ ফিল সিমন্স। কথা বলেন প্রথম টেস্টের উইকেট ও কম্বিনেশন নিয়ে। প্রধান কোচ সিমন্স জানান, 'এখনও কম্বিনেশন কেমন হবে ঠিক করিনি। উইকেট দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারব। উইকেট দেখে তবেই আমরা কম্বিনেশন নিয়ে ভাববো। উইকেট দেখে মনে হচ্ছে খুব ভালো। দেখে বুঝতে পারব।' গেল বৃহস্পতিবার মেহেদী হাসান মিরাজকে ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করে বিসিবি। সিরিজ শুরুর আগে বিষয়টি শান্তর খেলায় কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেই বিশ্বাস সিমন্সের, 'আমার মনে হয় না কোনো প্রভাব পড়বে। পিচে গিয়ে তার কাজ ক্রিকেট খেলা। অন্য সব ভাবনা খেলার পরে। তাই আমি মনে করি এটা তার ক্রিকেটে প্রভাব ফেলবে না।' শ্রীলংকা সফরকে সামনে রেখে প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। লঙ্কানদের বিপক্ষে তিন ফরম্যাটের সিরিজ খেলতে এরইমধ্যে টেস্ট স্কোয়াড অবস্থান করছে গলে। মেহেদী হাসান মিরাজ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গলে প্রথম অনুশীলনে অংশ নিতে পারেননি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের আগে গলে এই অনুশীলন ছিল সফরকারী দলের প্রস্তুতির প্রথম সুযোগ। তবে, বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স রোববার বলেছেন, ‘একজনের সমস্যা আরেকজনের জন্য সুযোগ।’ তবে সিমন্স বলছেন, মিরাজকে নিয়ে দলে এখনো দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘সকালের সর্বশেষ খবরে জানানো হয়েছে, সে আগের চেয়ে অনেকটা ভালো। ওষুধ নেয়ার পর সন্ধ্যায় আবার দেখব ওর অবস্থা কেমন। আশা করছি, কাল (আজ) সে অনুশীলন করতে পারবে এবং খেলার জন্য প্রস্তুত থাকবে।’ মিরাজ না খেললে কী হবেÑএমন প্রশ্নে সিমন্স বললেন, ‘হ্যাঁ, কিছুটা দুশ্চিন্তা তো আছেই। কিন্তু একজনের সমস্যা, অন্য কারও জন্য সুযোগ। সবাই চায় সে ভালো হয়ে উঠুক। তবে তারা এটাও জানে, যদি সে খেলতে না পারে, তবে অন্য কাউকে সামনে আসতেই হবে। এটা এক ধরনের ‘হেডেক’Ñতবে একটা ‘ভালো হেডেক’।’ গল টেস্টে ২০১৩ সালে ডাবল সেঞ্চুরি করে চমক দেখিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। এবার তাকে ঘিরেও বাড়তি কৌতূহল। তবে সিমন্সের দৃষ্টিতে মুশফিক যেন শুধু উপভোগ করেন তার খেলা। সিমন্স বলেন,‘তার (মুশফিকের) কাছে আমার প্রত্যাশা হলো, সে যেন নিজের খেলা উপভোগ করে। আমি তার সেই ইনিংসটা দেখেছি, যেখানে সে সত্যি উপভোগ করছিল। আমি শুধু চাই, এবারও সে উপভোগ করুক। বাড়তি কোনো প্রত্যাশা নেই, সে যেন নিজের মতো খেলতে পারে।’ সম্প্রতি একদিনের দলের অধিনায়ক হিসেবে মেহেদী হাসানকে দায়িত্ব দেয়ায় অনেকেই বিস্মিত। তবে এতে নাজমুল হোসেন শান্তর ওপর প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করেন কোচ। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, এতে তার (শান্তর) কোনো সমস্যা হবে। সে যখন খেলতে নামে, তখন শুধুই খেলাটায় মনোযোগ দেয়। বাকি সিদ্ধান্তগুলো আমাদের ওপর ছেড়ে দেয়। এসব নিয়ে তার মনে কোনো প্রভাব পড়বে না।’ গলের পিচ প্রসঙ্গে সিমন্স জানান, টার্ন থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে ঠিক কতটা টার্ন হবে, তা আরও একটি রোলিংয়ের পর বোঝা যাবে। তবে দল কেমন হবে, সেই বিষয়ে মুখ খুলেননি তিনি। যদিও শান্ত ওপেন করবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সিমন্স বলেন, ‘উইকেটটা দেখতে ভালো লাগছে। আগামীকাল আবার রোলিং ও কাট হবে, তারপর বুঝতে পারব আসলে কী আছে। এখানে সাধারণত টার্ন থাকেÑপ্রশ্নটা হলো, কতটা টার্ন হবে।’ এদিকে, দেশে থাকা সাদা বলের ক্রিকেটাররাও বসে নেই। নতুন হেড কোচ ফিল সিমন্সের পরিকল্পনায় দেশীয় কোচদের তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের প্রস্তুতি।
গতকাল মিরপুরে বৃষ্টির মধ্যেও অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। শ্রীলংকার উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আগামী সপ্তাহে চট্টগ্রামে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন তারা। পাশাপাশি থাকবে আলোর নিচে বিশেষ অনুশীলন সেশন। চোট কাটিয়ে পুরোপুরি ফিট হয়ে ফিরছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। লঙ্কানদের বিপক্ষে সাদা বলের দুই ফরম্যাটেই দেখা যাবে তাকে। কোচ মিজানুর রহমান বাবুল জানিয়েছেন, ‘মুস্তাফিজ নেট সেশন শুরু করবে দ্বিতীয় দিন থেকে। ও পুরোপুরি প্রস্তুত।’ এদিকে বাংলাদেশের পুরনো সমস্যাই রয়ে গেছে, ভালো শুরুর পর ইনিংস বড় করতে না পারা। এ নিয়ে ব্যাটারদের সঙ্গে আলাদা করে কাজ করছেন দেশি কোচরা। নাঈম শেখ, তানজিদ তামিম, তানজিম সাকিব এবং রিশাদ হোসেনের পারফরম্যান্সও নজরে রয়েছে। নাঈমের দলে না থাকা নিয়ে জল্পনার জবাবে বাবুল বলেন, ‘ওয়ানডেতে ভালো করেছে, কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেনি। সে যদি ওপেনারদের চ্যালেঞ্জ দিত, তাহলে বিবেচনায় আসত।’ তানজিম ও রিশাদকে নিয়ে আশাবাদী কোচ বাবুল। একজন ঘাটতি পূরণ করতে পারেন অলরাউন্ডারের জায়গায়, অন্যজন স্পিন বিভাগে হতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র।