ক্রিকেটের বৈশ্বিক আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপ ছিল প্রায় ২৭ বছরের। ১৯৯৮ সালের পর আইসিসি ইভেন্টে কোনও শিরোপার স্বাদ পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। তার ওপর সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনাল হলেই হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণায় পুড়তো। যে কারণে চোকার্স তকমা গায়ে লেগে গিয়েছিল প্রোটিয়াদের। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া হওয়ায় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও তেমন শঙ্কা জেগেছিল। কিন্তু না এবার আর কোনও ভুল হয়নি। ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ২৭ বছরের শিরোপা খরা ঘুচিয়েছে তেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়ারা সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে ঘরে তুলেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ২৮২ রানের লক্ষ্যে গতকালকেই মঞ্চ প্রস্তুত করে ফেলেছিল প্রোটিয়ারা। এইডেন মারক্রাম সেঞ্চুরি তুলে ১০২ রান নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। মারক্রাম দলের ২৭৬ রানে পঞ্চম উইকেট হিসেবে ফিরলেও ততক্ষণে জয়ের একেবারে কাছে প্রোটিয়া দল। জয়ের মঞ্চ গড়ে দেওয়া মারক্রাম ১৪ চারে ১৩৬ রানে সাজঘরে ফেরেন। বাকি পথটা টেনে নেন ডেভিড বেডিংহ্যাম (২১*) ও কাইল ভেরেইন (৪*)। ফলে এবারের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে তারা সেই আক্ষেপ ঘুচালো। আর এটা সফল হয়েছে এইডেন মার্করাম এর কারনে। ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে ডানহাতি এই ব্যাটার টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন। যা তাকে যুক্ত করেছে ইতিহাসের পাতায়। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কোনো ব্যাটার হিসেবে তিনি যেকোনো আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে সেঞ্চুরি করলেন মার্করাম। যদিও এই তালিকায় আছেন ১৪ জন। তিন ফরম্যাটের সর্বোচ্চ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার ফাইনালে তারা ১৫টি সেঞ্চুরি করেছেন। এর আগে যেকোনো আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ছিল ৬১। হ্যান্সি ক্রনিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৯৯৮ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেই রান করেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টটি ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম আসর। এরপর আর কোনো আইসিসি ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। উল্টো যেকোনো বৈশ্বিক আসরের সেরা চারের লড়াই থেকে বারবার ছিটকে পড়ার দরুন তাদের পাশে ‘চোকার্স’ তকমা লেগে গেছে! অজিদের বিপক্ষে প্রোটিয়াদের শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখানো মার্করামের সেঞ্চুরিতে বেশ কয়েকটি রেকর্ড হয়েছে। ঐতিহাসিক লর্ডসে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সেঞ্চুরি করেছেন। আগের দুটি ম্যাজিক ফিগার ছিল অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ ও ট্রাভিস হেডের। এ ছাড়া একই ভেন্যুতে আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে সেঞ্চুরি করা ব্যাটারদের মধ্যে মার্করাম তৃতীয়। আগের দুই সেঞ্চুরিয়ান দুই ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড ও ভিভিয়ান রিচার্ডস। বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে লর্ডসে টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করা ষষ্ঠ ব্যাটার মার্করাম। এর আগে সেঞ্চুরি করা ক্রিকেটাররা হচ্ছেন গর্ডন গ্রিনিজ (২১৪, ১৯৮৪), রয় ফ্রেডরিকস (১৩৮, ১৯৭৬), মাইকেল ক্লার্ক (১৩৬, ২০০৯), অজিত আগারকার (১০৯*, ২০০২) ও স্যার ডন ব্র্যাডম্যান (১০২*, ১৯৩৮)। এ ছাড়া টেস্টে ওপেনারদের মধ্যে চতুর্থ ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি করা ব্যাটারদের তালিকায়ও নাম লেখালেন মার্করাম। চতুর্থ ইনিংসে ৪টি করে সেঞ্চুরি আছে সুনীল গাভাস্কার ও গ্রায়েম স্মিথের। আর মার্করামসহ ৩টি করে সেঞ্চুরি করেন হার্বার্ট সাটক্লিফ, গফ্রি বয়কট, গর্ডন গ্রিনিজ ও গ্রাহাম গুচ। লর্ডসে টেস্টের প্রথম ইনিংসে ডাক (শূন্য রানে আউট) নিয়ে ফেরার পর দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে ৯ জনের। নতুন করে সেই দলে নাম লেখালেন মার্করাম। এ ছাড়া তিনি পঞ্চম প্রোটিয়া ব্যাটার হিসেবে ইংল্যান্ডের মাটিতে এই কীর্তি গড়লেন। চলমান টেস্টে ১৫৯ বলে ১১ চারে ১০২ রানে অপরাজিত আছেন মার্করাম। শিরোপা জয়ের পাশাপাশি ব্যক্তিগত রানের অঙ্কটা বাড়িয়ে তার সামনে আরও বড় ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হওয়ার হাতছানি দিচ্ছে।