পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের চলমান রেশ এবার গিয়ে পড়েছে পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) উপর। পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে গতকাল ভারতের ড্রোন আছড়ে পড়েছে রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়াম এলাকায়। ফলে ঝুঁকি বিবেচনায় গতকালের খেলা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। ইতিমধ্যে পাকিস্তানের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট পিএসএলের দুই-তৃতীয়াংশ ম্যাচ শেষ। প্রতিটি দলের মনোযোগ এখন চূড়ান্ত পর্বের দিকে। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের লিগপর্বে ২৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই রাউন্ডে বাকি আর ৪ ম্যাচ, ছয় দলের এই প্রতিযোগিতার প্লে-অফ শুরু হবে ১৩ মে থেকে। এরপর ১৮ মে ফাইনাল দিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে পিএসএলের দশম আসর। কিন্তু ভারত পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। যার একটি আঘাত করেছে পিএসএলের ভেন্যু রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের পাশে। এমতাবস্থায় নিরাপত্তা শঙ্কায় পড়েছে পুরো টুর্নামেন্ট। সেই শঙ্কা থেকেই পিএসএল স্থগিত কিংবা পাকিস্তানের বাইরে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছে। ক্রীড়াভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ জানিয়েছে, পিএসএলের সূচিতে বিঘ্ন ঘটতে পারে চলমান আন্তঃরাষ্ট্রীয় উত্তেজনার কারণে। সে কারণে পিসিবি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই কিংবা কাতারের দোহায় পিএসএল সরিয়ে নিতে পারে পিসিবি। গতকাল স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টায় রাওয়ালপিন্ডিতে পেশোয়ার জালমি এবং করাচি কিংসের খেলা মাঠে গড়ানোর কথা ছিল। পেশোয়ারের হয়ে খেলছেন বাংলাদেশি পেসার নাহিদ রানা। কিন্তু সকালের দিকে আচমকা স্টেডিয়াম চত্বরে ড্রোন হামলা হয়। আল-জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, ভারত থেকে বৃহস্পতিবার সকালে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে কয়েকটি ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। যার অন্তত তিনটির লক্ষ্যবস্তু ছিল পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ শহর রাওয়ালপিন্ডি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরও অবস্থিত এ শহরে। পিএসএলে অংশ নেয়া ৬ দলের মধ্যে পাঁচ ফ্র্যাঞ্চাইজিই বর্তমানে ইসলামাবাদে অবস্থান করছে। পিএসএলের ফাইনাল ১৮ই মে লাহোরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে টুর্নামেন্টটির বাকি ম্যাচগুলো দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর করাচিতে স্থানান্তর করা হতে পারে। পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর থেকেই পিএসএলে খেলতে যাওয়া দুই বাংলাদেশি ক্রিকেটার নাহিদ রানা ও রিশাদ হোসেনকে নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল। এ নিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল বিসিবি। পিসিবিও ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছিল। রিশাদ, নাহিদ রানাও জানিয়েছিলেন; পাকিস্তানে তাঁদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু গতকালের ভারতের ড্রোন হামলার পর পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। শেষ পর্যন্ত পিএসএল শেষ না করেই দেশে ফিরে আসতে হচ্ছে বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার নাহিদ রানা ও রিশাদকে। বিসিবি থেকে এমটাই জানানো হয়েছে। এ ঘটনার পর রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের গতকালের ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে। এ মাঠেই মুখোমুখি হওয়ার কথা রিশাদের দল লাহোর কালান্দার্স ও নাহিদ রানার দল পেশোয়ার জালমির। ড্রোন হামলার পর পিএসএলে খেলতে যাওয়া সব বিদেশি ক্রিকেটারের মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সূত্র জানিয়েছে, পিসিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেছেন টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়া বিদেশি ক্রিকেটাররা। কর্মকর্তারা তাঁদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও ক্রিকেটাররা তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটারও বিসিবিকে তাঁদের ফিরে আসার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। বিসিবিও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে। পিএসএল থেকে বাংলাদেশের এই দুই ক্রিকেটার যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরে আসছেন, এটা নিশ্চিত। কবে, কখন, কীভাবে তাঁদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, বিসিবি এখন সেসব নিয়েই কাজ করছে। ওদিকে পিসিবির মুখপাত্র আমির মীর পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডনকে বলেছেন, ‘আকাশসীমা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বিদেশি ক্রিকেটারদের এখন দেশ (পাকিস্তান) ছাড়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে তারা এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আছে।’ এর আগে বিসিবির কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে সভার পর বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছিলেন, রিশাদ-নাহিদ রানার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। দুজনই তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁরা সেখানে ভালো আছেন। এরপর গতকাল দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া দুটি পোস্টেও রিশাদ সে রকমই বুঝিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সব ঠিকঠাক চলছে! প্রতিটি আনন্দের মুহূর্ত উপভোগ করছি।’ পিসিবির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘পিসিবি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং পিএসএলের সূচি পুনরায় দেয়া হতে পারে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শেষেই বিষয়টি বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে।’ পিএসএল খেলতে বিদেশি আসা ক্রিকেটারদের নিয়ে সিদ্ধান্ত বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের ড্রোন হামলার কারণে পাকিস্তানের সকল বিমানবন্দর বন্ধ রয়েছে। তবে (বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে) এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’