বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। আগামী আয়ারল্যান্ড সিরিজে টাইগারদের ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করবেন তিনি। তবে এটি পূর্ণকালীন দায়িত্ব নয়, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সিরিজের জন্যই এই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচের পদ শূন্য ছিল। সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনই ব্যাটিং বিষয়ক দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। তবে ব্যাটারদের পারফরম্যান্সের অবনমনের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। বিদেশি কোচ নিয়োগের বিষয়ে গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত আপদকালীন দায়িত্বে আশরাফুলকেই নেয়া হলো। অবশ্য মোহাম্মদ আশরাফুলের কোচিং অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছে রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব, গ্লোবাল সুপার লিগ জয়ের অভিজ্ঞতা এবং সর্বশেষ এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে বরিশাল বিভাগের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন। আশরাফুলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে যোগদানের বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আশরাফুলের অভিজ্ঞতা এবং কোচিং লেভেল-থ্রি কোর্সের দক্ষতা আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য মূল্যবান। তিনি প্রিমিয়ার লিগ ও বিপিএলে কোচিং করছেন, এবং তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবেন। মোহাম্মদ আশরাফুল তার খেলোয়াড়ী জীবনের অভিজ্ঞতা কোচিংয়ে কাজে লাগবে বলে মনে করেন সাবেক ক্রিকেটাররা। বিসিবি পরিচালক খালেদ মাসুদ পাইলট পাইলট বলেছেন, ‘১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের (আন্তর্জাতিক) শুরুর পর আশরাফুল (টেস্ট অভিষেকে) সেঞ্চুরি কিন্তু দেখিয়েছে এই দেশেরও একটা প্লেয়ার এসেছে। তার লেভেল থ্রি কোচিং কোর্স করা। সুপার একটা অভিজ্ঞতা আছে। এত সুন্দর একটা ক্যারিয়ার। হয়তো বোর্ড সেভাবে চিন্তা করেছে।’ সাবেক এই ক্রিকেটার আরও বলেন, ‘আশরাফুলকে রেখে যদি তার খেলার অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগানো যায়। আমাদের প্লেয়াররা ট্যাক্টিক্যাল জায়গাগুলোতে অনেক ভুল করেছে। আশরাফুলের অন্তর্ভুক্তি বড় একটা সাপোর্ট হতে পারে। সে অনেক বড় বড় ইনিংস খেলেছে, যখন খেলেছে আমরা আন্ডারডগ দল ছিলাম। ওই সময়ে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বড় বড় সেঞ্চুরি করেছে।’ এ ছাড়া আরেক বোর্ড পরিচালক আমজাদ হোসেন বলেছেন, ‘এখন খোঁজা হয়েছে কোথায় বাড়তি সাপোর্ট দরকার। সেখানে মনে হয়েছে বিশেষজ্ঞ একজন ব্যাটিং কোচ দরকার। আপাতত আয়ারল্যান্ড সিরিজ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত (আশরাফুলের নিয়োগ) এসেছে, পরে আবার নেক্সট বিশ্বকাপের আগে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’ আশরাফুলকে নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চান না বিসিবির আরেক পরিচালক ও সাবেক তারকা স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক, ‘আসলে এরকম একজন নিতে চাইলে তার মান কী, এটা কিন্তু জাস্টিফাই করতে পারবেন না। হেড কোচ হিসেবে কাজ করলে সেটাকে মানদণ্ড হিসেবেও নিতে পারবেন না। এখানে (আশরাফুল) আসছে বিশেষজ্ঞ ব্যাটিং কোচ হিসেবে, দেখতে হবে সে এখানে কী করে। আগে শুরু করছে করুক, এখানে চুক্তির ব্যাপার। একটা সিরিজের জন্য করা হয়েছে। এখনই (বাড়তি) কমেন্ট করা কঠিন।’

এ ছাড়া বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর হয়েছেন রাজ্জাক। যা নিয়ে তিনি বলছেন, ‘জিনিসটা হস্তক্ষেপ হিসেবে নেবেন না। যেহেতু আমার ও পাইলট ভাইয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড ক্রিকেট। এই সংক্রান্ত কোনো ব্যাপার হলে, যেহেতু আমরা এখানে ইনভলভ আছি, পরামর্শ নেওয়া হতে পারে। আমাদেরও ইনপুট দেওয়া দরকার হলে দিতে পারি। এটা কারও কাজে হস্তক্ষেপ করা না। এর আগে যখন নির্বাচক ছিলাম তখনও এসব করেছি। আমার কোনো আইডিয়া থাকলে শেয়ার করা, পাইলট ভাইয়ের আইডিয়া থাকলে শেয়ার করবে। এটা হস্তক্ষেপ করা না।’ কিন্তু আশরাফুলের এই প্রত্যাবর্তনের পরই ক্রিকেট মহল জমে উঠেছে নতুন আলোচনায়। জাতীয় দলের পেসার রুবেল হোসেন নিজের ফেসবুক পেজে রহস্যময় একটি পোস্ট দিয়ে যেন ইঙ্গিতপূর্ণ খোঁচা দিয়েছেন বিসিবিকে। রুবেল লিখেছেন, ‘দায়মুক্ত হলো ক্রিকেট বোর্ড। বাংলাদেশ ব্যাটিং কোচ।’ সংক্ষিপ্ত এই মন্তব্যের পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। কেউ মনে করছেন, এটি আশরাফুলের নিয়োগ নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য; আবার কেউ দেখছেন, রুবেলের কথায় লুকিয়ে আছে গভীর ইঙ্গিত। এরপরই রুবেল আরেকটি পোস্ট দেন, যেখানে আশরাফুলের প্রতি ইঙ্গিত আরও স্পষ্ট। তিনি লিখেছেন, ‘যে মাঠ একসময় বিশ্বাস হারিয়েছে, সেই মাঠেই আবার শিক্ষা দিতে আসা, জীবনটা আসলেই সিনেমা। সময় সত্যিই অদ্ভুত! যাদের একসময় উদাহরণ হিসেবে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তারা উদাহরণ দিতে এসেছে। শুনুন, নামের পাশে কোচ লেখা মানে দায়িত্ব, গর্ব না।’ এদিকে, আশরাফুলকে যুক্ত করার পর জাতীয় দলের কোচিং প্যানেলে সালাহউদ্দিনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সালাহউদ্দিন ভাই সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবেই থাকছেন। কারও জায়গা কেড়ে নেয়া হয়নি। আশরাফুলকে নতুন সদস্য হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করবে তার ভবিষ্যৎ।