বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নিলাম অনুষ্ঠিত হবে আজ। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে হবে বিপিএলের এবারের আসরের নিলাম। ২৪ ডিসেম্বর মিরপুরে হবে বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আর ২৬ ডিসেম্বর বিপিএলের প্রথম ম্যাচ হওয়ার কথা রয়েছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। অনেকদিন পরে বিপিএলে ফেরা নিলাম নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা বেশ উচ্ছ্বসিত। আগেই নিলামে ক্রিকেটারদের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তবে মাঠের লড়াই শুরুর আগেই যেন চমক নিয়ে হাজির হলো বিপিএল নিলামের চূড়ান্ত তালিকা। ফিক্সিং-সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন জাতীয় দলে খেলা দুই পরিচিত মুখ এনামুল হক বিজয় ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দুজনই ছিলেন ‘সি’ ক্যাটাগরিতে। এই দুজনের বাইরে বাদ পড়েছেন- আলাউদ্দিন বাবু, মিজানুর রহমান, নিহাদুজ্জামান, সানজামুল ইসলাম ও শফিউল ইসলাম। এর মধ্যে মিজানুর, শফিউল, নিহাদুজ্জামান গত বিপিএল খেলেছেন রাজশাহীর হয়ে। আলাউদ্দিন বাবু ছিলেন ঢাকা ক্যাপিটালসে। তবে কন এই ক্রিকেটারদের নিলামের চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি বিসিবি। তবে সম্প্রতি বিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বিপিএলের গত আসরে ফিক্সিংয়ের সাথে যুক্ত ক্রিকেটারদের নিলামের চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হবে না। ধারণা করা হচ্ছে, সে কারণেই বাদ পড়তে পারেন তারা। সম্প্রতি বিসিবি কঠোরভাবে জানিয়েছিল যে, গত আসরে ফিক্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের নিলামের চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হবে না। নিলামের ঠিক আগের দিন গতকাল ২৯ নভেম্বর প্রকাশিত নতুন তালিকায় দেখা গেছে, সেখানে মোসাদ্দেক ও বিজয়ের নাম নেই। জানা গেছে তারা দুজনেই 'সি' ক্যাটাগরিতে ছিলেন। ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার সন্দেহে অভিযুক্তদের নিলাম থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল বিসিবি'র দুর্নীতি দমন নীতির অংশ। গত আসরে ফিক্সিং নিয়ে বড় প্রশ্ন ওঠার পর বিসিবি যে তদন্ত শুরু করেছিল, তারই ফলস্বরূপ এই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। মোসাদ্দেক ও বিজয়ের নাম বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘সি’ ক্যাটাগরিতে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে স্পিনার আলিস আল ইসলামকে। পূর্বে নিলামের তালিকায় এই ক্রিকেটারের নাম না থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা তৈরি হয়েছিল। নিলামের জন্য দেশীয় ক্রিকেটারদের চূড়ান্ত তালিকায় সবমিলিয়ে ১৫৯ জনের জায়গা হয়েছে। সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি ‘এ’-তে রয়েছেন কেবল দুজনÑ লিটন দাস ও নাঈম শেখ, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ১২ জন, ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ১৭ জন, ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ২৬ জন, ‘ই’ ক্যাটাগরিতে ৩৮ জন, ‘এফ’ ক্যাটাগরিতে ৬৩ জন। নিলামের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি দল গঠন করার ক্ষেত্রে ক্যাটাগরিভিত্তিক খেলোয়াড় কিনতে বাধ্য। প্রতিটি দলকে ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ন্যূনতম ২ জন, ‘সি’ ও ‘ডি’ ক্যাটাগরি থেকে ন্যূনতম ৬ জন, ‘ই’ ক্যাটাগরি থেকে ন্যূনতম ৩ জন এবং ‘এফ’ ক্যাটাগরি থেকে কমপক্ষে ১ জন ক্রিকেটার কিনতে হবে। ফিক্সিংয়ে অভিযুক্তদের নিলামে না রাখার বোর্ডের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ীই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে বাদ পড়া ক্রিকেটাররা স্বভাবতই অঘোষিতভাবে সেই সন্দেহের তীরে বিদ্ধ হচ্ছেন। সেই বিষয়টি সরাসরি তুলে ধরলেন এনামুল হক বিজয়। এক প্রতিক্রিয়ায় নির্দোষ প্রমাণে সর্বোচ্চ আইনি পদক্ষেপসহ ‘সর্বোচ্চ দূর’ যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। বিজয় গণমাধ্যমের কাছে নিজের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বিসিবির পক্ষ থেকে তাকে কোনো প্রকার ফোন করা হয়নি। উল্টো তিনি নিজেই বোর্ডের ৫-৬ জন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। গত বিপিএলে দুর্বার রাজশাহীর হয়ে খেলা ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি শুধু ড্রাফটটা দেখেছি। বিসিবি থেকে কোনো ফোন আসেনি, আমি ফোন দিয়েছি ৫-৬ জনকে। কেউ আমাকে কোনো কিছু জানায়নি, ফোনও রিসিভ করেননি। শুধু আমি ড্রাফটটা থেকে নিজের নামটা দেখলাম, (সেখানে) নাই।’ এই নীরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘তার মানে তো আমি দোষী, ব্যাপারটা তাই আসলো। কোনো এভিডেন্স ছাড়া আপনি আমার নাম প্রত্যাহার করে দিচ্ছেন। কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়া, এটা আসলে অবাক করার বিষয় এবং অসম্মানের।’ সন্দেহের ভিত্তিতে ক্রিকেটারদের বাদ দেয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজয় বলেন, ‘তাদের কেন বাদ দেয়া হলো, শুধু একটা অভিযোগের ভিত্তিতে? সন্দেহের ভিত্তিতে কীভাবে তাদের বাদ দেয়া হয় সেটাই প্রশ্ন। এ নিয়ে তাদের (বিসিবি) উত্তরটা জানার পর আমি পদক্ষেপ নিতে পারব।’ তিনি আরও যোগ করেন,‘আসলে ঘটনাটা কী ঘটছে! আমি খুলনা থেকে ঢাকায় আসতেছি। আসার পর বিস্তারিত শুনতে পারব। আমার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য সর্বোচ্চ যতটুকু পর্যন্ত যাওয়া যায় আমি যাব।’